ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২২ অক্টোবর ঘোষণা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাক্রো সফট কোম্পানি ২০০৪ সালে তাদের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রনের অভিযোগে যে রুটিং দিয়েছিল তা পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে রাজি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মাইক্রো সফট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ন'বছর ব্যাপী বিরোধ আপাতত শেষ হল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়ক কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নীলিয়ে ক্রোয়েস স্মিট ২২ অক্টোবর এক প্রেস ব্রিফিংএ বলেছেন, মাইক্রো সফট কোম্পানি অবশেষে যে বিকল্প বেছে নিয়েছে তিনি তার স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিবিড়ভাবে মাইক্র সফট কোম্পানির কার্যকলাপের দিকে দৃষ্টি রাখবে। তিনি বলেন, মাইক্র সফট কোম্পানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে রাজি হয়েছে। মাইক্রো সফটের উয়িন্ডোজ সার্ভার অপারেটিং সিষ্টেমের সঙ্গে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বি কোম্পানির পন্য সংযুক্ত করা যায় সে ব্যবস্থা তারা করবে। মাইক্রো সফট কোম্পানি যথাযথভাবে এবং কোন বৈষম্য না রেখে প্রতিদ্বন্দ্বি সার্ভার কোম্পানিগুলোর কাছে সর্ম্পূণ ও নিভূর্ল প্রযুক্তিগত তথ্য যুগিয়ে যাবে যা এর আগে করতে অস্বীকার জানিয়ে এসেছে।।
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান মাইক্রো ইলেকট্রিনিক কোম্পানির অভিযোগ পেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মাইক্রো সফটের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মাইক্রো সফটকে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বি কোম্পানির সঙ্গে প্রযুক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রনের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে রুলিং দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে, কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাইক্রো সফট কোম্পানি তাদের একচেটিয়াত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিদের কাছে সার্ভার সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত তথ্য যোগাতে অস্বীকার জানিয়েছিল। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিদের তৈরী সফট ওয়ের মাইক্রো সফটের উইন্ডোজ আপারেটিং সিষ্টেমের সঙ্গে খাপ খায় না । এতে সফটওয়ার বাজারের প্রতিযোগিতা হুমকির মুখে পড়ে।
২০০৪ সালের জুন মাসে মাইক্রো সফট কোম্পানি লুক্সেমবার্গে ইউরোপের প্রথম পর্যায়ের আদালতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল। কিন্তু আদালত ১৭ সেপ্টেম্বর মাইক্রো সফট কোম্পানির আপিল আবেদন নাকচ করে দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, দু মাস ছ'দিনের মধ্যে মাইক্র সফট ইইরোপীয় আদালতে আপিল করতে পারে। কিন্তু তারা এখন ২০০৪ সালে তাদের ওপর ইইরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত এন্টি ট্রাস্ট রুলিং মেনে চলতে রাজি হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে যে, ইউরোপীয় আদালতের কাছে মাইক্র সফটওয়ের কোম্পানির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভবনা নেই।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাইক্রো সফটের ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নতি স্বীকার করার গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে। প্রথমত: ভবিষ্যতে ইইরোপীয় ইউনিয়ন মাইক্রো সফটের ওপর কি ধরনের বাধ্যবাধিকতা মেনে চলতে বসবে তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আলোচ্য বিষয়। হয়তো তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উত্পাদনে এর কিছু না কিছু প্রভাব দেখা পড়বে।
দ্বিতীয়ত: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একচেটিয়াত্বের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। এবার মাইক্রো সফট পরাজয় স্বীকার করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি অন্যান্য কোম্পানির ওপর শাস্তি আরোপ আরো জোরদার করবে? এটাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভেবে দেখার বিষয়।
তৃতীয়ত: ইউরোপীয় বাজারে মাইক্রো সফটের এ পরাজণে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো সম্ভবত: ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদাহরণ সামনে রেখে মাইক্রো সফটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। অন্য দিকে ইউরোপেও মাইক্রো সফটের দু:স্বপ্ন পুরোপুরি শেষ হয়নি।
|