v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-15 21:53:36    
চীনের নাট্য শিল্পে নতুন অগ্রগতি

cri
    নাট্যশিল্পে দশর্কের সংখ্যা বাড়ানো এবং নাটকের বাজার সম্প্রসারের জন্য সম্প্রতি চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের নাট্য মহলের ব্যক্তিরা ' নাটক কমিউন 'প্রতিষ্ঠা করেছেন ।

    কিছু দিন আগে পেইচিং মহানগরের কেন্দ্রস্থলের প্রাচ্য থিয়েটারে নাট্য অভিনেতা অভিনেত্রীরা চীনের বিখ্যাত নাট্য পরিচালক মেং চিং হুইর রচিত নাটক 'প্রেমে পড়া গন্ডার' পাঠ ও আবৃত্তি করেছেন । মেন চিং হুই চীনের একজন বিখ্যাত নাট্য পরিচালক । তার রচিত নাটকগুলো ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বলে তাকে পরীক্ষামূলক নাটকের অগ্রনী হিসেবে অভিহিত করা হয় ।

    'প্রেমে পড়া গন্ডার 'নামে নাটকে যুব পশুপালক মা লু ও তার প্রতিবেশিনী মিং মিংয়ের প্রেমের কাহিনী বণর্না করা হয়েছে । মালু মিং মিংকে ভালোবাসে , তবে মিংমিং তাকে ভালোবাসে না , সে অন্য লোককে ভালোবাসে । মা লু ও মিংমিং মূলতঃ দু'জনকেই প্রেমের পাগল বলা যায় । প্রেমের জন্য তারা বেপরোয়াভাবে কোন কাজ করতে দ্বিধা করবে না । অবশেষে মা লু ভালোবাসার জন্য মিং মিংকে অপরহণ করে । এ নাটকে একটি বিষন্ন প্রেমের কাহিনী বণর্নার পাশাপাশি বৈষয়িক সমাজের নানা প্রলোভনের দিককেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে । নাটকটির চরিত্রগুলোর কটুক্তি ও কৌতুক দশর্কদের সাধুবাদ পেয়েছে । ১৯৯৯ সালে নাটকটি প্রথমবার মঞ্চস্থ হয় । এখন পর্যন্ত এ নাটকের এক শ'রও বেশি প্রদর্শন হয়েছে । নেট নাগরিকরা নাটকটির কথাবার্তাগুলোর পাঠ ইন্টারনেটে প্রকাশ করেন এবং নাটকের অভিনয়ের অংশবিশেষ পাঠান , যাতে আরো বেশি দশর্ক এই নাটক উপভোগের সুযোগ পান ।

    বতর্মানে চীনের নাট্য বাজারে পরীক্ষামূলক নাটকের পরিচালক ও নাট্যকারের অবস্থা খুব ভালো বলা যায় না । এক দিকে অনেক দশর্ক এ ধরনের নাটক পছন্দ করেন । অন্য দিকে এ ধরনের নতুন নাটক সমাজের ভিন্ন মতের সম্মুখীন হচ্ছে । কাজেই বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের নাটক থেকে আশানুরুপ মুনাফা পান না । এটাই পেইচিংয়ে নাটক কমিউন প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ । তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো অপেরা অনুরাগীদের নিজের একটি মঞ্চ সরবরাহ করা । পেইচিংয়ের বসন্ত-শরত্ সংস্কৃতি প্রচার কোম্পানীর সহকারী ব্যবস্থাপক ওয়াং রেন বলেছেন , অপেরা কমিউন প্রতিষ্ঠা আরো বেশি মুনাফা পাওয়ার জন্য নয় , চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো আরো বেশি অপেরা অনুরাগী খুঁজে বের করা । তিনি বলেছেন , আমরা আশা করি নাটক কমিউন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আরো বেশি নাটক অনুরাগীর দৃষ্টি আকর্ষিত হবে । ভালো নাটক ও দশর্কের সংখ্যা বেশি হলে নাটকের বাজার আরো প্রসারিত হবে । নাটক কমিউন প্রতিষ্ঠার দিন এক শ'রও বেশি নাট্যানুরাগী ও নাট্যকারগণ এ কমিউনের সদস্য হলেন । তাদের মধ্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অপেরা বিভাগের ছাত্র ও নাটকের অনুরাগী।

    নাট্যকার ফোং ই পিং চীনের কেন্দ্রীয় অপেরা ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক হওয়ার পর নাটক লিখতে শুরু করেন । তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী নাট্য বাজারের মন্দা অবস্থা দেখে মঞ্চ নাটক লেখা বন্ধ করে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক লিখতে শুরু করেন । ফোং ই পিং মনে করেন , নাটক কমিউনের প্রতিষ্ঠা নাটককে জনপ্রিয় করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যানুরাগী ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজের বিজ্ঞতা প্রদর্শনের একটি মঞ্চ যুগিয়েছে । তিনি বলেছেন , আমি মনে করি নাটক কমিউনের প্রতিষ্ঠা নাট্যানুরাগীদের জন্য একটি আনন্দের ব্যাপার । তারা নাটক কমিউনের সদস্য হয়ে নানা কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারবেন । যেমন নাটক পাঠ ও বিখ্যাত নাটকের অংশ বিশেষে অভিনয় করা । এই কমিউনকে নাটক জনপ্রিয় এবং দশর্কদের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে । এ ছাড়া নাটক কমিউন অপেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনুশীলনের একটি ফ্ল্যাটফর্ম যুগিয়েছে ।

    পরিকল্পনা অনুসারে নাটক কমিউনের প্রথম কর্মসূচী হল প্রতি দু'মাস অন্তর নাট্যকারের নাটক পাঠ । পাঠ অনুষ্ঠানে দশর্ক ও বিশেষজ্ঞরা নিজের মত প্রকাশ করেন । দশর্ক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে নাট্যকার নাটক সংশোধন করেন । পরে নাটক কমিউন নাটক রচনা ও সমালোচনা সম্পর্কিত কিছু আলোচনা সভা ও প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করবে , সকল সদস্য বিনা পয়সায় এ সব কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারবে ।

    নাটকের পাঠ ও আবৃত্তি বিদেশে প্রচলিত , তবে চীনে মাত্র শুরু হয়েছে । পরিচালক মেন চিং হুই নাটক কমিউন প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় ঠাট্টা করে বলেছেন , আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় নাটক অনুশীলনের সুযোগ পেতাম , তাহলে আমি আরো বেশি খ্যাতি পেতাম । নাটক কমিউনের প্রতিষ্ঠা নাট্যানুরাগীদের মুখোমুখী বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । তিনি বলেছেন ,নাটকের পাঠ ও আবৃত্তির কমর্সূচী পেশাদার নাট্য শিল্পী ও অপেশাদার অনুরাগীদের জন্য মুখোমুখি বিনিময়ের এক সুযোগ সৃষ্টি করবে । এ ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই খোলামনে নিজের মনের কথা বলতে পারেন , ইচ্ছা করে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা বা তোষামোদ করার প্রয়োজন নেই । তাই এ ধরনের কমর্সূচী চোখ ও আত্মার বিনিময় । আমি আমার রচিত নাটক এ ফ্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করবো ,আমি এ ধরনের বিনিময়ে অংশ নিতে আগ্রহী।

    দশর্কদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য নাট্য শিল্পীরা নাটকের বিষয়বস্তু সংস্কারেরও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন । তারা দশর্কদের প্রিয় বিষয় বেছে নিয়ে সিরিজ নাটক তৈরী করেন । ২০০৩ সাল থেকে নাট্য শিল্পীরা ' খাই সিন মা হুয়া ' নামে একটি সিরিজ নাটক তৈরী করেন । এই নাটকে সমাজের বহু আলোচিত বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয় । এ সিরিজ নাটক অল্পবয়সী দশর্কদের সাধুবাদ পেয়েছে । ' ক্ষিপ্ত পাথর'হলো গত বছর চীনের এক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের ভিত্তিতে রচিত একটি নাটক । এ নাটকের নাট্যকার উ ফু সেন মনে করেন ,দশর্কদের চাহিদা মেটানো তাদের দায়িত্ব । ' খাই সিন মা হুয়া' নামক সিরিজ নাটক এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করেছে । তিনি বলেছেন , ' খাই সিন মা হুয়া ' নামক সিরিজ নাটক দশর্করা পছন্দ করেন । দশর্করা শিক্ষা নেয়ার জন্যই থিয়েটারে আসেন না , তারা চাপ কমানোর জন্যই এসেছেন । ' খাই সিন মা হুয়া ' সিরিজ নাটক দশর্কদের এই চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে ।

    আধুনিক যুগে অনেকের চাপ বেশি । তাই অবসর সময় অনেকে চাপ কমানোর জন্য বিনোদন কর্মসূচীতে অংশ নেন । ' খাই সিন মা হুয়া ' সিরিজ নাটক এ জন্য দশর্কদের পছন্দসই নাটকে পরিণত হয়েছে । এ ছাড়া নাটকটির টিকিটের দাম দশর্কদের গ্রহণযোগ্য। এটাও এ নাটকের সফলতার একটি কারণ। আমরা আশা করি নাট্যশিল্প আরো জনপ্রিয় হবে এবং আরো বেশি জনপ্রিয় নাটক মঞ্চস্থ হবে।