ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রী ওলমার্ট ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জেরুজালেমে এক বৈঠক হয়েছে। দু'জনের মধ্যে আগামী নভেম্বার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রকাশিতব্য যৌথ দলিলপত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এটা হল দু'পক্ষের ষষ্ঠ বৈঠক। যদিও দু'পক্ষের মধ্যে যৌথ দলিলপত্রের সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতৈক্য হয়নি, তবু্ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবারের বৈঠক দু'পক্ষের ভবিষ্যত শান্তি-আলোচনার জন্যে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
প্রথমতঃ আগামী নভেম্বারে অনুষ্ঠেয় মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ব্যাপারে দু'পক্ষের মনোভাব প্রায় একই। বতর্মানে জেরুজালেমের অবস্থান, ফিলিস্তিনের সীমান্ত রেখা, ফিলিস্তানীফিলিস্তিণী শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে ইহুদীদের বসতির স্থাপনমোকাবেলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে দু'পক্ষের
মধ্যে বিরাট মতভেদ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দু'পক্ষ উপলদ্ধি করেছে যে, মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘনিয়ে আসছে বলে এই অল্প সময়ের মধ্যে দু'পক্ষের মধ্যে উপযুক্ত সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা প্রায়অসম্ভব। দু'পক্ষের মধ্যে একটি স্থায়ীচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া তো আরও দূরের কথা। সুতরাং দু'পক্ষ এক মত হয়েছে যে, আগামী নভেম্বারের সম্মেলনকে দু'পক্ষের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার একটি পদক্ষেপ মনে করা উচিত। ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী নভেম্বারের সম্মেলন শেষ হওয়ার পর দু'পক্ষের মধ্যে পুনরায় উপযুক্তবিষয়ে নিয়ে উন্মুক্তআলোচনা হবে। বিশ্লেষকরা বলেন , এ মনোভাবের ফলে ভবিষ্যতে আলোচনায় দু' পক্ষ আরও বাস্তব কৌশল গ্রহণ করবে। ধাপে ধাপে দু'পক্ষের মধ্যে মতভেত দূরীভূত হবে এবং যৌথ দলিলপত্র প্রকাশিত হবে।
দ্বিতীয়তঃদু'পক্ষের নেতারা এবারের বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। দু'পক্ষই আলাদ আলাদাভাবে আলোচনার কর্ম গ্রুপ গড়ে তুলেছে। এর আগে কেবল ওলমার্ট ও মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে কয়েক বার বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু এবারের বৈঠক চলাকালে ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের মহা সচিব ইয়োরাম তুরবোভিজ, প্রধান মন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সালম তুরগেমান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ নেতা আহারন আবরামোভিছকে নিয়ে গঠিত ইসরাইলের আলোচক গ্রুপ এবং ফিলিস্তিনের প্রধান আলোচনা প্রতিনিধি সায়ীব এরেকাত , সাবেক প্রধান মন্ত্রী আহমেদ কুরেইয়া এবং আব্বাসের উচ্চ পদস্থ সহকারী ইয়াসের আবেদ রাবোকে নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনের আলোচক গ্রুপের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। দু'পক্ষের এ গ্রুপের মধ্যে যৌথ দলিলপত্রের প্রণয়ন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, দু'পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা ছাড়া, দু'পক্ষের কর্ম গ্রুপের মধ্যে বিস্তারিত সারর্গভ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
এর পাশাপাশি বিশ্লেষকরাবলেছেন, যদিও এবারের বৈঠক দু'পক্ষের ভবিষ্যত শান্তি-আলোচনার জন্যে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তবু ছ'দফা বৈঠকের পরও, কোন কোন মৌলিকসমস্যায় দু'পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান মৌলিক মতভেদ দূরীভূত হয়নি। সুতরাং আগামী নভেম্বারে অনুষ্ঠেয় মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন খুব একটা আশাব্যঞ্জক হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বৈঠকের আগে ফিলিস্তিনের শীর্ষ আলোচনা প্রতিনিধি সায়ীব এরেকাত ও একজন ইসরাইলী উচ্চ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, ভবিষ্যত আলোচনার পথ সুগম না হলেও দু'পক্ষের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এতক্ষণ আজকের প্রতিবেদনটি শুনলেন।
|