ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের আলোচনা গ্রুপ ৮ অক্টোবর জেরুজালেমে বৈঠক করেছে , যাতে মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য যৌথ বিবৃতি প্রণয়ন করা যায় ।
১০ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের নেতাদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে এ আলোচনা গ্রুপ গঠিত হয় । ইসরাইলী গ্রুপের সদস্য হলেন প্রধান মন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক ইয়োরাম তুরবোভিজ , ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শালোম তুরগেমান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আহারোন আব্রামোভিচ । ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ কুরেয়ার উদ্যোগে ফিলিস্তিনের শীর্ষ আলোচনা প্রতিনিধি সায়েব এরেকাত ও প্রেসিডেন্ট আব্বাসের উচ্চ পদস্থ সহকারী ইয়াসের আবেদ রাবো ফিলিস্তিনের আলোচনা গ্রুপ গঠন করেছেন । চলতি মাসের তিন তারিখে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শীর্ষ বৈঠকে ফিলিস্তিনের আলোচনা গ্রুপ প্রথমবারের মত এতে অংশ নিয়েছে । আব্বাস ও এহুদ ওলমার্ট বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে , প্রত্যেক মাসে দু'বার নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা রাখার পাশা পাশি দু'পক্ষের কর্মগ্রুপ গত আগস্ট মাস থেকে যৌথ দলিলের বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার ফলাফল তারা দু'দেশের নেতাদেরকে জানাবেন । তবে বিশ্লেষকদের ধারণা , আলোচনা শুরু হওয়ার দিন থেকেই কর্মগ্রুপ বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে থাকবে ।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সর্বেশষ বৈঠকে দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে , আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে দু'পক্ষের শান্তি প্রক্রিয়ার একটি পদক্ষেপ হিসেবে মনে করতে হবে । দু'পক্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের সীমান্ত চূড়ান্তকরণ, জেরুজালেমের অবস্থান , শরনার্থীদের ফিরে আসা এবং ইসরাইলের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে । এ থেকে বোঝা যায় , এক দিকে দু'পক্ষ আলোচনার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে , অন্য দিকে আলোচনায় বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । কেন্দ্রীয় সমস্যার সমাধানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়েরই ছাড় দিতে হবে , যা দু'দেশের জন্যই কঠিন । বর্তমানে দু'দেশের সরকার দুর্বল তবে দেশের অভ্যন্তরীণ চাপও দিন দিন বাড়ছে , তাই সতর্ক না হলে আলোচনা ব্যর্থ হবে ।
সীমান্ত সমস্যায় , ফিলিস্তিন মনে করে , ১৯৬৭ সালে মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধের আগে নির্ধারিত সীমান্তের ভিত্তিতে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের মোট আয়ত্তনের ২ থেকে ৩ শতাংশ ভূমি নিয়ে দু'পক্ষ ভূভাগ বিনিময় করবে । ইসরাইলের উচিত অবিলম্বে ইহুদি আবাসিক এলাকার নির্মাণ বন্ধ করা এবং পশ্চিম তীরের আবাসিক এলাকা থেকে সরে যাওয়া । যাতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের ভূভাগীয় অখন্ডতা নিশ্চিত করা যায় । তবে ইসরাইল আশা করে সীমান্ত নির্ধারণ ও ভূভাগ বিনিময়ের সময় ইহুদিদের বড় আবাসিক এলাকার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে ।
জেরুজালেম সমস্যায় ফিলিস্তিনের অবস্থান হল : পুরোনো শহরসহ গোটা পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী হবে , তবে ১৯৬৭ সালে ইসরাইল মধ্য-প্রাচ্যের তৃতীয় যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর ১৯৮০ সালে এক বিবৃতির মাধ্যমে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্থাপন করার কথা ঘোষণা করা হয় । পূর্ব জেরুজালেম সমস্যায় ইসরাইলের অবস্থান বরাবরই খুব কঠোর ।
শরনার্থী সমস্যায় ফিলিস্তিন মনে করে ইসরাইলের উচিত ফিলিস্তিনী শরনার্থীদের দেশে ফিরে আসার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া । তবে ইসরাইল ইহুদি দেশের জাতীয় বৈশিষ্ট রক্ষা ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে এ সমস্যায় ছাড় দিতে চায় না । উপরোক্ত বিষয় ছাড়া দু'পক্ষের আলোচনায় জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকার নিরাপদ সড়ক নির্মাণ , ফিলিস্তিনের সন্ত্রাস দমন এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষাসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন , যদিও ৮ অক্টোবর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের আলোচনায় দু'পক্ষ কেন্দ্রীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি খোঁজার চেষ্টা করেছে , তার পরও আলোচনা ছিল খুব কঠিন । নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য দু'পক্ষের কেউই সহজে ছাড় দেবে না ।
|