v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-07 19:13:38    
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমির পরিবেশ সুরক্ষা

cri
    ২০০৭ সাল চীনের অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । ফুরেনবেল তৃণভূমি অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত । এই তৃণভূমির ভূমি উর্বর এবং এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয় । মঙ্গোলীয় জাতির একটি লোক সঙ্গীতে বলা হয়েছে , ফুরেনবেল তৃণভূমির আকাশ নীল , হ্রদের পানি স্বচ্ছ এবং তৃণভূমি সবুজ । সংবাদদাতার চোখে এই তৃণভূমি মানবের স্বর্গ বলে গণ্য করা হয় ।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের হৃদয়ে ফুরেনবেল তৃণভূমি অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা বলে অভিহিত করা হয় । এই তৃণভূমিকে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক তৃণভূমি বলা যায় । এই অঞ্চল চীনের বৃহত্তম দূষণমুক্ত খাদ্য উত্পাদনকারী কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

    ফুরেনবেল শহরের হেইলাল অঞ্চলের কৃষি ও পশু পালন ব্যুরোর প্রধান পাকেন বলেন , এখন ফুরেনবেল তৃণভূমির পরিবেশের অবনতি হচ্ছে । একটি পশু পালকের পরিবারে পাকেনের জন্ম । গত ২২ বছরে তিনি কৃষি ও পশু পালন বিষয়ক কাজকর্মে নিয়োজিত হন । বেশ কয়েক বছরে একটানা খরা ও পশুর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফুরেনবেল তৃণভূমির ঘাসের উত্পাদনের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমেছে । আগে প্রতি একর তৃণভূমিতে ১৮০ কিলোগ্রাম ঘাস তৈরী করা হতো । এখন এই পরিমাণ ত্রিশ বত্রিশ কিলোগ্রামে নেমেছে ।

    এই বিষয়ে ফুরেনবেল শহরের তালাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর উপপ্রধান লিউ সুং থাউও এক মত । তিনি বলেন ,

    ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৃণভূমির পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ২০০১ সালের পর তৃণভূমিতে বার্ষিক বর্ষণের পরিমাণ মাত্র ১ শো মিলিমিটারের কাছাকাছি ছিল । তৃণভূমি বিলুপ্তির দিকে চলছিল ।

    তৃণভূমির একজন পশুপালক হোবিসগারাতু সংবাদদাতাকে বলেন , তৃণভূমি দেখতে সবুজ ও তকতকে । কিন্তু পশুদের খাওয়ানোর জন্য ঘাসের রকমারিতা অনেক কমেছে । তিনি বলেন ,

    গত কয়েক বছর একটানা খরা হওয়ায় গরু ও ছাগল দীর্ঘকাল ধরে বাধ্যতামূলকভাবে খড় খেতো । ফলে গ্রীষ্মকাল ও শরত্কালে গরু ও ছাগলের চর্বি একটুও বাড়ে নি । সুতরাং তৃণভূমি সুরক্ষা করা , মরু বিস্তার রোধ করা এবং কৃষি জমির পরিবর্তে তৃণাঞ্চল আবার গড়ে তোলা একটি বড় কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    তিনি বলেন , ফুরেনবেল স্থানীয় সরকার তৃণভূমি সুরক্ষা এবং সুষ্ঠু পরিবেশের আবার গড়ে তোলাকে প্রধান কাজ বলে মনে করে । গত কয়েক বছরে তৃণভূমি সুরক্ষার জন্য এই অঞ্চলে পশু পালন খামারের পরিবর্তে তৃণাঞ্চল আবার গড়ে তোলাসহ পশু'র সংখ্যা কমানোর ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে । স্থানীয় কৃষি ও পশু পালন ব্যুরোর পরিচালক পাকেন বলেন ,

    ফুরেনবেল তৃণভূমিতে পশু'র সংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি ছিল । এখন স্থানীয় সরকার প্রতি বছর তা ১০ লাখ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এক হেক্টর উন্নত মানের তৃণভূমিতে বছরে মাত্র একটি ছাগলের ঘাস খাওয়ার জন্য সরবরাহ করা যায় । ১০ লাখ ছাগল কমালে ১ শো হেক্টর তৃণভূমি সুরক্ষা করা যাবে । কিন্তু পশুপালকদের জীবন ও উপার্জন তৃণভূমির ওপর নির্ভর করে । তৃণভূমিতে পশু'র সংখ্যা কমানোর ফলে পশুপালকদের আয়ও কমে যাবে । এই ক্ষতি পূরণের জন্য স্থানীয় সরকার অন্যান্য ব্যবস্থার কথাও বিবেচনা করেছে ।

    ৫২ বছর বয়স্ক উ ছাং সেন তৃণভূমির একজন পশুপালক । ২০০১ সালে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে লবণাক্ত ও ক্ষারযুক্ত ভূমি সংস্কারের কাজ শুরু হয় । ৮০ বর্গ কিলোমিটারের এক অঞ্চলে ৩৫টি দুধেল গাই খামার গড়ে তোলা হয় । প্রতিটি দুধেল গাই খামারের এক দশমাংশের জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয় । দুধেল গাই'র খাবার হিসেবে ভুট্টা বেশি দিন সুরক্ষণ করা যায় । সেজন্য শীতকালে দুধেল গাই'র জন্যও পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা যায় । এই ধরনের ঘরোয়া পশু পালন খামার গড়ে তোলায় যেমন পশু'র সুষ্ঠু পালনের জন্য অনুকূল , তেমনি তাতে তৃণভূমির পরিবেশের অবনতি হবে না ।

    উ ছাং সেন বলেন , এই ধরনের ঘরোয়া পশু পালন খামার গড়ে তোলার গোড়ার দিকে পশু পালকদের গড়পড়তা বার্ষিক আয় মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার ইউয়ান ছিল । উত্কৃষ্ট দুধেল গাই পালনের ফলে দিনে প্রতিটি দুধেল গাই'র দুধ উত্পাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই শো কিলোগ্রামে । পশু পালকরা ১২ হাজার ইউয়ান মাসিক মাথাপিছু আয় করেছেন ।

    পশুপালক পাইয়ার্তু বলেন , তৃণভূমি সংরক্ষণের জন্য এই অঞ্চলে ছাগলের চর্বি বাড়ানো এবং তাদের যথা সময় বিক্রি করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ।

    ঐতিহ্যবাহী ধারনার দিক থেকে গরু ও ছাগল পশু পালকদের স্থির সম্পত্তি বলা যায় । তা ইচ্ছাকৃতভাবে বিক্রি করা যেতো না । ছাগল তিন থেকে চার বছর বয়সে বিক্রি করা যেতো । শীতকালে ছাগলের ওজন ৩৫ থেকে ৪০ কিলোগ্রামে দাঁড়ায় । কিন্তু বসন্তকালে তার চর্বি এক তৃতীয়াংশ কমে যায় । ছাগলের ওজন যাতে আগের মতো পুনরুদ্ধার হয় , সেজন্য কমপক্ষে এক বছর সময়ের প্রয়োজন । সুতরাং শীতকালের আগে ছাগলকে বিক্রি করার জন্য স্থানীয় সরকার পশু পালকদের উত্সাহ দেয় । এতে যেমন ছাগলের মাংস আরো কচি ও সুস্বাদু এবং বেশি দামে বিক্রি করা যায় , তেমনি ছাগল খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার্য আরো বেশি ঘাস সংরক্ষণ করা যায় ।

    এ কয়েকটি নতুন ব্যবস্থা নেয়ার আগে তৃণভূমির মরুকরণের গতি বছরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ করে বাড়তো । গত কয়েক বছরে নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে তৃণভূমিতে মরুকরণ বিস্তৃতির প্রবণতা রোধ করা হয়েছে । আগে তৃণভূমির যে সব জায়গার মরুকরণ হয়েছে , সে সব জায়গার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে ।

    এর পাশাপাশি কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলের নগরায়ন বাস্তবায়ন এবং শহরে চাকরি করার জন্য স্থানীয় সরকার পশু পালকদের উত্সাহ দিচ্ছে । ফলে তৃণভূমির পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । নতুন গ্রামাঞ্চল গড়ে তোলা সংক্রান্ত চীন সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে খাপ খাওয়ার জন্য এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে । এ বছর অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার হাইলার অঞ্চলে ৬০টি গ্রামীণ প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । (লিলি)