পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র ওয়াহিদ আরশাদ ৯ অক্টোবর স্বীকার করেন, গত তিন দিনে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে উপজাতি জঙ্গিদের তুমুল লড়াই হয়েছে। এখন পর্যন্ত এতে ২০০ জনেরও বেশি বেআইনী সশস্ত্র ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেয়ার পর এটাই হচ্ছে পাকিস্তানে চালিত সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এ থেকে প্রমাণ হয়েছে যে, পাকিস্তান সরকার বেআইনী সশস্ত্র ও চরমপন্থী শক্তিকে আঘাত হানার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
পাকিস্তান সরকারের এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে।
প্রথমত, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় বেআইনী সশস্ত্র শক্তির আক্রমণ বেড়েছে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি অঞ্চলের জঙ্গীরা ১৫ জুলাই একতরফাভাবে গত বছরে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লংঘন করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর স্থানীয় সামরিক পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে না নিলে তারা সেনাবাহিনীর ওপর আরো বেশি হামলা চালাবে। এরপর উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি অঞ্চলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ফলে স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তেজনাকর।
দ্বিতীয়ত, আল-কায়েদা সংস্থা পাকিস্তানের ওপর নজর রাখছে। ২০ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদা একটি চরমপন্থী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছে, বিন লাদেনের নির্দেশ অনুযায়ী, তারা শীগগির পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। একই ওয়েবসাইটে "আল-কায়েদা"র দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি আয়মান আল-জাওছারির অডিও ভাষণ প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছরের জুলাই মাসে লাল মুসজিদে পাকিস্তান সরকারের সামরিক অভিযানে জঙ্গি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। কঠোর থেকে কঠোরতর নিরাপত্তা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বেআইনী সশস্ত্র শক্তি ও চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে আঘাত হানার মাত্রা জোরদার করেছে।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আল-কায়েদার প্রধান বিন লাদেন আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকার কাছে উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি অঞ্চলে লুকিয়ে আছে। ১ আগস্ট মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বারাক ওবামা বক্তৃতায় বলেন, তিনি পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সন্ত্রাসীদের সন্ধান পাওয়া মাত্র পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ উদ্যোগ না নিলেও তিনি এককভাবে মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের ওপর আঘাত হানার আদেশ দেবেন। যদিও পাকিস্তান সরকার একাধিকবার জোর দিয়ে বলেছে, পাকিস্তান ভূখন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের একপাক্ষিক অভিযান গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশেষ মিত্র সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে মুশাররফ আশা করেন, সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকা দেখে যুক্তরাষ্ট্র আগের মতোই ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাবে।
তা ছাড়া, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তনশীল। যদিও বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী, পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। তবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা একটি মামলার রায় হওয়ার পর প্রকাশিত হবে। সেনা প্রধানের পদে থেকে পারভেজ মুশাররফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈধতার চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বিরোধীদের দায়ের করা একটি রিটের কারণে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ মনে করে, এমন এক সন্ধিক্ষণে বেআইনী সশস্ত্র শক্তি ও চরমপন্থী শক্তিকে আঘাত হানার ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকারের কঠোর অবস্থান এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখা জনসাধারণের মধ্যে মুশাররফের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তুমুল লড়াই চলছিল। পাকিস্তান সরকার বেআইনী সশস্ত্র ও চরমপন্থী শক্তিকে আঘাত হানার প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা, তা কেবল সময়ই বলতে পারে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|