চীনের কমিউনিষ্ট পাটির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস আগামী ১৫ অক্টোবর পেইচিংএ অনুষ্ঠিত হবে। পাচ বছর আগে অর্থাত চীনের কমিউনিষ্ট পাটির ১৬তম জাতীয় কংগ্রেসে " সুষম বিশ্ব" ধারণা উত্থাপিত হয়। এখন এটি চীনের কূটনীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারনায় পরিণত হয়েছে। এই ধারণার আলোকে গত পাঁচ বছরে চীনের কূটনীতিতে বড় বড় সাফল্য এসেছে।
পাচ বছর আগে চীনের কমিউনিষ্ট পাটির ১৬তম জাতীয় কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয় : " বিশ্বের বহুমুখীকরণ তরান্বিত করার জন্যে আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্মলিতভাবেচেষ্টা চালিয়ে যাবো"। চীনের কূটনৈতিক নীতি সম্পর্কে " সুষম" শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরেজাতি সংঘের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও " স্থায়ী, অভিন্ন সমৃদ্ধ ও সুষম বিশ্ব প্রতিষ্ঠা" শীর্ষক একটি ভাষণ দেন। প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও তাঁর এ ভাষণে প্রথম বার " সুষম বিশ্ব" গড়ে তোলার ধারণা উত্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ব্যাখ্যা করে বলেন,
আমাদের পারস্পরিক আস্থা , পারস্পরিক কল্যাণ , সমতা ও সহযোগিতার জন্যে নতুন নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তুলতে হবে। উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যহীন এক বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যে আমাদের সম্মলিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্বজুড়ে সমন্বিত , ভারসাম্যপূর্ণউন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্যে উন্নত দেশগুলোর আরও বেশী দায়িত্ব পালা করা উচিত।
আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলায় চীন " সুষম বিশ্ব" ধারণা অনুশীলণ করে আসছে। চীন আগের চাইতে এখন আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কোরীয় উপ-দ্বীপের পরমাণু কর্মসূচীতে চীন ছয় জাতির বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচীতেও চীন শান্তি-আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্যে অনেককে রাজি করানোর কাজ করেছে। এক কথায়, জাতি সংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে এপেকের শীর্ষ নেতাদের অনানুষ্ঠানিক অধিবেশন পযর্ন্ত, সাংহাই সহযোগিতার আয়োজক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন থেকে চীন-আফ্রো ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন পযর্ন্ত, সন্ত্রাস দমন থেকে জলবায়ু পরিবর্তন পযর্ন্ত বিভিন্ন বিষয়ে চীন সবসময় " সুষম বিশ্ব" ধারণা অনুসরণ করে আসছে।
পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইন্টিটিউটের অধ্যাপক জু ফন মনে করেন, " সুষম বিশ্ব" ধারণাতে চীনের কূটনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
" সুষম বিশ্ব" গড়ে তোলা চীনের কূটনীতি ক্ষেত্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল বড় দেশ হিসেবে চীন একটি শান্তিপূর্ণও স্থিতিশীলবিশ্ব গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
চীনের " সুষম বিশ্বের" ধারণা বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিল কে গুপ্তাবলেছেন,
আমার মরে হয়, সুষম বিশ্বের ধারণা শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের ধারণার মধ্যে কোন পাথর্ক্য নেই। শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন মানে সুষম সম্পর্ক। শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের মর্ম হল উভয়ের বিজয়ের ধারণা। চীনের উন্নয়নে অন্যান্য দেশের কোন পক্ষেরক্ষতি হবে না।
গত মার্চ মাসের ৫ তারিখে চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও সরকারের কার্যবিবরনীতে পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন,
সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা মানে রাজনীতিতে সমতা ও গণতন্ত্র, অর্থনীতিতে পারস্পরিক কল্যাণ ও সহযোগিতা, সংস্কৃতিতে বিনিময়। অবশেষে বিশ্বজুড়ে স্থিতিশীলতা, শান্তি ও অভিন্ন সমৃদ্ধিবাস্তবায়িত । জটিল ও অস্থির আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মুখে আমরা দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অবিচল থাকবে।
|