কুয়াংচোং মন্দির হোলানশান পাহাড়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত । আলাশান অঞ্চলের দক্ষিণে এর অবস্থান বলে স্থানীয় অধিবাসীরা একে দক্ষিণ মন্দিরও বলে । এর চার পাশ সবুজ গাছ আর সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে ঘেরা । গাছে গাছে বিচিত্র সব পাখি । মন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে । দূর থেকে দেখলে মন্দিরটির আকারে বিশেষ বৈশিষ্ট্য চোখে পড়বে । মন্দিরে ঢুকলে নির্মল বাতাসে ফুসফুস সতেজ হয়ে উঠবে । মন্দিরের দক্ষিণ দিকে একটি পরিচ্ছন্ন ছোট নদী রয়েছে । এর পানি খুবই মিষ্টি ।
লামা উলিচি এ মন্দিরে প্রায় ৩০ বছর বসবাস করেন । এখানকার গাছ , ফুল আর দৃষ্টিনন্দত দৃশ্যের প্রতি তার গভীর মমতা । তিনি আমাদের জানিয়েছেন, কুয়াংচোং মন্দিরের নির্মাণকাল ১৭৫৮ । মন্দিরের দু'পাশের পাহাড়ে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সারি সারি নানা রঙয়ের ভাষ্কর্য রয়েছে । এসব ভাষ্কর্য অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বড় পাথরের ভাষ্কর্য । মন্দিরের চার পাশে ঘিরে রয়েছে ৮টি পাহাড় । দেখতে ক্ষমার দেবতার শাপলা আসনের মতো । মন্দিরটির অবস্থান শাপলা আসনের ঠিক মাঝ বরাবর । লামা উলিচি বলেন, মন্দিরে নানা আকৃতির কক্ষের সংখ্যা ২০টিরও বেশি । বড় কক্ষে শাক্যমুনির মূর্তি এবং তিব্বতের বিখ্যাত ধর্মীয় গুরু সোং খা পা এবং তাঁর ছাত্রদের একাঠিক মূর্তি রয়েছে ।
আমরা যখন মন্দির ঢুকি তখন লামাদের ধর্মীয় বই পড়ার সময় । উলিচি'র সঙ্গে আমরা ধর্মীয় বই পড়ার কক্ষেও ঢাকলাম । কক্ষে প্রবেশ করার পর উলিচি লামাদের সঙ্গে নিজেও ধর্মীয় বই পড়া শুরু করলেন । তাদের মধ্যে বয়স্ক লামা যেমন আছেন তেমনি তরুণ বয়সের অনেকে রয়েছেন । পড়ার ব্যাপারে সবাই আন্তরিক ও মনোযোগী । তারা বৌদ্ধ ধর্মের মর্ম উপলব্ধি করে শান্তি বোধ করেন ।
আলাশান অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে কুয়াংচোং মন্দির একটি অতি পবিত্র স্থান । কারণ এখানে ষষ্ঠ দালাইলামা সাংস রায়াস গিয়ামশো'র দেহাবশেষ ও তার ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস একটি প্যাগোডায় সংরক্ষিত আছে । এ কারণে কুয়াং চোং মন্দির অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ধর্মীয় মহলে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান । মন্দিরের উপ-পরিচালক সুইলাথু বলেন, আমাদের মন্দির পশ্চিম অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া এবং গোটা অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও এর ব্যাপক সুনাম রয়েছে । কারণ এর সঙ্গে তিব্বতীয় ধর্মীয় নেতা ষষ্ঠ দালাইলামা সাং রায়াস গিয়ামশো'র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ।
ষষ্ঠ দালাইলামা ১৬৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন । রূপকথায় তিনি তিব্বত ও ভারত ভ্রমণ করার পর ১৭১৬ সালে আলাশানের একজন পশুপালকের পরিবারে আসেন এবং পশুপালকের ছেলেকে নিজের প্রথম ছাত্র হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মীয় জ্ঞানে দিক্ষীত করেন । বহু বছর পর তিনি আলাশানে মৃত্যুবরণ করেন । তাঁর ছাত্র শিক্ষককে স্মরণ করার জন্য তাঁর মৃত্যুহেদের প্যাগোডা কুয়াংচোং মন্দিরে নিয়ে এসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন । মন্দিরের উপ-পরিচালক সুইলাথু বলেছেন, সাংস রায়াস গিয়ামশো'র ব্যবহৃত ধর্মীয় বই এবং অন্য পাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক জিনিসগুলো সংগ্রহ করে মন্দিরে সংরক্ষণ করা হয়েছে ।
|