চীন ও ভারতের অনেক স্থল বন্দরের মধ্যে তিব্বতের ইয়াতং জেলায় অবস্থিত নাথুলা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। ২০ শতাব্দীর প্রথম দিকে নাথুলা ছিল চীন ও ভারতের মধ্যে বৃহত্তম স্থল বন্দর। তখন নাথুলা বন্দরে বাণিজ্যের পরিমাণ চীন-ভারতের মোট বাণিজ্যের পরিমাণের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি ছিল। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে দু'দেশের সুষ্ঠু সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হওয়ার পুর্ণাংগের পাশাপাশি দু'দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন পুনরায় চালু সমৃদ্ধ হয়েছে। নাথুলা বন্দরটি ৪৪ বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় খোলা হয়েছে। ২০০৬ সালে নাথুলা বন্দরের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ইউয়ান রেনমিনপি। পূর্বের সামরিক এ নিষিদ্ধ অঞ্চলটি পুনরায় সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক শহরে পরিণত হয়েছে।
(রে ১)
ভারতের একজন ব্যবসায়ী মিলন শের্পা নাথুলা সীমান্তের বাণিজ্যিক বাজারে পণ্যদ্রব্য কিনছিলেন। তিনি চীনা ভাষা বুঝতে পারেন না, সেজন্য তিনি ইলেক্ট্রোনিক ক্যালকুলেটরে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দামাদামি করছিলেন। তিনি সিআরআই'র সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন তিনি কয়েক বন্ধুর সঙ্গে নিতে প্রয়োজনীয় কিছু ভোগ্য পণ্য কেনার জন্য চীনে এসেছেন। তিনি আরো বলেছেন,
(রে ২)
'আমি প্রতি সপ্তাহে প্রায় তিন চার বার এ বাজারে আসি। আমি একদিনে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার রুপি লাভ করতে পারি। এটি সিকিমের একজন সরকারী কর্মকর্তার মাসিক আয়ের প্রায় সমান। আমার সিকিমে আরেকটি দোকান রয়েছে। এ দোকানে প্রধানত পর্যটন সম্পর্কিত পণ্যদ্রব্য বিক্রী হয়। ভারতের অনেক মানুষ চীনের পণ্যদ্রব্য পছন্দ করে। কারণ চীনের পণ্যদ্রব্যের দাম কম ও গুণগতমান ভাল। যদি চীন এখানে রেলওয়ে নির্মাণ করে, তাহলে পণ্যদ্রব্যের দাম আরো কম হবে।'
তিনি আরো বলেছেন, নাথুলা বন্দরের ভবিষ্যতে উন্নয়ন আরো সুষ্ঠু হবে। পাহাড়ে উঠা পছন্দ করা প্রচুর পর্যটক সিকিম থেকে নাথুলা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। কারণ, গ্রীষ্মকালে যদি আপনারা পাহাড় শৃংগে ওঠেন হাতলে দক্ষিণ দিকের ঘন মেঘের সাগর দেখতে পাবেন। এ দৃশ্য অনেক সুন্দর। সেজন্য অনেকবেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।
ভারতের আরেকজন ব্যবসায়ী দুর্গা ডি.মুন্দ্রা সিআইআর'র সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি বহু বছর ধরে চীন-ভারত সীমান্তে ব্যবসা করেন। ১৯৬২ সাল থেকে তাঁর ইয়াতং ও পালি জেলায় দোকান রয়েছে। তখন তিনি ছোট ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বাবা ও দু'জন বড় ভাইও ব্যবসা করেন। চীন ও ভারতের ঐতিহাসিক সমস্যার কারণে দু'দেশের সীমান্ত বন্দর কয়েক দশক বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন দু'দেশের সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। তাঁরা পুনরায় নাথুলা বন্দরে ব্যবসা করতে এসেছেন।
বিভিন্ন কারণের জন্য নাথুলা বন্দরে কিছু বাণিজ্যিক পণ্যদ্রব্য এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এটি অস্থায়ী। দু'দেশের সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি নাথুলা সীমান্ত বাজারের আকার ভবিষ্যতে আরো বাড়বে ও আরো সুষ্ঠু হবে। সীমান্ত বাণিজ্য দু'দেশের জনগণের জন্য অনুকূল। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে থাকা নাগরিকদের জন্য তা জীবন মুখী সহায়ক। কারণ, সীমান্ত বাণিজ্য শুধু যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করেছে তা নয়, বরং দু'দেশের জনগণের মৈত্রী বাড়িয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুন্দ্রা বলেছেন,
(রে ৩)
'এখানে আসার অনেক চীনা বন্ধু আছে। আমি সবসময় তাঁদের সঙ্গে টেলিফোন যোগাযোগ রক্ষা করি।'
চীনের অভ্যন্তরভাগের একজন ব্যবসায়ী মাদাম হো স্যিউফুর নাথুলা বন্দরের প্রতীক্ষায় রয়েছে। তিনি তাঁর ব্যবসা সম্পর্কে বলেছেন,
(রে ৪)
'এখনো আমি কোনো মুনাফা করতে পারি নি। কিন্তু, আমি বিশ্বাস করি আগামী ও তার পরের বছরে নিশ্চয় লাভ হবে। ভারতের ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে দৈনদ্দিন ভোগ্য পণ্য কেনে। আমি তাদের ভাষা বুঝতে পারি না। আমরা হাতের ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ করি।'
দু'দেশের ব্যবসায়ীদের একই আশা রয়েছে যে, চীন-ভারত সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে। কারণ এটি দু'দেশের জনগণের জন্য অনুকূল।
এখন তিব্বত বিদেশী ব্যবসায়ীদেরকে তিব্বতে পুঁজিবিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে। গত বছর চীনের নেতৃবৃন্দের ভারত সফরকালে চীন-ভারত বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক বছরের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এটি নাথুলা বন্দরের জন্যও সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। নাথুলা হল দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। নাথুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। নাথুলা বন্দরের প্রতি বছরের বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। বর্তমানে চীন ও ভারত সরকার নাথুলা বন্দরের উন্নয়নের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে। নাথুলার পরিবহন ও বাজার নির্মাণ ক্ষেত্রের সমস্যা ইতিবাচকভাবে সমাধান করা হচ্ছে। ইয়াতং জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক উ সিমিং বলেছেন,
(রে ৫)
'চীন ইতিবাচকভাবে সীমান্ত বাণিজ্যের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। এখনো পরিবহন তেমন একটা সুবিধাজনক নয়। সেজন্য আমরা সড়ক নির্মাণ করছি। এরমধ্যে ৭০কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ব্যায়ে নির্মিত চংখাংইয়া সড়কের নির্মাণ অক্টোবরের শেষ দিকে শেষ হবে।'
তিনি আরো বলেছেন, চীন নাথুলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত অর্থনীতির উন্নয়ন করতে ইচ্ছুক। নাথুলা সীমান্ত বাজারে চীন বাধ্যতামূলকভাব ভারতের ব্যবসায়ীদেরকে চারটি দোকান সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতে নাথুলার সীমান্ত বাজারের আকার আরো বড় ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা আরো বেশি হবে।
এ সম্পর্কে তিব্বত বাণিজ্য বিষয়ক ব্যুরোর উপপরিচালক পাবাছুনচেং বলেছেন, চীন-ভারত সীমান্ত বাণিজ্যের সুপ্ত শক্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন,
(রে ৬)
'নাথুলা একটি পথ যার কোন বিকল্প নেই। চীন ও ভারত নাথুলা বন্দরের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখে।'
তিনি আরো বলেছেন, দক্ষিণ তিব্বত ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত। অনেক আগে থেকেই তিব্বত এসব দেশের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ করে আসছে। যদি চীন ও ভারত ইয়াতং জেলায় রেলওয়ে নির্মাণ করে, তাহলে নাথুলা বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্য আরো সমৃদ্ধ হবে।
|