v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-17 21:59:32    
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত তিনজন চীনা চিকিত্সক

cri

    আজকের অনুষ্ঠানে চীনের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত তিনজন শ্রেষ্ঠ চীনা চিকিত্সকের কাহিনী শোনাবো আপনাদেরকে । তাদের অসাধারণ কৃতিত্বের জন্যে সম্প্রতি তারা চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন । তারা আগামী মাসে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠেয় এ কংগ্রেসে যোগ দেবেন । 

    সকলের জানা আছে , মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে তোলার মতো রোগগুলোর মধ্যে ভাইরাস জনিত যকৃতের প্রদাহ ও এইডস অন্যতম যা প্রথম দশটি সংক্রামক রোগের সারিতে রয়েছে । দক্ষিণ চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াং চৌ অষ্টম গণ হাসপাতালের পরিচালক থাং সিয়াও পিং ঠিক এ দুটি দুয়ারোগ্য ব্যাধির চিকিত্সাকে নিজের পেশাগত দিক হিসেবে বেছে নিয়েছেন । তিনি ২১ বছর ধরে সংক্রামক রোগ নিবারণ ও চিকিত্সার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন এবং নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি ও বিপদ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন । তিনি বলেন ,

    গত ২১ বছরে সংক্রামক রোগ নিবারণ ও চিকিত্সা করার কাজে আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি । তবে আমি অনেক লাভবানও হয়েছি । বিশেষ করে সংক্রামক রোগের বিস্তারের সময় কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে যখন আমরা রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি , তখন অপার আনন্দ বোধ করি ।

    ২০০৩ সালে কুয়াং চৌ অষ্টম গণ হাসপাতাল এইডসে আক্রান্ত একজন গর্ভবতীকে ভর্তি করল । বিশেষ রোগের কারণে তার প্রসবের সময়কার রক্ত থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিল । এ পরিস্থিতি এড়ানো এবং গর্ভবতী ও তার পেটের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যে চিকিত্সক থাং সিয়অও পিং বিনা দ্বিধায় এইডস এলাকার একটি কেবিনকে অস্থায়ীভাবে একটি মাতৃকেবিনে পরিনত করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং নিজেই সেই গর্ভবতীর প্রসব করানোর কাজে যোগ দিলেন । এইডস রোগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাং সিয়াও পিং ভালো করে জানতেন যে , এ কাজের মধ্যে কতটুকু বিপদ ছিল । অথচ বিপন্ন একটি নতুন জীবনের কথা ভেবে তিনি নিজের আশংকাকে তুচ্ছ করে দিলেন । তখন তিনি শুধু ভাবলেন , কেমন করে সেই গর্ভবতী ও তার শিশুকে বিপদমুক্ত করে তুলবেন । যখন থাং সিয়াও পিং সাফল্যের সঙ্গে সেই গর্ভবতীর প্রসব করালেন , তখন গর্ভবতী , তার আপনজন ও চিকিত্সা কর্মীরা অভিভূত হয়ে কেঁদে ফেললেন ।

    এইডস রোগ বহু মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয । আক্রান্ত এই রোগে রোগীদের মানসিক অবস্থা খুবই দুর্বল । তাদের মানসিক চাপ কমিয়ে আনার জন্যে থাং সিয়াও পিং শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিদিন তাদের কেবিন ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং তাদের সঙ্গে হাত মেলান ও গল্প-গুজব করেন । বড় বড় উত্সবের সময় তিনি সর্বদাই সময় করে এইডস রোগীদের সঙ্গে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করেন । থাং সিয়াং পিংয়ের সহকর্মী সুই মিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন .

    থাং সিয়াও পিং মনে করেন , রোগীদের চিকিত্সার সময় শুধু তাদের ওষুধ দেওয়াটাই যথেষ্ট না । তাদেরকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে , যাতে রোগীরা চিকিত্সকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারেন ।

    চীনের সংক্রামক রোগ নিবারণ ও চিকিত্সা ক্ষেত্রে থাং সিয়াও পিংয়ের মত আরো অনেক চিকিত্সক রয়েছেন । চিকিত্সক লি ইয়ুয়ে শেং ৩৪ বছর ধরে শামুক জ্বর নিবারণ ও চিকিত্সার কাজ করে আসছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , শামুক সাধারণত মাঠের জলাশয়ে বাস করে থাকে । যারা শামুকজ্বর নিবারণ ও চিকিত্সার অগ্রভাগে কাজ করেন , তাদের এক শ'শতাংশ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন । চিকিত্সক লি ইয়ুয়ে শেংও চারবার শামুকজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন । এসব জেনেশুনেও বিশেষ অবস্থায় আরো নির্ভূল তথ্য পাওয়অর জন্য চিকিত্সকদের শামুকজ্বর-কবলিত এলাকায় যেতে হয় । এ কাজ করার প্রথম দু বছরে তিনি ও তার সহকর্মীরা শামুকজ্বরে আক্রান্ত ৪শ'রও বেশি রোগীকে বাঁচিয়ে তুলেছেন । তিনি নিজেও অনুশীলনের মাধ্যমে অনবরত অধ্যয়ণ করে এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে শামুকজ্বর নিবারণ ও চিকিত্সার ক্ষেত্রে একজন সুপরিচিত বিশেষজ্ঞে পরিণত হয়েছেন । তিনি বলেন ,

    এ কাজ সত্যিই একটি দুরূহ কাজ । এ কাজ করতে হলে সবসময় প্রথমে অন্রদের দুঃখের কথা ভাবতে হবে এবং পরে নিজের সুখের কথা ভাবতে হবে ।

    ১৯৯৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় লি ইয়ুয়ে শেং অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে একটি চিকিত্সা গবেষণাগারে অধ্যয়ণের কাজে যোগ দেন । চার বছর ধরে অধ্যয়ণের সময় তিনি নির্বিঘ্নে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন । তিনি অস্ট্রিলিয়ায় কাজ করার সুযোগ ছেড়ে আবার মধ্য চীনের হু নান প্রদেশের শামুকজ্বর নিবারণ ও চিকিত্সা গবেষণাগারে ফিরে আসেন । অনেকে তার এ সিদ্ধান্তে দ্বিমত প্রকাশ করেন । তবে লি ইয়ুয়ে শেং বলেন , শামুকজ্বর-কবলিত এলাকা হচ্ছে আমার বাড়ি । গ্রামবাসীদের দুঃখকষ্ট আমার সহ্য হয় না ।

    উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারিপিন শহরের সিন ফা নগরের রেডক্রস হাসপাতালের পরিচালক চাং শেং চুনও চিকিত্সক লি ইয়ুয়ে শেংয়ের মত তৃণমূল পর্যায় থেকে গ্রামবাসীদের অসুখ-বিসুখ দূর করার জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন । এটি একটি মহকুমা পর্যায়ের হাসপাতাল । চাং শেং চুন নিজের উদ্যোগে শল্য চিকিত্সা , নারী চিকিত্সা ও অস্থি চিকিত্সাও আয়ত্ত করেছেন । তার নিপুণ চিকিত্সা পদ্ধতির জন্যে অনেক রোগী তার কাছে আসেন । তিনি একদিনে সর্চোচ্চ ১৩জন রোগীর অপারেশন করেছেন ।

    ১৯৮৭ সালে চাং শেং চুন সিন ফা রেডক্রস হাসপাতালের পরিচালক হণ । তখন হাসপাতালটিতে ছিল মাত্র দশ বারোটি একতলা ঘর এবং চিকিত্সা সাজসরঞ্চামেরও দারুণ অভাব ছিল । সেসময় হাসপাতালটি লক্ষাটিক ইউয়ান ঋণের ভারে জর্জারিত ছিল । চাং শেং চুন ও তার সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় এক লাখ ইউয়ান ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এবং হাসপাতালটির পুঁজি ১৯ লাখ ২০ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । হাসপাতালটি উন্নত চিকিত্সা সরঞ্চামও কিনেছে । চাং শেং চুন কেমন করে এসব পরিবর্তন এনেছেন । এ প্রসংগে তিনি বলেন ,

    আমরা হিসাব করে প্রতিটি টাকার খরচ করি । পাশাপাশি আমরা আয়ের উত্স খুঁজে বের করার চেষ্টা করি । চিকিত্সা পদ্ধতি এবং রোগীদের সেবার মান উন্নত করে বিভিন্ন রোগীর চাহিদা মেটানোর জন্যে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।