যদি কেউ বলে , ইরাকের রাজধানী বাগদাদের রাস্তায় হাঁটার সময় বোমা হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা ছাড়াও মার্কিন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী কোম্পানির হামলাও ঠেকাতে হবে । শুনলে কৌতুক মনে হয়, কিন্তু বাস্তব সত্যি । ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে মার্কিন হামলার পর, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী কোম্পানির কর্মীদের নিরীহ লোকদের হত্যা করার ঘটনা বার বার ঘটেছে । মার্কিন 'ব্ল্যাক ওযাটার' কোম্পানির দেহরক্ষী কর্তৃক ১৬ সেপ্টেম্বর বাগদাদে ১১জন নিরীহ ইরাকী হত্যা করার ঘটনা দুঃখজনক অন্য হত্যাশাওগুলোর মধ্যে অন্যতম ।
ব্ল্যাক ওয়াটার কোম্পানি বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় । কয়েক দশকের মধ্যে তা কয়েকজন দেহরক্ষী নিয়ে গঠিত ছোট কোম্পানি থেকে বিশ্বের বৃহত্তম দেহরক্ষী কোম্পানিতে পরিণত হয় । বার্ষিক আয প্রায় ১.২ কোটি মার্কিন ডলার হলেও কোম্পানির অধিকাংশ কর্মীর প্রশিক্ষণের মান খুবই নিচু । মার্কিন জাতীয় কংগ্রেসের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত তিন বছরের মধ্যে এ কোম্পানি ১২২জন সদ্য কারামুক্তকে দেহরক্ষী হিসেবে চাকরি দিয়েছে এবং এ সংখ্যা ইরাকে তার দেহরক্ষীর মোট সংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে । ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ কোম্পানি ইরাকের ১৯৫টি গুলি বিনিময়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং ব্যাপক মাত্রায় অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ১৬০টিরও বেশি ।
১৬ সেপ্টেম্বরের দুঃখজনক ঘটনাটির আগে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষইরাকে এ কোম্পানির নিরীহ লোকদের হত্যা করার ঘটনার প্রতি উদাসীনতা দেখিয়ে এসেছে । কিন্তু এর ভয়াবহতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে , যুক্তরাষ্ট্র ব্ল্যাক ওয়াটারের দোষ স্বীকার করেছে এবং আইন অনুযায়ী কোম্পানিটিকে শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে । ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৫জনের একটি দল ইরাকে পাঠিয়েছে ঘটনা তদন্ত করার জন্য । ১ অক্টোবর এফ.বি.আই ইরাকে একটি দল পাঠিয়ে ব্ল্যাক ওয়াটার দেহরক্ষী কোম্পানির কর্মীদের ব্যাপারে তদন্ত করার কথা ঘোষণা করেছে । ৪ অক্টোবর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের গৃহীত একটি বিলে মার্কিন দেহরক্ষী কোম্পানি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন দেয়া হয়েছে । ৫ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইরাকে মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তার কাজের প্রতি সার্বিক সমন্বয় ও ক্রটিহীন করার কথা ঘোষণা করেছে ।
বিশ্লেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, 'ব্ল্যাক ওয়াটার' ঘটনা শুধু ইরাকে মার্কিন দেহরক্ষীদের নিরীহ লোকদের হত্যা করার ঘটনাগুলোর অন্যতম । এটা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদেরও একটি প্রমাণ । ইরাক দখল করার পর থেকে মার্কিন দখলকারী কর্তৃপক্ষ আইনের প্রণয়ন ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থটাই বড় করে দেখছে এবং সেসব আইন দিয়ে ইরাকের সার্বভৌমত্বের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে । ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর , মার্কিন দখলকারী কর্তৃপক্ষের প্রণয়ন করা ১৭ নম্বর প্রস্তাবে বিদেশী দেহরক্ষী কোম্পানির ইরাকে ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটির সুবিধা দেয়া হয়েছে ।তবে ২০০০ সালে 'বিদেশে মার্কিন দেহরক্ষী কোম্পানি বিশেষ শাসনাধিকার আইন শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন দেহরক্ষী কোম্পানি ও অন্যান্য সামরিক সেবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি দিতে পারে । ইমিউনিটির সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাক ওয়াটার কোম্পানিসহ বিভিন্ন দেহরক্ষী কোম্পানি ইরাকে আইন উপেক্ষা করে নিরীহ লোকদের হত্যা করে যাচ্ছে ।
তা ছাড়া, মার্কিন দখলকারী কর্তৃপক্ষ ইরাকে মার্কিন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী কোম্পানির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও পালন করে নি । নিউজউইক পত্রিকার লেখক মিকেল হার্শ উল্লেখ করেছেন যে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র সকল সামরিক অভিযানে একটি নিয়ম বজায় রাখছে , তা হচ্ছে সকল ইরাকীকে সন্ত্রাসী ভেবে তাদের ওপর হামলা করা বা গ্রেফতার করা । এ ধরনের আধিপতবাদী চিন্তাভাবনা থেকেই মার্কিন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী কোম্পানির কর্মীরা পর্যন্ত ইচ্ছা মতো নিরীহ ইরাকীদের হত্যা করছে । এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায় ব্ল্যাক ওয়াটার ঘটনার নেপথ্যে আসলে খোদ মার্কিন সরকার ।
(ছাও ইয়ান হুয়া)
|