চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস ১৫ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো । এ সম্মেলনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আগামী ৫ বছরের প্রশাসনিক নীতি ও প্রধান প্রধান কর্মসূচী ঠিক হয়েছে । তাই এ কংগ্রেস চীনের বিভিন্ন মহল ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে । চীনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চীন শাখার প্রধানরা সি আর আইয়ের সংবাদদাতার সাক্ষাত্কারে কংগ্রেসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হু চিন থাওয়ের রিপোর্ট সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন ।
চীনে থাকা বিদেশিরা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৭তম কংগ্রেসের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রেখেছেন । জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর চীন কার্যালয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুবিনয় নন্দী বলেছেন , প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের রিপোর্টে চীনের অর্জিত অগ্রগতির মূল্যায়ন খুব প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন :
চীনে আমরা যে পরিস্থিতি দেখেছি , যদি খুব সংক্ষেপে বলি আমি বলবো : চীন অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতি ও সমাজের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে । যদিও চীনের লোকসংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন তারপরও ২০ বছর ধরে চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা বজায় রয়েছে । চীন ৩০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন করেছে । যা বিশ্বের ইতিহাসে একটি অলৌকিক ঘটনা ।
চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও তাঁর রিপোর্টে উন্নয়ন ক্ষেত্রে চীনের সেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তা উপেক্ষা করেন নি । যেমন , পুঁজি বিনিয়োগ ও রপ্তানীর ওপর অধিক নির্ভরতা , ক্রমাগত আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধি , শহর ও গ্রাম এবং বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে অসমতা ইত্যাদি। তিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার আরো গভীর করার কথাও বলেছেন । এ সম্পর্কে মার্কিন প্যাসিফিক লুথেরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর , চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিডনি রিটেনবার্গ বলেন , এ থেকে বোঝা যায় , চীনের উন্নয়ন পরিস্থিতির ওপর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্পষ্ট ও গভীর বোঝাপড়া আছে । তিনি বলেন :
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা এতোসব সাফল্যের পরও উন্নয়ন পদক্ষেপ থামিয়ে দেননি। বরং তাঁরা নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । ঠিক যেন প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের রিপোর্টের কথার মত , চীন ভবিষ্যত উন্নয়নের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেবে , ন্যয়সংগত সমাজ গড়ে তুলবে । চীনের কমিউনিস্ট পার্টি স্পষ্টভাবে বিভিন্ন সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণ বুঝতে পেরেছে , তাই এর সমাধানেও তারা আশাবাদী ।
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও কমিউনিস্ট পার্টির ১৭তম কংগ্রেসে তাঁর রিপোর্টে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেছেন । ইউ এন ডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুবিনয় নন্দী আরো বলেন , তিনি লক্ষ্য করেছেন যে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের রিপোর্টে জনগণের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । তিনি বলেন :
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী বা ইউ এন ডি পি বরারবই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং চীনের সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সমর্থন করে । আমরা অনুমান করি , ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনের লোকসংখ্যা বছরে ৮০ লাখ করে বাড়তে থাকবে । যা চীনের গণ সেবা এবং সামাজিত নিশ্চয়তা ব্যবস্থার আরো শক্তিশালী করার দাবি রাখবে । প্রেসিডেন্টের রিপোর্টে এসব সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে ।
এ দিকে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক বা এ ডি বির চীন কার্যালয়ের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ডেভিড ডোনাল্ড ডোল চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অর্জন পদ্ধতি পরিবর্তনের ওপর বেশি করে গুরুত্ব দিয়েছেন । তিনি মনে করেন , চীনে এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আছে । তিনি বলেন :
গত ৩০ বছরে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশে বজায় রয়েছে । অনেকেরই প্রশ্ন প্রবৃদ্ধির এই হার কতদিন থাকবে । কারণ চীনের প্রবৃদ্ধি প্রধানত রপ্তানী ও উত্পাদন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল । এর ফলে অতি মাত্রায় পুঁজি বিনিয়োগ ও পরিবেশ দূষণের আশংকা রয়েছে । তাই এর পরিবর্তন জরুরি ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পদ্ধতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ১৭তম কংগ্রেসের রিপোর্টে পরিবেশ সুরক্ষা , দূষণ কমানো ও জ্বালানী সাশ্রয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে , এবং প্রথম বারের মত এ অর্থনীতি ও মানব জাতির সামাজিক উন্নয়নের মত বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । চীনে ফরাসী দূতাবাসের প্রেস কাউন্সিলর অলিভিয়ার গুয়নভার্চ এ বিষয়ের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রেখেছেন । তিনি বলেন , ফ্রান্সে পরমাণু শক্তি থেকে বিদ্যুত্ উদপাদনের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি । তাই ফ্রান্স ও চীন পরিস্কার জ্বালানী ক্ষেত্রে আরো বেশি সহযোগিতা করতে পারবে । তিনি বলেন :
জ্বলানী সাশ্রয় ও পরিবেশ সুরক্ষা হল প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের রিপোর্টের একটি গুরতুপূর্ণ বিষয় । এ থেকে বোঝা যায় , চীন জানে যে , দূষণ হল দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । পরিস্কার জ্বালানী ক্ষেত্রে ফ্রান্স ও চীন প্রধানত পরমাণু শক্তি খাতে সহযোগিতা করছে । দু'দেশ অব্যাহতভাবে এ সহযোগিতা চালিয়ে যাবে ।
|