পেইচিংয়ে চলমান চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । সম্প্রতিদক্ষিণ কোরিয়া , ভারত , পোল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সি আর আইর সাংবাদিকরা সে সব দেশের পন্ডিত , অর্থনীতিবিদ এবং সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তারা মনে করেন যে , চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস শুধু চীনের বর্তমানপরিস্থিতি এবং পরবর্তীকালের উন্নয়নেরসঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং বিশ্বের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবও বিস্তার করবে ।
চীনের প্রতিবেশী দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া চীনের রাজনৈতিক ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণালয়ের রাজনীতি বিদ্যা ডক্টরেডহিউং কিউ কিম বলেছেন , ২০০৪ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার । আমি মনে করি , এই ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে । তাই দক্ষিণ কোরীয় জনগণ ও সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা চীনের রাজনৈতিক গতিপ্রবাহের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে ।
হিউং কিউ কিম আরও বলেন , সাধারণ সম্পাদক হু চিনথাও তাঁর রিপোর্টে যে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব দিয়েছেন তার মাধ্যমে চীনকে আরও ভাল করে জানা যাবে এবং এর ভিত্তিতে পরবর্তীকালে দুদেশের সম্পর্কের বিকাশ নিয়ে গবেষণা করা যাবে বলে দক্ষিণ কোরিয়া আশা করে ।
শ্রীকান্ত কন্দপল্লি নয়াদিল্লীর জওহর লাল নেহরু ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণালয়ের পূর্ব এশিয়া গবেষনা কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি উল্লেখ করেন যে , চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ করে অগ্রণী শ্রেণীর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । তাদের মধ্যে অনেকে মনোযোগের সঙ্গে ১৭তম জাতীয় কংগ্রেসের রিপোর্ট বোঝার চেষ্টা করছেন । তিনি বলেন , হু চিনথাওয়ের রিপোর্টে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ধারণা , সুষম সমাজ ও সুষম বিশ্ব এবং পার্টির ভেতরকার গণতন্ত্রসহ তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । আমি লক্ষ্য করেছি, হু চিনথাও তাঁর রিপোর্টে পার্টির ভেতরকার গণতন্ত্রসহকমপক্ষে ৬০বার গণতন্ত্র শব্দটি উল্লেখ করেছেন । তিনি দুর্নীতি দমন এবং চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা সহ নানা বিষয়েও কথা বলেছেন ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনির্ভাসিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গ্রেগ এ ব্রাজিন্সকি বলেন , যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবিনিয়োগকারীরা চীনের ব্যাপারে অত্যন্ত মনোযোগ দিচ্ছেন । তারা জানতে চান, স্টক মার্কেট সম্পর্কে চীন নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে কিনা । অন্য দিকে চীনের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হবে কিনা তার ওপর রাজনীতিবিদরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন ।
চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস চীন বিষয়ক বিদেশী বিশেষজ্ঞদেরও যথারীতি আকৃষ্ট করেছে । পোল্যান্ড-চীন বাণিজ্য সমিতির মহা ব্যবস্থাপক, সাংহাইয়ে পোল্যান্ডের সাবেক কন্সুলার সিলওয়েস্টার জাফারজ ২০ বছর ধরে চীন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। চীনা পার্টির১৭তম জাতীয় কংগ্রেসে কি কি নীতি বা সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তিনি তার ওপর নজর রাখছেন । তিনি বলেন , পর্যবেক্ষকরা এবং সাধারণ পোলিসজনগণ পেইচিংয়ের ব্যাপারে চোখ কান খোলা রেখেছে । কারণ অদূর ভবিষ্যতে পেইচিংয়ে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে এবং চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে । আমরা আন্তরিকভাবে চীনা পার্টি এবং পার্টির নেতৃবৃন্দ ও সাত কোটি সদস্যের সাফল্য কামনা করি ।
ফ্রান্সের " ইউরোপ টাইমস" পত্রিকা ইউরোপের বৃহত্তম চীনা ভাষার একটি পত্রিকা। পত্রিকাটি অভূতপূর্বভাবে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির এবারের জাতীয় কংগ্রেস সম্পর্কে প্রচার করেছে । সি আর আইকে দেয়া একটি সাক্ষাত্কারে পত্রিকাটির প্রধান বলেন, চীনা পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস শুধু চীনের রাজনৈতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়, এই কংগ্রেস চীনের পরবর্তীকালের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ । তাই প্রবাসী চীনা এবং বিদেশের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমসহ প্রবাসী চীনাদের সংবাদমাধ্যম এই কংগ্রেসের ওপর খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ প্রবাসী চীনাদের জীবন ও কাজকর্মের উন্নয়ন তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। চীনা ভাষার পত্রিকা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল চীনা পার্টির এই কংগ্রেস সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের এবং প্রবাসী চীনাদের জানানো এবং তাদের চাহিদা মেটানো । --চুং শাওলি
|