সাংস রায়াস গিয়ামশো একজন ধর্মীয় নেতা এবং রোমানটিক কবি ছিলেন । বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস আনার পর তিনি আরো মুক্তমনা হয়ে ওঠেন । তিনি তাঁর অনুভূতি কবিতার প্রকাশ করেন ।কবিতা থেকে তাঁর আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা অনুভব করা যায় । 'আমি এক লাখ পাহাড় অতিক্রম করি আমার পুনর্জন্মে আসার জন্য নয় শুধু তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করি ।' তাঁর অধিকাংশ কবিতায় বিষয়বস্ত নারী ও পুরুষের আন্তরিক প্রেম । কবিতার ছত্রে ছত্রে হাল্কা দুঃখও মর্মরিত হয়েছে । তাঁর অনেকগুলো ভালো কবিতা রয়েছে এবং এগুলো খুব জনপ্রিয় ।
শেনসেন হলেন ছেংতু শহর থেকে আসা একজন পর্যটক । তিনি প্রথমবারের মতো কুয়াংচোং মন্দিরে এসেছেন । তিনি বলেন, আমি তিব্বতের তাচাও মন্দিরে গিয়েছি । কারণ ছেংতু থেকে তিব্বত যাওয়া খুবই সুবিধাজনক । আজ আমি আলাশানের কুয়াংচোং মন্দির আসতে পেরে খুবই আনন্দিত । আমি ইতিহাস বিষয়ে গবষণা করি বলে মন্দির সংস্কৃতি পছন্দ করি । এখানকার পরিবেশ খুবই সুন্দর ও শান্ত । প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ধর্মীয় সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন । আমি ছবি তুলে আমাদের বন্ধুদের দেখাবো । এবার আমি ডিভি ও ক্যামেরা নিয়ে এসেছি, যাতে আরো বেশি সুন্দর দৃশ্য তুলতে পারি ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকারের গুরত্বে কুয়াংচোং মন্দিরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে । ফলে ধর্মীয় সংস্কৃতির সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও উন্নয়নসহজ হয়েছে । বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাসও সবাইকে সমান চোখে দেখা । প্রতি বছর স্থানীয় সরকার বিশেষ পুঁজি বিনিয়োগ করে মন্দিরটি মেরামত করে । এর পাশাপাশি সরকার মন্দিরের বেশী বয়স্ক লামাদের জন্য বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে । আলাশান জাতীয় ধর্মীয় ব্যুরোর উপ-প্রধান কাও চিয়ান চোং বলেন,
স্থানীয় সরকার জাতি ও ধর্মীয় বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেয় । এর পাশাপাশি তিব্বতীয় ধর্মীয় লামাদের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে থাকে । তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ এবং তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য দেয় ।
কুয়াংচোং মন্দিরে লামারা মনোযোগ দিয়ে বই পড়েন এবং পর্যটকরা আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন , এর পরিবেশ সুষম ও আরামদায়ক । একজন বেশী বয়স্ক লামা জামার পকেট থেকে একটি সেল ফোন বের করে কথা বলতে থাকলেন । মন্দিরের ঐতিহাসিক পরিবেশে যেন একটু আধুনিকতার ছোঁয়ায়।
মন্দিরের পাশে একটি উঁচু পাথুরে খালে অনেক নীল রঙয়ের শুভেচ্ছামূলক হাদা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে । এই খালে অনেক পর্যটক আনন্দে হাতের হাদা ওপরে ছুঁড়ে দেয় । লামা উলিচি আমাদের জানান, এসব হাদা পর্যটকরা ছুঁড়েছে । কারণ প্রচলিত আছে হাদা যত উঁচুতে ছোঁড়া হবে তত বেশি সৌভাগ্য আসবে । এ কারণে সবাই নিজের হাদাটিকে অনেক ওপরে ছোঁড়ার চেষ্টা করে । শানতুং প্রদেশ থেকে আসা মেয়ে চিয়াংলি মাত্র হাদা ছুঁড়েছে, সে আনন্দের সঙ্গে আমাদের বলে, আমি অনেক উঁচুতে হাদা ছুঁড়েছি । এ বছর আমার সৌভাগ্য আসবে । দেখেন ঐ যে , আমার হাদা, অনেক উঁচুতে তাইনা ? আমি আশা করি এ বছর সবার সৌভাগ্য আসবে ।
পাথরের খালে নীল হাদাগুলো আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা প্রকাশ করে । লোকেরা এখানে হাসিখুশি থাকে এবং মনে শুভবুদ্ধি লালন করে ।
এ পর্যন্ত কুয়াংচোং মন্দির তিব্বতীয় ধর্মীয় মন্দিরের ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার একটি সুন্দর পর্যটন স্থানেও পরিণত হয়েছে । মন্দিরে উপ-পরিচালক সুইলাথু বলেছেন, প্রতি বছর প্রায় ১.২ থেকে ১.৫ লাখ পার্সন টাইমস পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন , আমাদের মন্দির নিজেদের পদ্ধতিতে দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায় । আমরা পশ্চিম অঞ্চলের পাহাড়, নদী, মন্দিরের সংস্কৃতি এবং মঙ্গোলীয় জাতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মানসম্পন্ন সেবা দেবো এবং বিশ্বের নানা অঞ্চলের পর্যটকদের আসার জন্য অপেক্ষা করবো।
|