v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-24 21:25:59    
খাশের মুসলমানদের জীবন

cri

    সিনচিয়াং অঞ্চল হচ্ছে চীনের সংখ্যালঘু জাতি ওইগুর জাতি- অধ্যুষিত অঞ্চল । সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত খাশের জাতীয় রীতিনীতি ও ইসলামী বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সেখানকার ওইগুর জাতির লোকসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ । তাই সবাই বলে যে , খাশে না গেলে সিনচিয়াংয়ে যাওয়া পূর্ণতা পায় না ।

    খাশের ওইগুর জাতির অধিকাংশ লোক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন । এ শহরের সর্বত্রই ইসলাম ধর্মের আমেজ বিরাজ করে । এ শহরে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজার মসজিদ রয়েছে । হেটগাহ মসজিদ হচ্ছে এ শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদ ।

    হেটগাহ মসজিদ খাশ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত । এটি প্রাচীন খাশ শহরের একটি প্রতীক । ১৪৪২ সালে এ মসজিদ নির্মিত হয় । এটি চীনের চারটি প্রধান মসজিদের অন্যতম ।

    আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ের একদিন আমাদের সংবাদদাতা হেটগাহ মসজিদে গিয়েছিলেন । তখন নামাজ পড়ার সময় । লাউডস্পীকারে নামাজ পড়ার আহবান সারা শহরে ধ্বনিত হচ্ছিল । এ আহবানে সাড়া দিয়ে ওইগুর জাতির ছোট টুপি পরা মুসলমানরা শহরের নানা প্রান্ত থেকে এসে হেটগাহ মসজিদে সমবেত হন । তারা নিরবে মসজিদটিতে প্রবেশ করে হাঁটু গেঁড়ে বসে নামাজ পড়েন । মসজিদটিতে তখন ইমামের কোরান-হদিস পড়ার আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো সাড়াশব্দ ছিল না ।

    ওইগুর জাতির তরুণ কামিল হচ্ছেন হেটগাহ মসজিদের একজন কর্মী । তিনি নিজের কাজের জন্যে গর্ব বোধ করেন । তিনি বলেন ,

    সাধারণ সময় গড়ে ১ থেকে ২ হাজার লোক এখানে নামাজ পড়তে আসেন । শুক্রবার জুমার দিনে প্রায় ২০ হাজার লোক এখানে নামাজ পড়েন । মুসলমানদের বড় উত্সব ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহার সময় নামাজ পড়ার জন্যে এখানে ৭০ থেকে ৮০ হাজার মুসলমানের সমাগম হয় । হেটগাহ মসজিদের বাইরে দু পাশের রাস্তা ও মহাচত্বরেও অনেক মুসলমান নামাজ পড়েন ।

    হেটগাহ মসজিদের কুমা মৌলানা হাজি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার পর পর ১১বার এ মসজিদ মেরামতের কাজ করেছে । মেরামতের পর মসজিদটির সামনের মহাচত্বরের আয়তন সম্প্রসারিত হয়েছে এবং নতুন করে স্নানাগার ও ধর্মীয় শাস্ত্র আবৃত্তির কক্ষসহ নানা ধরণের আনুসংগিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে । ফলে স্বাভাবিক ধর্মীয় তত্পরতায় মুসলমানরা আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন ।

    খাশ পশ্চিম চীনে অবস্থিত । বর্তমানে সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন উন্নত নয় । তাই স্থানীয় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে দরিদ্র অবস্থা থেকে স্বচ্ছলতার পথে মুসলমানদের সহায়তা করা ।

    হাজি সাবির কুপানকুমু শিরওয়াজগ পাড়ার একজন সাধারণ অধিবাসী । তার ৫টি ছেলেমেয়ে আছে । তার পারিবারিক অবস্থা ভালো নয় । তাদের পরিবারের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার জন্যে সরকার প্রতিমাসে সাবিরকে ৫০০ ইউয়ান ভাতা দিয়ে থাকে ।

    সাবিরের পাড়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে জীবনযাত্রার সর্বনিম্ন নিশ্চয়তা বিধান ব্যবস্থা চালু হয় । যেসব পরিবারে মাসিক আয় ১৩০ ইউয়ানের নিচে রয়েছে , সেসব পরিবার নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা পায় । তাছাড়া সেসব পরিবারকে চিকিত্সা বীমা ব্যবস্থায়ও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে । প্রতিমাসে তারা ২ থেকে ৪ ইউয়ান জমা দিলে চিকিত্সা নেয়ার সময় সরকার থেকে ২০ থেকে ৫০ শতাংশের চিকিত্সা ভাতা পেতে পারেন ।

    এ পাড়ায় আমাদের সংবাদদাতা একটি দর্জি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও পরিদর্শন করেছেন । সেখানে তিনি দেখতে পেলেন , দশ বারোজন তরুণী কাপড় সেলাই শিখছেন । ৫ বছর আগে এ দর্জি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয় । এ পর্যন্ত ১ হাজার লোক এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । এখানে প্রশিক্ষণ নিতে কারো কোনো ফি দিতে হয় না । ওইগুর জাতির অধিকাংশ মেয়ে এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর চাকরী পেয়েছেন ।

    ১৬ বছর বয়সী ফাতিমা তিন মাস আগে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তিনি একটি দর্জি দোকান খুলতে চান । এখানকার প্রশিক্ষণ তার ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের জন্যে অনেক উপকার করবে । কেন না , এখানে তিনি অনেক কিছু শিখতে পারেন ।

    খাশে অবস্থানের সময় আমাদের সংবাদদাতা ১২ মুখাম বাজানো কয়েকজন লোক শিল্পীর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । মুখাম হচ্ছে সংখ্যালঘু জাতির একরকম সংগীত । এটি সংগীত , নাচ ও গানের সংমিশ্রণে রচিত । ২০০৫ সালে ১২ মুখাম ইউনেস্কোর মানবজাতির মৌখিক ও অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয় । খাশের শাছে জেলা ১২ মুখামের জন্মস্থান । ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর শাছের সুনাম সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে । দেশ বিদেশে পরিবেশনের জন্যে স্থানীয় শিল্পীরা মাঝেমধ্যে আমন্ত্রণ পান ।

    ইউসুফ টোহটি ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে মুখম বাজানোর কৌশল শিখে এসেছেন । বর্তমানে শাছে জেলায় কেবল তিনিই মুখাম বাজানোর সমস্ত ১২টি কৌশল আয়ত্ত করেছেন । গত কয়েক বছরে তিনি সু চৌ ও পেইচিংসহ বেশ কয়েকটি শহরে মুখাম বাজনা পরিবেশন করেন এবং পাকিস্তান , জাপান ও বৃটেনসহ অনেক দেশেও অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন । তিনি বলেন ,

    এখন মুখাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে । বৃটেন , জার্মানী , জাপান ও ফ্রান্সেও মুখাম শুনতে পাওয়া যায় । মুখাম আমাদের শাছে জেলায় সম্পূর্ণ ও নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে ।

    মুখামের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহকারী আমানিসাহানের জন্যে সরকার শাছে জেলায় একটি সাংস্কৃতিক পার্ক নির্মাণ করে । স্থানীয় শিল্পী ও জনসাধারণ প্রতি সপ্তার শুক্রবার , শনিবার ও রোববার এ পার্কে এসে উত্সাহের সংগে মুখাম বাজান এবং উপভোগ করেন ।

    ১২ মুখামের উন্নয়নের জন্যে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে , তাতে লোক শিল্পী মেমেট টুরসুন অপার আনন্দ বোধ করেন । টুরসুন প্রতি সপ্তায় এ পার্কে এসে মুখাম বাজান । তিনি বলেন , মুখামের কৌশল আয়ত্ত করতে পেরে তিনি গৌরব বোধ করেন । তিনি বলেন ,

    চীন সরকার মুখামের উন্নয়নের জন্যে বলিষ্ঠ নিশ্চয়তা বিধান করেছে । এতে আমরা আনন্দিত । আমরা বুড়ো হয়ে গেছি । একদিন না একদিন আমরা এ জগত থেকে ছেড়ে চলে যাবো । তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস , একটি শিল্প হিসেবেআমাদের মুখাম চিরকাল থেকে যাবে এবং প্রসার লাভ করবে ।