আজ থেকে ১৫ বছর আগে চীনের হুপেই প্রদেশের সি ইয়েন শহরের ইয়ুনসি জেলার হোতিকৌ গ্রামের ছেলেমেয়েরা বিনাখরচে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া শুরু করল । স্কুলে থেকে আর স্কুলে খেয়ে লেখাপড়া । ঘুমাবার ও খাবারের জন্য তাদের নিজের কোনো লেপ কিংবা বাসনপত্রও দিতে হয় না । এত সব অবদান যার তিনি সেই স্কুলেরইশিক্ষক হু আনমেই।
হুপেই প্রদেশের ইয়ুনসি জেলার প্রত্যন্ত এক থানা যেখানে বাস করে হুই জাতির মানুষেরা । জেলাশহর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে থানাটি অবস্থিত। আবার থানা থেকে হোতিকৌ গ্রামের দুরত্ব৩০ কিলোমিটার । এখানকার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে , বাইরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত ছিল না । যুগযুগ ধরে এখানকার লোকেরা লেখাপড়ার সুযোগ পেতেন না ।
১৯৭১ সালে স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য স্থানীয় গণ সরকার হোতিকৌ গ্রামে এক প্রাথমিক স্কুল খুলল । হু আনমেইর বাবা হু ত্যরোং এই স্কুলের প্রথম শিক্ষক হলেন । ১৯৯২ সালের গ্রীষ্মকালে ১৮ বছর বয়সী হু আনমেই নিম্নমাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে চাচ্ছিল । ঠিক এ সময় বাবা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং তার ঘাড়ে চাপে বাবার ৯৬০ ইউয়ানের ঋণের বোঝা। এটা গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাবার দেয়া স্কুলফির বিল ।
চার অল্পবয়সী ভাইবোন এবং বাবার ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আনমেই বাধ্য হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলেভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছেড়ে দিলেন এবং গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে বাইরে মজুরী খাটার সিদ্ধান্ত নিলেন । এই সময় গ্রামের পরিচালক তাকে বললেন , আনমেই , থেকে যাও । তুমি ছাড়া গ্রামে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যকোনো মানুষ নেই । বাইরের শিক্ষক কেউই এখানে আসতে চান না । তুমি না থাকলে আমাদের ছেলেমেয়েরা আবার স্কুলছাড়া হবে ।
আনমেই যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তখনই তার কাছে এলো স্কুলেরছেলেমেয়েরা। আদুরে ছেলেমেয়েদের দেখে এবং বাবার রেখে যাওয়া বিলের কথা ভেবে আনমেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, বাবার স্থান পূরণ করে স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেলেন শিক্ষক । আনমেই প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীকে পড়াতেন এবং পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতেন । বৃষ্টি অথবা কুয়াশার দিন তিনি বিপদজনক কয়েকটি জায়গায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আনা নেয়ার কাজও করতেন । ১৯৯৩ সালের শীতকালের এক সকালে হু আনমেই পড়াচ্ছিলেন , এমন সময় হঠাত লক্ষ্য করলেন , জানালার বাইরে এক মেয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর দিকে তাকিয়ে আছে । তিনি ক্লাস থেকে বের হয়ে মেয়েটির কাছে গেলেন । মেয়েটি তাকে নিচুস্বরে জিজ্ঞেস করলো , শিক্ষক আমি লেখাপড়া করতে আসতে পারি ? শীতে লাল হয়ে ওঠা চেহারাটি দেখে আনমেই উত্তর দিলেন , পার পার, ভেতরে এসো ।
আমার বাড়িতে টাকা নেই । বাবা আমাকে আসতে দেবেন না ।
তোমার কোনো টাকা দিতে হবে না ।
1 2
|