নামুছুও হ্রদ সম্পর্কে আরেকটি রূপকথা আছে । রূপকথায় তা একটি বিশাল সমুদ্র । চাঁদের পরিবর্তনের সঙ্গে জোয়ার ও ভাটা হয় । হ্রদের পানির রঙ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙে পরিবর্তিত হয় । মাঝে মাঝে সবুজ এবং মাঝে মাঝে নীল । স্থানীয় পশুপালকরা বলেন, প্রতি বছর মে আর জুন মাসে হ্রদে উড়ন্ত মরীচিকা দেখা যায় । হ্রদের উপর অনেক মরীচিকাকে ইয়াক গরু এবং ছাগলের মত দেখা যায় । মরীচিকার ছাগলের আকার সাধারণ ছাগলের মতোই এবং মরীচিকার ইয়াক গরুর আকার সাধারণ ইয়াক আকারের চেয়ে তিন গুণ বড় ।
হ্রদের চার দিকে চারটি গোসলের ঝর্না রয়েছে । শুনেছি ঝর্নায় গোসল করলে শরীরের নানা ধরনের রোগ ভালো হয়ে যায় এবং মনের অপরাধ বোধও নির্মূল হয়ে যায় । বন্ধুরা, আপনারা যদি সময় পান তাহলে নামুছুওতে এসে, অবশ্যই ঝর্নায় গোসল করে যাবেন ।
নামুছুও'র সুন্দর দৃশ্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের আকর্ষণ করে । নামুছুও হ্রদে চীনের তাইওয়ান প্রদেশ থেকে আসা এক দম্পতির সঙ্গে আমাদের দেখা হয় । প্রতি বছর তাঁরা গ্রীষ্মকালের অবসর সময় বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়াতে যান এবং চীনের অধিকাংশ পর্যটন স্থান ভ্রমণ করেন । তিব্বতের ভ্রমণ সম্পর্কে স্বামী জেং হোং ছুয়ান বলেন, গত বছর ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ার পর আমরা তিব্বতে আসতে চাই । পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে অনেক তিব্বতের তথ্য জানতে পেরেছি । আমি মনে করি এ স্থানটি খুবই সুন্দর ।
একজন জাপানী পর্যটক আমাদেরকে তাঁর তিব্বতে বেড়ানোর অনুভূতির কথা বর্ণনা করেন । তিনি বলেন, আমার মনে হয়, নামুছুও হ্রদ প্রকৃতির অবদান এক অতি সুন্দর ও আশ্চর্য্যজনক হ্রদ । স্থানীয় অধিবাসীরা তাকে পবিত্র হ্রদ বলে ডাকে । সত্যি এ হ্রদ খুবই রহস্যময় ।
গত বছর ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ এবং লিনজি বিমান বন্দর চালু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের তিব্বত ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে । তিব্বতে আসা পর্যটকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । ২০০৭ সালের প্রথমার্ধে তিব্বতের পর্যটন উন্নয়ন সম্পর্কিত তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পর্যটন ব্যুরোর বাজার উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক চাও শু ইং বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত,তিব্বতের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়েছে । তিব্বতে আসা পর্যটকের সংখ্যা ১৭.১ লাখ পার্সন টাইমসে দাঁড়িয়েছে । যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি । পর্যটন আয় প্রায় ২.৫ বিলিয়ন রেন মিন পি ।
রহস্যময় তিব্বত মালভূমি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের গভীরভাবে আকর্ষণ করছে ।আমাদের বিশ্বাস তিব্বতের পর্যটন ক্ষেত্রের অব্যাহত উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নের পাশাপাশি তিব্বতীরা আরো বেশি পর্যটকদের তিব্বতে আসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেবেন ।
যদি আপনারা সময় ও সুযোগ পান, তাহলে অবশ্যই চীনের তিব্বতে ভ্রমণ করবেন এবং সেখানকার বিশেষ রীতিনীতি ও সুন্দর দৃশ্যগুলো উপভোগ করবেন ।
লাসা থেকে নামুছুও'র দূরত্ব প্রায় ২১০ কিলোমিটার । খুব ভোরে লাসা থেকে নামুছুও রওয়ানা হয়ে গেলে, রাতেই লাসায় ফিরে আসতে পারবেন । যদি আপনারা নিজে গাড়ি চালিয়ে নামুছুও যান ,তাহলে অবশ্যই লাসায় কয়েক দিন থাকার পর, শরীর অবস্থা মালভূমির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পর সেখানে গেলে সুবিধা হবে । কয়েক দিন থাকলেও শারিরীক সমস্যা দেখা দেবে না ।
সেখানে যেতে কত ঘন্টা লাগে । ক. যেতে প্রায় ৫ ঘন্টা লাগবে । যাওয়ার পথে নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য গাড়ির গতি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে । প্রতি ঘন্টায় শুধু ৪০ কিলোমিটারযাওয়া যাবে । মালভূমিতে দ্রুতভাবে গাড়ি চালানো খুবই বিপদজনক সে জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । লাসার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৮০০মিটার । নামুছুও যাওয়ার পথে অতিক্রম করা নালিগেন পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫২৯১ মিটার উচুঁ । তখন কান ও মাথায় সহজভাবেই ব্যথা লাগা স্বাভাবিক । যদি আপনারা তখন নিজে গাড়ি চালিয়ে যান, তাহলে অনেক সাবধানে চালাবেন ।
গ্রীষ্মকাল অথবা জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিব্বত ভ্রমণের জন্য সোনালী সময় । তখন আবহাওয়া ভালো, বেশি ঠাণ্ডা নেই । দিনের গড়পড়তা তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড । মালভুমিতে বৃষ্টি হয় বেশি এবং পাহাড় অঞ্চলের বাতাসও খুব প্রবল। এ কারণে যাওয়ার সময় বেশি কাপড় পড়া এবং ছাতা নেয়া ভালো ।
|