v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-16 21:08:09    
অপেরা গায়িকা জাং লি ফিং

cri
    বর্তমান বিশ্বে জাং লি ফিং হলেন শ্রেষ্ঠ অপেরা গায়িকার মধ্যে একজন। তাঁর চমত্কার পরিবেশনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকরা বিমুগ্ধ । আজকের অনুষ্ঠানে জাং লি ফিং সম্পর্কে কিছু তথ্য শ্রোতা বন্ধুদের জানাবো।

    ২০০৪ সালের মার্চ মাসে জাং লি ফিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত দি মেট্রোপোলিটান অপেরা হাউসে "ম্যাডাম বাটারফ্লাই" অপেরার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। সেখানে তাঁর পরিবেশনা দারুন সফল হয়েছে। নিউ ইয়র্কের দি মেট্রোপোলিটান অপেরা হাউসে পারফর্ম করা যে কোনো অপেরা শিল্পীর স্বপ্ন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অপেরা শিল্পীরাই কেবল এখানে পরিবেশন করার সুযোগ পান। জাং লি ফিংয়ের চমত্কার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব দর্শকের মনে একজন চীনা গায়িকা স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। অপেরা শেষে দর্শকরা দাঁড়িয়ে তাঁর উদ্দেশে ২০ মিনিট ধরে হাততালি দিয়েছেন। যা দি মেট্রোপোলিটান অপেরা হাউসের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।

    ৪০ বছর বয়স্ক জাং লি ফিং মধ্য চীনের হু পেই প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নাচ গান পছন্দ করেন। কিন্তু তখন অপেরার ধারণা তার মনে ছিল না। তার বাবা'র কারণে জাং লি ফিং চীনের পেইচিং অপেরা খুব পছন্দ করে ফেলেন। তিনি বলেছেন:

    "আমার বাবা পেইচিং অপেরা খুব পছন্দ করেন। ছোটবেলায় তিনি আমাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছিলেন পেইচিং অপেরা দেখানোর জন্য। একের পর এক, এমনকি একই অপেরা অনেক বার দেখেছি। তারপরও আমি আবার দেখতে চাই, গাইতে চাই।"

    জাং লি ফিংয়ের শোনা প্রথম অপেরা হলো "দি লেইডি অব দি ক্যামেলিয়াস"। তখন তার বয়স দশ কি বারো। যদিও অপেরার অর্থ বুঝতে পারতেন না, তারপরও অপেরা শুনে মুগ্ধতায় জাং লি ফিংয়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। তখন থেকে অপেরা তাকে গভীরভাবে টানতে থাকে।

    ১৯৮৯ সালে জাং লি ফিং চীনের সেন্ট্রাল কনসার্ভেটরি অব মিউজিকের কন্ঠ ও অপেরা বিভাগে স্নাতক হয়েছেন। ১৯৯০ সালে তিনি কানাডার কনসার্ভেটরি অব ভ্যানকুভারে অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা করেন। ১৯৯২ সালে তিনি অভিনয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষে ভ্যানকুভারে তার অপেরা জীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের দি মেট্রোপোলিটান অপেরা হাউস থেকে জাং লি ফিং "ম্যাডাম বাটারফ্লাই" অপেরায় প্রধান অভিনেত্রী সিও সিও সানের চরিত্রে অভিনয়ের আমন্ত্রণ পান। তিনি এই বিরল সুযোগ পাওয়া প্রথম চীনা শিল্পী। ইতালি'র বিখ্যাত অপেরা লেখক গ্লাকোমো পুচ্চিনি "ম্যাডাম বাটারফ্লাই" লিখেছেন। এই অপেরায় সিও সিও সানের গল্প বলা হয়েছে। জাপানী মেয়ে সিও সিও সান একজন মার্কিন সৈনিকের প্রেমে পড়ে। তাকে বিয়ে করার জন্য সিও সিও সান ধর্মান্তরিত হন। কিন্তু বিয়ের পর তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিয়ে স্বদেশে ফিরে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে। এই খবর শুনে সিও সিও সান আত্মহত্যা করেন। ১৯০৪ সালে অপেরাটি ইতালির মিলানে প্রথম পরিবেশিত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত শিল্পী এই অপেরা পরিবেশন করেছেন। কিন্তু জাং লি ফিংয়ের বৈশিষ্ট আলাদা। তিনি সিও সিও সানের জটিল ভালবাসা প্রকাশ করেন নিজস্ব স্বকীয়তায়, যা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হন, আবেগক্রান্ত হয়ে পড়েন। জাং লি ফিং বলেন:

    "অপেরায় দর্শকরা মুগ্ধ হন শুধু গায়কী নয়, গানের দরদের কারণে ।একজন অপেরা শিল্পী গান গাওয়ার সময় যান্ত্রিকভাবে গাইছেন নাকি দরদ দিয়ে গাইছেন, তা দর্শকরা বুঝতে পারেন।"

    জাং লি ফিং তার সুন্দর কন্ঠ এবং নিপুণ অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। তিনি আবার বিশ্বের আরেকটি শ্রেষ্ঠ অপেরা হাউস-লন্ডনের 'দি রয়্যাল অপেরা হাউস ইন কভেন্ট গার্ডেন'এ অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া একমাত্র চীনা অপেরা শিল্পী। সেখানে তিনি "তুরাঁদ", "ম্যাডাম বাটারফ্লাই" এবং "লুসিয়া দি ল্যামারমুর" অপেরায় অভিনয় করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন অপেরা হাউসে তিনি বিশটিরও বেশি অপেরায় অভিনয় করেছেন। এবং প্রতি বারই দর্শকদের মন জয় করেছেন।

    দেশে দেশে অপেরা পরিবেশন করার জন্য জাং লি ফিং কিন্তু প্রতিবার অনেক পরিশ্রম করেন এবং অনেক সমস্যারও মুখোমুখি হন। কিন্তু তার মতে দর্শকদের জন্য সবচেয়ে ভাল অভিনয় পরিবেশন করাটাই হলো আসল ব্যাপার। তিনি বলেন:

    "সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো প্রতিটি জায়গায় গিয়ে নতুন মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাদের সঙ্গে আগে পরিচয়ই ছিল না। প্রত্যেক পরিচালক ও কনডাক্টারের অপেরা নিয়ে নিজের অনুভুতি ও চাহিদা আছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে মতের মিল হওয়া কঠিন ব্যাপার।"

    প্রতি বছরে সাত থেকে আট মাস জাং লি ফিং বিদেশে থাকেন। রাতে বিমানে উঠে সকালেই অজানা এক দেশে চলে যাওয়া তার জন্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বাইরে যাওয়ার সময় সাত বছরের ছেলেটিই জাং লি ফিংয়ের একমাত্র চিন্তার কারণ। এক ছেলের মা হিসেবে ছেলেকে বেশি সময় না দিতে পারলে তিনি দুঃখ পান। কিন্তু ছেলেটি খুবই ভাল। একবার তার ছেলে তাকে বললো, মা, আপনি বাইরে অনেক কষ্ট করেন, আমার কথা চিন্তা করবেন না, বাবা এবং দাদী আমার সঙ্গে আছেন। এই কথা শুনে জাং লি ফিং খুব মুগ্ধ হন।

    ২০০৬ সালে জাং লি ফিং চীনের সেনট্রাল কনসার্ভেটরি অব মিউজিকের আমন্ত্রণে চীনে ফিরে এসেছেন। পরিবেশনা ছাড়াও তিনি বেশি সময় দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেন। জাং লি ফিং বলেন, পশ্চিমের অপেরার চীনাদেরকে আরো বেশি পরিচয় করানো হলো তার জন্য আনন্দের ব্যাপার।(ইয়াং ওয়েই মিং)