v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-10 19:05:23    
সিয়াও সিনের পরিবারের বেতনের কাহিনী

cri

    চীনে যারা চাকরী করেন , তারা সবাই প্রতিমাসে বেতনের একটি সরু ও সম্বা কাগজ পেয়ে থাকেন । এ কাগজে তাদের পারিশ্রমিকের বিস্তারিত বিবরণ লেখে থাকে । গত কয়েক দশকে চীনের সামাজিক ব্যারোমিটারের মত এ কাগজে চীনের জনসাধারণের জীবনযাত্রার পরিবর্তন রেকর্ড হয়েছে ।

    দাদা তুর বয়স এখন ৯৮ বছর । তিনি পূর্ব চীনের শান তুং প্রদেশের ছিং তাও শহারের একটি সাধারণ বাড়িতে বাস করেন । তার পরিবারে তিনি ছাড়া তার ছেলে , ছেলের বৌ ও একটি নাতনী আছে । তিনি সপরিবারে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছেন । অবসর নেয়ার আগে দাদা তু ছিং তাও শহরের একটি জ্বালানী কারখানায় কাজ করতেন । এখন তিনি প্রতিমাসে অবসরকালীন ভাতা নিয়ে থাকেন । তার বেতনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করলে তিনি অত্যন্ত অভিভূত হয়ে পড়েন । তিনি বলেন ,

    ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার আগে তিনি পেট ভরে খেতে পারতেন না । মুক্তি লাভের পর তার জীবনযাত্রায় নিশ্চয়তা আসে । ১৯৭৫ সালে তিনি অবসর নেন । তখন তার অবসরকালীন ভাতা মাত্র ৭০ থেকে ৮০ ইউয়ান ছিল ।

    গত শতাব্দির ষাট ও সত্তরের দশকে চীনের পণ্যদ্রব্র্যের অত্যন্ত অভাব ছিল । তখন সরকার পরিকল্পিতভাবে জনসাধারণকে পণ্য সরবরাহ করতো । কাপড় , মাংস ও ডিম সবই নির্দিষ্ট পরিমাণে জনগণকে সরবরাহ করা হতো । সেসময় সারা দেশে শ্রমিকদের মাথাপিছু মাসিক বেতন ছিল মাত্র ৩৮ ইউয়ানের কাছাকাছি । এ বেতন নিয়ে তারা কেবল খাওয়া-পরার মত মৌলিক চাহিদি মাটাতে পারতেন । তখন বেতন ছাড়া জনসাধারণের অন্য কোনো আয়ের উত্স ছিল না । ফলে তাদের জীবনযাত্রার মানও ছিল নিচু ।

    ১৯৭৮ সালে অর্থাত দাদা তুর অবসর নেয়ার ২ বছর পর চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হয় । ফলে চীনের সমাজে বিরাট পরিবর্তান ঘটে এবং সংগে সংগে জনসাধারণের বেতনও সাধারণভাবে বাড়তে থাকে । অবসরপ্রাপ্ত দাদা তুও এ সংস্কার থেকে লাভবান হয়েছেন । তিনি বলেন ,

    অবসর নেয়ার পর আমার বেতন বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে । গত বছর আমার বেতন ১ হাজার ৭ শ'রও বেশি হয়েছে । বিশেষ করে ১৯৯৯ সালে আমি বৃদ্ধদের জন্যে নির্মিত একটি আবাসভবনে বসবাস করতে শুরু করি । সেখানে মাসে খাওয়া-দাওয়ার জন্যে ৩৮০ ইউয়ান দিতে হয় । সেখানকার কর্মীরা যত্ন নিয়ে আমাদের দেখাশোনা করেন একং আমাদের সংগে ভালো ব্যবহার করেন ।

    নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত সরকার কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতনের ওপর চারবার গুরুত্বপূর্ণ সরকার চালিয়েছে । প্রথমদিকে কর্মচারী ও শ্রমিকদের নানা ধরণের প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করা হতো । পরে তাদের নিয়মিত বেতন দেয়া হয় । আরো পরে বিভিন্ন পদ অনুসারে তাদের বেতন দেয়া হয় । বেতনের মধ্যে বুনিয়াদি বেতন , পদ বেতন , কর্মমেয়াদের বেতন ও বোনাস অন্তর্ভূক্ত রয়েছে । অবশ্য এ সমযের মধ্যে অবসরপ্রাপ্তদের বেতনও বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে । দাদা তুর এখনকার বেতন তার অবসর নেয়া বছরের চেয়ে বিশ গুণেরও বেশি ।

    দাদা তু এখন নিজের জীবন সম্পর্কে খুবই সন্তুষ্ট । তিনি কেবল মাঝেমধ্যে শাংহাইয়ে কর্মরত তার নাতনী সিয়াও সিনের কথা ভাবেন ।

    শাংহাই হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক শহর । ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর সিয়াও সিন এখানে এসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে কাজ করেন । প্রথমদিকে তার মাসিক বেতন ছিল ৩ হাজার ইউয়ান । তখন তিনি একটি ভাড়া করা বাড়িতে থাকতেন । এ বছর তিনি একটি নতুন বাড়ি কিনেছেন । বাড়িটির আয়তন ৬০ বর্গমিটারেরও বেশি । কয়েক বছর আগে তার শিল্পপ্রতিষ্ঠান সকল কর্মচারী ও শ্রমিকের জন্যে গৃহায়ন তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে । এ ব্যবস্থার কল্যাণে সিয়াও সিনের মত ব্যক্তিদের পক্ষে বাড়ি কেনা সম্ভব হয়েছে । তিনি বলেন ,

    গত দু বছরে আমাদের গৃহায়ন তহবিল বিরাট মাত্রায় বেড়েছে । এটি আমাদের অনেক উপকার করে । এখন প্রতি মাসে আমার এ খাতে এক হাজারেরও বেশি ইউয়ান রয়েছে । এ তহবিল থাকায় আমাদের ঋণ শোধের চাপও কিছুটা কমে আসে ।

    গৃহায়ন তহবিল ব্যবস্থা চীনের গৃহায়নের নিশ্চয়তা বিধানের একটি ব্যবস্থা । প্রতিমাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক কর্মচারী ও শ্রমিকের জন্যে গৃহায়ন বাবদ তাদের বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে দেয় এবং একই সময় এ গৃহায়ন বাবদ তাদের অনুরূপ পরিমাণ টাকা দিয়ে দেয় । এসব টাকা ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট আমানতে জমা থাকে । কর্মচারী ও শ্রমিকরা বাড়ি কেনা বা ভাড়া করা এবং বাড়ি সাজানোর সময় এ টাকা ব্যবহার করতে পরেন । বেতনের মত এ তহবিলও তাদের কর্মমেয়াদ বাড়ার সংগে সংগে বাড়তে থাকে । ২০০৬ সালের শেষ দিকে সিয়াও সিন বাবা মার আর্থিক সহায়তায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শাংহাইয়ের ব্যস্ততম এলাকায় একটি বাড়ি কিনেছেন । তিনি এখন প্রতি মাসে নিজের গৃহায়ন তহবিল দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন ।

    সিয়াও সিনের বাবা চীনা ও বিদেশী পুঁজির একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন । তিনি এ প্রতিষ্ঠানের একজন মধ্য পর্যায়ের কর্মী । তিনি নিজের বেতন সম্পর্কে সন্তুষ্ট । তিনি বলেন,

    ১৯৯০ সালের পর আমি এ শিল্পতিষ্ঠানে নিয়োগ পাই । তখন আমার বেতন ছিল ৪ শ' ইউয়ান । দেশের সংস্খার ও উন্মুক্ততার প্রসার এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের মুনায়া বাড়ার সংগে সংগে আমার এখনকার বেতন ১৯৯১ সালের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেড়েছে ।

    এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০৬ সালে চীনে কর্মরত কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতনের মোট পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । ২০০৫ সালের তুনলায় যা ১৩.৫ শতাংশ বেড়েছে । জনসাধারণের বেতন বাড়ার সংগে সংগে তাদের ব্যয়ের কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটেছে । আগে খাওয়া-পরার কাজেই তাদের বেতন শেষ হয়ে যেতো । কিন্তু এখন তারা বেতনের বিরাট অংশ ফ্যাসন , বাড়িঘর , শিক্ষা , পর্যটন ও বিনোদনের কাজে ব্যবহার করছেন । সিয়াও সিনের বাবা বলেন ,

    আগে আমরা সবসময় খাওয়া – পরার দিকে বেশি মনোযোগ দিতাম । এখন আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । মাঝেমধ্যে আমি বাইরে ভ্রমণেও যাই ।