ইইউ'র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন ১৫ অক্টোবর লুকসেম্বার্গে শুরু হয়েছে। এবারের সম্মেলনে মিয়ানমারের পরিস্থিতি, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা এবং চাদ ও মধ্য-আফ্রিকায় শান্তি-রক্ষী বাহিনী পাঠানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইইউ'র নতুন চুক্তি সম্পর্কিত।
ইইউ'র পালাক্রমিক চেয়ারম্যান দেশ পর্তুগালের পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে ইইউ'র সদস্য দেশগুলোর নেতারা আগামী ডিসেম্বর মাসে ইইউ'র শীত্কালীণ শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ'র নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করবে, এটি আগের "ইইউ সাংবিধানিক চুক্তি"র স্থলাভিষিক্ত করা হবে। এরপর ইইউ'র বিভিন্ন দেশের পালামেন্ট নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। ২০০৯ সালের পয়লা জানুয়ারি এই নতুন চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। এই নতুন চুক্তিটি ডিসেম্বর মাসের শীর্ষ সম্মেলনে যাতে গৃহীত হয় এ জন্য ১৮ ও ১৯ অক্টোবর পর্তুগালের লিসবেনে অনুষ্ঠেয় অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে নতুন চুক্তির বিষয় নির্ধারিত হবে। সুতরাং ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন হলো অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের আগে সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন।
গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ'র নেতৃবৃন্দ নতুন চুক্তির খসড়া প্রস্তাবে একমত হয়েছেন। এর ফলে বিগত দুই বছরের ইইউ'র সাংবিধানিক সংকটের অবসান হয়েছে। নতুন চুক্তির সঙ্গে আগের সাংবিধানিক চুক্তির বেশি'র ভাগ ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে।
ইইউ'র নতুন চুক্তি হলো ইইউ'র সদস্য দেশগুলোর নিজ নিজ সমস্যা ও চাহিদা পুরণের ফল। ইইউ'র সংবিধানের মূল বিষয়টি নতুন চুক্তিতে অবিকল রাখা হয়েছে। যেমন ইইউ'র স্থায়ী চেয়ারম্যান দেশ নির্ধারণ করা, পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধিদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং নতুন ভোটদান পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দিক। কিন্তু ব্রিটেন ও পোল্যান্ডের ক্ষমতারোধের নতুন চুক্তিতে কিছু আপোসমূলক দিকও রয়েছে। যেমন "ডাবল মোজোরিটি" ভোটদান ব্যবস্থা ছোট ছোট দেশগুলোর অধিকারকে লংঘন করেছে এবং লোকসংখ্যার পরিমান বেশি দেশ ঘেষা ব্যবস্থার প্রশ্নে নতুন চুক্তিতে নতুন ভোটদান পদ্ধতিটি ২০১৪ সালে কার্যকর করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এবং তিন বছরের মধ্যবর্তী সময় যুগিয়ে আগামী ২০১৭ সালে তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে।
ব্রিটেনের উদ্বেগের বিষয় হলো "ইইউ'র নাগরিকদের মৌলিক অধিকার চার্টার" নতুন চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হলে ব্রিটেনের বৈধ ধর্মঘট আরো বাড়বে। তাদের এই উদ্বেগ কমানোর জন্য নতুন চুক্তিতে বলা হয়েছে, "ইইউ'র নাগরিকদের মৌলিক অধিকার চার্টার"এর বিষয় ব্রিটেনের আদালতের বিচারের নিয়ম পরিপহ্নি হবে না। তা ব্রিটেনের বর্তমান আইনের উপর প্রভাব ফেলবে না।
বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ইইউ'র নতুন চুক্তির ব্যাপারে একমত হওয়ার লক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে। কারণ ইইউ'র বিভিন্ন দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা নতুন চুক্তি প্রনয়নের সময় ভালভাবেই পারষ্পরকে বজায় রেখেছেন। এর আগে পোল্যান্ডের "ডাবল মের্জোরিটি" বিষয়ের কঠোর মনোভাব এবারের আলোচনার প্রধান বিষয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। পোল্যান্ড যদি কোন কোন ক্ষেত্রে আপোস করতে পারে তাহলে নতুন চুক্তি আরো সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
তাছাড়া, কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন, এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে কোন সমস্যা দেখা দেবে না। কিন্তু ১৮ ও ১৯ অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্ভবত সমস্যা হতে পারে। কারণ ২১ অক্টোবর পোল্যান্ডের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন পোল্যান্ডের নেতৃবৃন্দ নিজ দেশের ভোটদানের পদ্ধতি নিয়ে পুনরায় নতুনভাবে কিছু করার কথা ভাববে। কিন্তু যেহেতু অধিকাংশ সদস্য দেশ "ডাবল মেজোরিটি"র সমর্থক , পোল্যান্ড হয়তো তাই এ ব্যাপারে বেশি মতভেদ প্রকাশ করবে না। কিন্তু তা পুরন করার জন্য পোল্যান্ড হয়তো অন্য বিষয়ে নতুন কিছু উত্থাপন করবে। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|