v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-24 20:35:54    
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্যাম্সার সংক্রান্ত সম্মেলন

cri
    সম্প্রতি চীনের ছেং তু শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্যাম্সার সংক্রান্ত সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে প্রফেসর সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। সম্মেলন শেষে চীন ত্যাগ করার আগে আমাদের প্রতিনিধি ইয়াং ওয়েই মিং পেইচিঙে তার একটি সাক্ষাত্কার নেন। চীন আন্তর্জাতিক বেতারে প্রচারিত সেই সাক্ষাত্কারের পুর্ণ বিবরন নীচে দেওয়া হলো।

    প্রশ্ন: অধ্যাপক আকরাম, চীনে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনার এবারের চীন সফরের উদ্দেশ্য কি?

    উত্তর : আমি এবার চীনে এশিয়া প্যাসিফিক অনকোলোজি কনফারেন্সে এসেছি। এটা ছেং তুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২০ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত। এখানে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের ক্যান্সার বিশেযজ্ঞরা অংশ নিয়েছেন। কিভাবে ক্যান্সার চিকিত্সার মান এই অঞ্ঝলে বাড়ানো যায় এবং কিভাবে আমাদের রোগীদেরকে একই ধরনের মানসম্মত উন্নত সেবা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কিছু নলেজ শেয়ারও আমরা কনফারেন্সে করেছি।

    প্রশ্ন: এবারের কনফারেন্সে কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্জিত হয়েছে।

    উত্তর: হ্যাঁ, আমি মনে করি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এটাই বোধহয় প্রথম এ ধরণের কনফারেন্স। এ দিক থেকে যদি আমরা বিবেচনা করি এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে। মূলত সব কনফারেন্সে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, গবেষণা উপস্থাপন করি, কিন্তু এবারের বিশেষত্ব ছিল একটিই - আমরা যে কাজগুলো প্রতিদিন করছি সেগুলো আমরা কিভাবে করছি, রোগীদের যে চিকিত্সা করছি সেটা কি ঐকমত্যের ধারণার ভিত্তিতে মানসম্মতভাবে করছি নাকি একেক জন একেকভাবে করছি ; এবার আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি এবং এটা অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।

    প্রশ্ন: এই কনফারেন্সে আপনি কি মতামত প্রকাশ করেছেন ?

    উত্তর: আমি যেটা আগেও বলেছি, দেখা যাচ্ছে যে আর্থিক সীমাবদ্ধতাসহ নানা দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য যেসব গবেষণালব্ধ ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই পাশ্চাত্য দেশগুলোতে তৈরি হচ্ছে এবং এগুলোর মূল্যমানও অনেক বেশি। আমার যেটা বক্তব্য ছিল সেটা হচ্ছে এই ওষুধগুলো যেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে এশিয়া অঞ্চলে চীন বা অন্য কোনো বড় এই কারখানাগুলো প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং সেই অঞ্চল থেকে আমাদের মতো দেশগুলোতে সরবরাহ করা যায়। তাহলে বর্তমানে যে ওষুধের দাম অনেক বেশি পড়ছে সেগুলোর দাম কমে আসবে এবং এতে করে আমাদের অঞ্চলের রোগীরা উন্নতমানের চিকিত্সা সহজে পাবে বলে আমি মনে করি। তারা আমাদেরকে বলেছেন যে ঠিক আছে আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করবো। যেমন আপনারা জানেন বোধহয় এইচআইভি এইডসের রোগীদের চিকিত্সাসেবার ক্ষেত্রে এরকম একটা নিয়ম মানা হয়েছে বা চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি আশা করি যে এই অঞ্চলের সরকারগুলো যদি একটু উদ্যোগী হয় তাহলে ক্যান্সার রোগীর চিকিত্সা ক্ষেত্রে ওষুধপত্র কম মূল্যে পাওয়া যাবে।

    প্রশ্ন: আপনার মতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ কি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অভিন্ন অবস্থার মুখোমুখি ?

    উত্তর: এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যদিও ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা আছে, কিন্তু তারপরও মূল সমস্যাগুলো কাছাকাছি। আমাদের এই অঞ্চলে দেখা যায় যে দেশ থেকে দেশের পার্থক্য থাকলেও, সব দেশ মিলিয়ে দেখলে স্বাস্থ্য সমস্যা মোটামুটি কাছাকাছি। যদি সাধারণভাবে বলি, আমরা দেখবো যে মার্তৃমৃত্যু হার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ অঞ্চলে বেশি, সংক্রামক রোগের সংখ্যাও বেশি, শিক্ষার হারও এই অঞ্চলে মূলত কম - সমস্যাগুলো কিন্তু কাছাকাছি। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে যে তামাকের ব্যবহার যেটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত, ক্যান্সারের জন্য এক তৃতীয়াংশ দায়ী করা হয় তামাককে, সে ক্ষেত্রেও কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে চীন , ভারত এরপরে বাংলাদেশ তামাক উত্পাদনে বিশাল ভূমিকা পালন করছে। এসব দেশ যদি এগিয়ে আসে তাহলে ক্যান্সার প্রতিরোধ অনেক সহজ হবে বলে আমি মনে করি।

    প্রশ্ন: আপনি তো এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আপনার কি কোনো প্রস্তাব আছে ?

    উত্তর: ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য প্রথমত আমাদের কিছু অভ্যাস বদলাতে হবে। আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে দেখবো ক্যান্সার ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় নিরাময় নয় প্রতিরোধ। প্রতিরোধ করার জন্য সবার আগে আমরা ধুমপান বা তামাক বর্জন করতে পারি। সবাই মিলে আমরা যদি এ কাজটা করি তাহলে জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ এই ভয়াবহ মরণব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারে এবং এটা খুব সহজেই সম্ভব। আর বাকি যেমন মেয়েদের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সারের সংখ্যা অনেক বেশি, ছেলেদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার যেটা তামাকজনিত কারণেই হয়। মেয়েদের ক্যান্সারও প্রতিরোধযোগ্য। তারা যদি সেভাবে জেনিটাল হাইজিন মেইনটেন করে তাহলে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এশিয়ার দেশগুলোতেই কিন্তু এই সংখ্যাটা বেশি। জরায়ুর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মারা যায়। সুতরাং আসুন, চেষ্টা করি, স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হই, ধূমপান থেকে নিজেদের মুক্ত রাখি, পরিমিত চর্বি খাই, হাঁটা চলার অভ্যাস করি এবং বেশি করে ফলমূল খাই। এতে আমরা সুস্থ ও সবল থাকবো এবং ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে রক্ষা পাব।

    প্রশ্ন: এবারই কি আপনার প্রথম চীন সফর ?

    উত্তর: হ্যাঁ, এবারই প্রথম আমি চীন সফরে এসেছি, এর আগে কখনো আসিনি।

    প্রশ্ন: চীন সম্পর্কে আপনার ধারণা কি ?

    উত্তর: আমি আসলে চীনের ব্যাপারে সবসময় আগ্রহী ছিলাম। বিরাট একটি প্রতিবেশি দেশ এবং বাংলাদেশের প্রতি অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন একটি দেশ। এরকম একটি দেশে আসতে পারা ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। এতে আমার অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ হলো। দীর্ঘ দিন ধরে চীনের ইতিহাস থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে আমি উপলব্ধি করেছি যে জ্ঞান অর্জনের জন্যেই এই দেশটি সফর করা অতীব জরুরি। আমি সে সুযোগ প্রথমবারের মতো পেয়েছি, সে জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। চীনে এসে বিশেষ করে যখন ছেং তু দেখলাম পান্ডা দেখলাম, তাছাড়া মহাপ্রাচীরের কথা যদি বিবেচনা করা যায় - চীনে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। এই অল্প সময়ে এতকিছু দেখা সম্ভব নয়। চীনের এই বিস্ময়কর আধুনিক প্রযুক্তির সাথে এগিয়ে চলা এটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। সত্যিই চীন চমত্কারভাবে এগুচ্ছে। আমি আশা করি চীন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দিকে আরো বেশি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে।

    প্রশ্ন: চিকিত্সা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে কি কি বিষয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক হতে পারে ?

    উত্তর: চিকিত্সা ক্ষেত্রসহযোগিতা হতে পারে বিশেষ করে টেকনলোজি ট্রান্সফারে। চীন যে আধুনিক জ্ঞান অর্জন করেছে, যেমন হংকং এক ধরণের আধুনিক, মূল চীন আরেক ধরণের আধুনিক। এ থেকে আমরা যেটা বুঝতে পারি আমাদের সাথে যদি চীনের একটা যোগাযোগ হয় এবং টেকনলোজি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে আমাদের লোকজন চীনে এসে ট্রেনিং নিয়ে কোনো বিশেষ প্রযুক্তি শিখে গেল এবং চীনের লোকজন আমাদের দেশে বিশেষ কাজে প্রশিক্ষণ নিল, এভাবে পরস্পরের মধ্যে যদি যোগাযোগটা স্থাপন করতে পারি আমার মনে হয় চীন এবং বাংলাদেশ চিকিত্সা ক্ষেত্রে খুব সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে পারবে। সুতরাং আমাদের প্রথম কাজ হলো টেকনলোজি ট্রান্সফার করা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত শুরু করা। এক্ষেত্রে আমাদের চিকিত্সকরা চীনে আসবেন, চীনের চিকিত্সকরা আমাদের ওখানে যাবেন। এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের লব্ধ জ্ঞান পরস্পরের সাথে আমরা শেয়ার করতে পারব এবং কমন সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব। সংক্রামক ব্যাধি এবং ক্যান্সার দুদেশের কমন সমস্যা। ক্যান্সার নিয়ে চীনে অনেক কাজ হচ্ছে। ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাও চীনে অনেক বেশি। পাশাপাশি চীন বিভিন্ন ধরণের ট্রাডিশনাল মেডিসিনের চর্চা করে থাকে। এর মধ্যে যেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে সেগুলো আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য কাজে লাগতে পারে। সুতরাং আমাদের অনেক কিছু করার আছে।

    প্রশ্ন: আপনি তো চীনের একটি প্রতীক দেখেছেন - বড় পান্ডা। দেখতে কেমন ?

    উত্তর: পান্ডা আসলে চমত্কার সুন্দর একটি প্রাণী। শান্তশিষ্ট, মায়াবী চোখ - আমার পছন্দের একটা প্রাণী। আমি দীর্ঘ দিন ধরে প্রাণীটা দেখার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, এবার আমার সে সৌভাগ্য হয়েছে।

    প্রশ্ন: এবার মহাপ্রাচীরে যাবেন তো ?

    উত্তর: আগামীকাল আমার একটু মহাপ্রাচীরে যাবার ইচ্ছা আছে। আমি বেইজিং আসছি মূলত মহাপ্রাচীর দেখার জন্য। কারণ এটি সপ্তম আশ্চর্যের একটি। আপনারা জানেন যে গতবারের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকা থেকে মিশরের পিরামিড বাদ পড়লেও চীনের মহাপ্রাচীর এখনো রয়ে গেছে। সুতরাং এই বিস্ময়কর জিনিসটা না দেখলে পৃথিবীর অনেক কিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা হবে। আশা করি কালকে আমার সেই সৌভাগ্য হবে।

    - আশা করি আপনার ভ্রমণ চমত্কার হবে এবং চীনে আপনার সময় উপভোগ করতে পারবেন।

    - - ধন্যবাদ আপনাকে, অসংখ্য ধন্যবাদ

    - - আপনাকেও ধন্যবাদ।