v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-15 21:56:20    
বিখ্যাত পিয়ানো বাদক ইন ছেং জুং

cri
    লি ইয়ুন দি এবং লাং লাং'র তুলনায় ৬৬ বছর বয়স্ক ইন ছেং জুং অনেক সিনিয়ার পিয়ানো বাদক। টিনেজার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় তিনি পশ্চিমা দেশের ক্ল্যাসিক সংগীত চীনের সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তিনি চীনের ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর চেষ্টা চালিয়েছেন এবং সাফল্য পেয়েছেন।

    ১৯৪১ সালে ইন ছেং জুং দক্ষিণ-পূর্ব চীনের সিয়া মেন শহরের কু লাং ইয়ুয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তখন কু লাং ইয়ুয়ে অনেক বিদেশী প্রবাসীরা থাকতেন। ছোটবেলায় রাস্তায় খেলার সময় ইন ছেং জুং চার্চের সংগীত শুনতে থাকতেন। সুযোগ পেলে তিনি অন্যদের পিয়ানো বাজানো শুনতেন। পরে একজন স্থানীয় পিয়ানো শিক্ষকের উত্সাহে ১২ বছর বয়স্ক ইন ছেং জুং শাংহাইয়ে পিয়ানো শেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই সিদ্ধান্তে তার জীবনের পরিবতর্ন হয়েছে। ইন ছেং জুং বলেছেন:

    "কু লাং ইয়ু'র পিয়ানো বাজানোর ধরণ খুব ভাল। কিন্তু ভাল শিক্ষক নেই। পিয়ানো ভালভাবে বাজাতে চাইলে বাইরে শিখতে হবে। তখন যোগাযোগের অবস্থা খুব অনুন্নত ছিল। বাস নেই, জাহাজ নেই, বিমান নেই, রেলগাড়িও নেই। চার দিনের ট্রাকের যাত্রায় আমি রেলগাড়ি দেখেছি। কিন্তুএ্ই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমি শাংহাইয়ে না যাই, তাহলে পিয়ানো বাজানো শুধু আমার একটি শখ হয়ে রইবে।"

    তিনি শাংহাই সঙ্গীত ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়ানো বাজানো শিখেছেন। কয়েক বছরের কঠোর অনুশীলণের পর তিনি নিজের স্থান পেয়েছেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব পিয়ানো প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এতে তিনি খুব উত্সাহিত হন। দুই বছর পর তিনি সোভিয়েত রাশিয়ায় আরো দুই বছর পড়াশোনা করেছেন। লেনিনগ্রাদ কনসার্ভোটরিতে তিনি বিখ্যাত পিয়ানো বাদক তাতিআনা ক্রাভচেনকো'র কাছে শিখেছেন। ১৯৬২ সালে তিনি চাইকোভস্কি আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পান। তিনি বলেছেন:

   "বিংশ শতাব্দীর ৬০এর দশকে শিল্পকলা ক্ষেত্রে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম স্থানে ছিল। তাই সেখানে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে।"

    সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দেশে ফিরে আসার পর তখনকার চীনের চেয়ারম্যান মাও ইন ছেং জুং'এর সঙ্গে দেখা করেন। এবং তাকে চীনের সঙ্গীতের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখার কথা লেন। তখন থেকে তিনি চীনের কিছু বিখ্যাত সঙ্গীত পিয়ানোর মাধ্যমে বাজানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। ১৯৬৯ সালে তিনি "হুয়াং হো" কনসার্ট পরিচালনা করেছেন।

    হুয়াং হো'র মহিমান্বয় সঙ্গীতের সুর ওপর ঠিকভাবে প্রকাশের জন্য ইন ছেং জুং নিজেই হুয়াং হো নদীর তীরে জাহাজ শ্রমিকদের সঙ্গে কিছু দিন কাজ করেছিলেন। অবশেষে তিন দিন তিনি শুধু ঘরে রইলেন মনোযোগ দিয়ে কাজটি শেষ করেছেন। পরিবেশনের আগে তাঁর আঙ্গুল প্রদাহ দেখা দেয়। সময় মতো পরিবেশন করার জন্য তিনি প্রতিদিন আঙ্গুল ওষুধের ভেতরে ডুবিয়ে রাখতেন প্রদাহ কমানোর জন্য। তার পরিবেশন চমত্কার হয়েছে। পরে প্রায় প্রতিটি পরিবেশনায় দর্শকরা তাকে এই সঙ্গীত পরিবেশনের অনুরোধ জানান। ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাপী নাজি-বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ইন ছেং জুং'র "হুয়াং হো"র কনসার্ট পরিবেশিত হয়েছিলো।

    ১৯৮৩ সাল থেকে ইন ছেং জুং নিউ ইয়র্কে প্রবাসী হয়েছেন। প্রথমে তার জীবনে তেমন সুখ ছিল না। পিয়ানো বাজানো হয়তো প্রতিবেশীদের বিরক্ত করবে এই ভয়ে তিনি অনেক বার বাড়ি পরিবর্তন করেছেন। তার বাজানো সঙ্গীত অনেকেই তার বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনতেন। শেষে তার চমত্কার বাজানোর জন্য করতালি দিতেন। তিনি বলেছেন:

    "যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক হলো বিশ্বের সংস্কৃতির একটি অন্যতম কেন্দ্র। অনেক শিল্পী এখানে আসেন। শুধু রাশিয়ার সম্প্রদায়কে দেখা যায় তা নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গীত এখানে এসে জড় হয়। তা আমার জন্য একটি নতুন সুচনা।"

    নিউ ইয়র্কের কার্নেগী হলে ইন ছেং জুং দুই বার একক পিয়ানো কনসার্ট পরিবেশন করেছেন। বিভিন্ন পত্রিকা তাকে "চীনের শ্রেষ্ঠ পিয়ানো বাদক" বলে অভিহিত করেছে। বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত কনসার্টও অনেকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তিনি হলেন সিভিল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব মিউজিকের অধ্যাপক। বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের পিয়ানো শেখান। বিশ্বের বিভিন্ন রকমের পিয়ানো প্রতিযোগিতায় তিনি বিজারক ছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছে।

    ইতিহাস দেখে ইন ছেং জুং কিন্তু নিজের জীবনের কঠোর অংশ এবং অর্জিত সাফল্যের উপর গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেছেন, প্রতিটি লোকের জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো নিজেকে সমর্থনের শক্তি। অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি পিয়ানোর সামনে বসে থাকেন তিনি সব কষ্ট ভুলে যাবেন। তিনি তার ছাত্রছাত্রীদেরও এমন মনোভাব শেখান এবং তাদেরকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার কথা বলেন।

    যে সঙ্গীত আপনারা শুনছেন তা হলো ইন ছেং জুংয়ের তৈরী "শি মিয়েন মাই ফু"। এটি একটি যুদ্ধের ছবির ব্যাখ্যা করছে। (ইয়াং ওয়েই মিং)