v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-19 19:49:24    
তিব্বতের লুপা জাতির নতুন জীবনযাত্রা

cri

    চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে লুপা জাতি অন্যতম কম লোকসংখ্যার সংখ্যালঘুজাতি । সম্প্রতি সংবাদদাতা তিব্বতের নান ই থানার ছাই চাও গ্রামের গ্রামবাসীদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।

    নান ই থানা তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত । বেশ কিছু কৃষকদের ঘরবাড়ি বিস্তীর্ণ আদিম জঙ্গলে বেষ্টিত । প্রচুর গরু ও ছাগল পাহাড়ের পাদদেশ ও উপত্যকায় চরে বেড়াচ্ছে । এটাই লুপা জাতির অন্যতম অধ্যুষিত অঞ্চল- তিব্বতের লিন চি অঞ্চলের নান ই লুপা জাতি থানা ।

    নান ই থানায় তিনটি গ্রাম আছে । ৪৫৩ জন অধিবাসীর মধ্যে ৩৫৫জনই লুপা জাতির । ১৯৮৫ সালে পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী লুপা জাতির অধিবাসীদের এখনকার স্থানে স্থানান্তর করা হয় । সরকার তাদের জন্য ছাই চাও গ্রাম গড়ে তুলেছে । গ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসী ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও পশুপালন কাজে নিয়োজিত হন । গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি গত শতাব্দির আশির দশকে নির্মিত হয় । এখন সে সব ঘরবাড়ি পুরানো ও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে । কৃষক ও পশুপালকদের বাসস্থানের অবস্থা উন্নত এবং গ্রামের শিল্পের কাঠামো পুনর্গঠন করার জন্য ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার ৪০ লাখেরও বেশি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । ছাই চাও গ্রামের বুনিয়াদি ব্যবস্থা , সড়ক যোগাযোগ এবং জ্বালানী সরবরাহসহ বিবিধ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে । এতে গ্রামের ৩৬টি কৃষক পরিবারের সবাই উপকৃত হয়েছে। এখন তারা সবাই নতুন বাসায় বাস করেন । নান ই থানার কর্মকর্তা তেং ছাং সুং বলেন ,

    গ্রামবাসীদের বাসার আয়তন তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা অনুসারে বিতরণ করা হয়েছে । যে পরিবারের ৮জন সদস্য আছে , সে পরিবারকে রান্না ঘর ছাড়া ১১৭ বর্গ মিটার বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে । যে পরিবারের সদস্যের সংখ্যা ৮ জনেরও কম , সে পরিবারকে ১১২ বর্গ মিটারের বাড়ি দেয়া হয়েছে । গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি কংক্রীট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে । বাড়ির বাইরে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাজানো হয়েছে । বাইরের দিক থেকে দেখলেই লুপা জাতির আচার ব্যবহার ও স্থাপত্যশৈলীর বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । বাড়িতে নানা ধরনের আধুনিক নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য রয়েছে । থাকার জন্য খুব আরামদায়ক ।

 

    ইয়া চিয়া লুপা জাতির একজন সাধারণ মহিলা । তার বয়স ৩৫ বছর । আগে তিনি ও পরিবারের অন্য ৫জন সদস্য সপরিবারে মাত্র ৬০ বর্গ মিটার একটি বাড়িতে থাকতেন । জীবনযাপনের দিক থেকে অনেক অসুবিধা হতো । গত বছর তারা আনন্দের সঙ্গে ১১২ বর্গ মিটারের নতুন বাসায় উঠেছেন । তিনি বলেছেন ,

    এখন তাদের বাসস্থানের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । আগে যখন বৃষ্টি পড়তো , তখন বাড়ির ভিতরও ভিজে যেতো । এখনকার বাড়ি আগের চেয়ে অনেক বড় ও মজবুত হয়েছে । তারা নতুন আসবাবপত্র কিনেছে । তারা নতুন বাসাকে খুব পছন্দ করেন ।

 

    ইয়া চিয়া বলেন , আগে তাদের পারিবারিক উপার্জন বনৌষধি সংগ্রহের উপর নির্ভরশীল ছিল । এখন তারা ১২টি তিব্বতী ষাঁড় পালন করছেন এবং স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবৃত জমিতে শাক-সবজি চাষ করছেন । গত বছর তারা একটি হস্ত-চালিত ট্রাক্টর কিনেছি । শীতকালে যখন কৃষিকর্ম কম , তখন মাল পরিবহনের ব্যবসা করার জন্য হস্ত-চালিত ট্রাক্টরও ব্যবহার করা যায় । এখন প্রতি বছর তারা ৮ হাজার ইউয়ানেরও বেশি আয় করতে পারেন । গ্রামে তাদের আয়কে মধ্যবিত্ত বলে ধরা যায় । ইয়া চিয়ার ৪টি সন্তান আছে । জ্যেষ্ঠ ও মেজো সন্তান মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করছে । তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানের জীবনযাপনে খুব সন্তুষ্ট ।

 

    তিব্বত শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ার আগের চেয়ে লুপা জাতির জীবনযাত্রার মান আনেক উন্নত হয়েছে । দামা ছাই চাও গ্রামের প্রবীণতম গ্রামবাসী । তাঁর বয়স ৬৬ বছর । তিনি এখনকার জীবনযাপনকে খুব পছন্দ করেন । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,

    শান্তিপূর্ণ মুক্তির আগে তারা পেটভরা খেতে পারতেন না । তখন প্রধান খাবার ছিল ভুট্টা । জমিতে ফসলের ফলন একেবারে আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল । দুর্যোগ হলে পরিবারের সবার খুব কষ্টে চলতে হতো । মানুষ ও গবাদি পশু'র খাবারের অভাবও ছিল । ছোট বেলায় ইয়া চিয়া উপযোগী জুতাও পরতে পারতেন না। যখন তারা পার্বত্য এলাকা থেকে এখনকার গ্রামে আসার পর তাদের জীবনধারা অনেক ভাল হয়েছে । বর্তমানে তার দুই ছেলে পশুপালন খামারে কাজ করছে । সরকার তাদের খুব যত্ন নেয় । জীবনযাপনের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য প্রতি বছর সরকার তাদের খাদ্য ও জামা- কাপড় দেয় ।

    লুপা জাতির জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য বিবিধ সমাজ বীমা ব্যবস্থাও পূর্ণাঙ্গ করে তোলা হয়েছে । বর্তমানে ছাই চাও গ্রামের শিশুদের স্কুলে ভর্তি হার এবং কৃষকদের গ্রামীণ চিকিত্সা সহযোগিতা ব্যবস্থার পরিসেবাভোগীর অনুপাতও এক শো শতাংশ হয়েছে । গ্রামবাসীদের জীবনযাপন আরো স্থিতিশীল ও সচ্ছল হয়েছে ।

    গত বছর থেকে স্থানীয় সরকার ব্যাপকভাবে পর্যটন শিল্প বিকশিত করতে শুরু করেছে । নান ই থানায় লুপা জাতির আচার ব্যবহার বিষয়ক পর্যটন উত্সব এবং তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা উত্সব আয়েজন করা হয়েছে । ফলে বেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে লুপা জাতির অনন্য আচার ব্যবহার , খাওয়া দাওয়া , জামা- কাপড় এবং স্থানীয় জ্বালানী সম্পদ তুলে ধরা হয়েছে । স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করা হয়েছে । নান ই থানার একজন কর্মকর্তা তেং ছাং সুং বলেন ,

    গ্রামবাসীদের বাসস্থানের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । লুপা জাতির বেশ কিছু অধিবাসীদের বাড়িতে হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে । গ্রামে যব , গম ও সরিষাসহ ঐতিহ্যবাহী ফসল ছাড়াও কয়েক ধরনের অর্থকরী ফসলেরও চাষ করা হচ্ছে ।

    তেং ছাং সুং বলেন , গ্রামের পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ভবিষ্যতে মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্রও বসানো হবে । তখন লুপা জাতির অধিবাসীরা আরো সুবিধাজনক ও আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারবেন । (লিলি)