জ্বালানী সাশ্রয় ও নিঃসরণ কমানো সম্পর্কিত নানা নীতি ও ভুমিকা পালনের পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ মোট উত্পাদনমূল্যের বিপরীতে জ্বালানি-ব্যবহার গত বছর থেকে দ্রুত কমছে। পরিবেশ অবনতির প্রবণতাও কমেছে।
জ্বালানি ও সম্পদ সাশ্রয় এবং পরিবেশ সুরক্ষারকাজ করার জন্য বর্তমানে সারা চীনে প্রতিটি নাগরিক ও প্রতিটি পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ জন্য এক মাস আগে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী চেন পেইইয়েন বলেছিলেন,আমি থাইহু হ্রদ , চাও হু হ্রদ ও তিয়েনছি হ্রদ সহ চীনের সবচেয়ে দূষিত তিনটি হ্রদ এবং আমাদের দেশের সবকটি বড় নদীর পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিট , প্রতিটি পরিবার এবং প্রতিটি নাগরিকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যে , আসুন আমরা এখন থেকে জ্বালানি সাশ্রয় এবং পরিবেশ রক্ষার কাজ শুরু করি ।
চীন সরকার নানা মাধ্যমে, নানা পদ্ধতিতেজনসাধারণের কাছে জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করছে । নাগরিকদেরকে এক মাসে একদিন করে গাড়ি না চালানো এবং অন্ততএকবার হাত দিয়ে কাপড় ধোঁয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। তাছাড়া চীন সরকার মদ্যপায়ীদেরকে মাসে ৫০০ গ্রাম মদ কম খাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে । যাতে ৪০০গ্রাম কয়লা সাশ্রয় করা যায় ।
গত কয়েক বছরে চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদ ও পরিবেশের মধ্যে দ্বন্দ্বপ্রকট হয়ে উঠেছে । এই অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য ২০০৩ সালে চীন উন্নয়ন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তত্ব উত্থাপন করে । দু'বছর পর সম্পদ সাশ্রয়ী ও বন্ধুভাবাপন্ন সমাজ গড়ে তোলার কথা উত্থাপন করে এবং গত বছর জ্বালানি সাশ্রয় ও নিঃসরণ কমানোর মধ্যকালীন লক্ষ্য পেশ করে । এই মধ্যকালীন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে সারা চীনে অভ্যন্তরীণ মোট উত্পাদন মূল্যের বিপরীতে জ্বালানি ব্যয় ২০০৫ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ কমবে । প্রধান প্রধান দূষিত পদার্থের মোটনিঃসরণ ১০ শতাংশ কমবে ।
এবছরের প্রথমার্ধে চীন ৫৫ লাখ কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুত উত্পাদন করতে সক্ষম ক্ষুদ্র তাপ বিদ্যুত উত্পাদন কেন্দ্র এবং ১ কোটি ১০ লাখ টন উত্পাদনক্ষম লোহারকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে ।
চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বিশেষ করে সেই বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাজ্বালানি সাশ্রয় ও নিঃসরণ কমানোর গুরুত্বদিনদিন উপলব্ধি করছেন । চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের রাষ্ট্রেরমালিকানাধীন সম্পদ তত্ত্বাবধান ও তদারকী কমিটির মহা পরিচালক লি রোংরোং বলেছেন, তারা রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন বৃহদাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জ্বালানি সাশ্রয় ও নিঃসরণ কাজের ওপর কড়াকড়ি নজর রাখবে এবং পুরস্কারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে । তিনি বলেন, নির্ধারিত করা প্রধান প্রধান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তার প্রতিটি উত্পাদনে ব্যবহার্যজ্বালানি ও পানি এবং নিঃসৃত দূষণের মাত্রাইতিহাসের সবচেয়ে ভাল পর্যায়ে আনতে হবে । তিন ভাগের এক ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জ্বালানি সাশ্রয় ও নিঃসরণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে ।
জ্বালানি সাশ্রয় ও নিঃসরণ কাজের গুরুত্ব আরোপ করার সঙ্গেসঙ্গে চীনের স্থানীয় কর্মকর্তারা উন্নয়ন সম্পর্কে নিজেদের ধারণা পরিবর্তন করতে শুরু করেন । সানসি প্রদেশের ল্যুলিয়াং শহরের মেয়র তুং হোংইয়ুন বলেছেন ,একটি অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে ল্যুলিয়াং নিজের অর্থনীতির উন্নতিকরার ইচ্ছা খুব প্রবল। পরিবেশ দূষণ করার কারণে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । সত্যি কথা , স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মতোই আমারও কষ্টলাগে । কিন্তু শহরের ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া অত্যন্ত জরুরি।
এখন এই সব ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সাফল্য আসতে শুরু করেছে। চীনের পরিবেশ অবনতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে । এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে , চীনের মোট উত্পাদনমূল্যের বিপরীতে জ্বালানি ব্যয় ২০০৩ সালের পর প্রথমবারের মতো কমেছে। প্রধান প্রধানদূষিতপদার্থের নিঃসরণ কমতে শুরু করেছে ।
|