সম্প্রতি উত্তরপূর্ব চীনের ছাং ছুন শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিষয়ক ষষ্ঠ "চীনা ভাষার সেতু" নামক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ৫২টি দেশের এক শোরও বেশি বিদেশী ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছেন। তাঁরা সুষ্ঠুভাবে সুন্দর উচ্চারণে চীনা ভাষা বলতে পারেন। তাঁরা চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং চীনের পাহাড় ও নদী সম্পর্কে তাদের লব্ধ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁরা চীনের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো ভালোভাবে প্রদর্শন করেছেন। যেমন চীনের কুংফু ,ছবি, কবি ও ঐতিহ্যিক বিষয়সমূহ। আজকের অনুষ্ঠানে আপনারা এসব বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শেখার গল্প শুনবেন।
চীনা ভাষা বিষয়ক ষষ্ঠ "চীনা ভাষার সেতু" নামক প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লাওসের একজন তরুণ থিপাপন বুনয়াভং খুব জনপ্রিয়। তাঁর রয়েছে ভালো উচ্চারণের দক্ষতা তাঁর চীনা নাম হচ্ছে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ। তাঁর চীনা নাম ও চীনের একজন সুবিখ্যাত অভিনেতার নাম একই। তিনি সাংবাদিককে এই চীনা নামের একটি ছোট গল্প বলেছেন।
আমার চীনা নাম লিউ দি হুয়া। আমার মা এই নাম আমাকে দিয়েছেন।কারণ আমার মা চীনের বিখ্যাত অভিনেতা লিউ দি হুয়াকে খুব পছন্দ করেন। তাই আমাকে চীনা ভাষা শিখাতে চান।
ছোট বেলায় এই তরুণের চীনা ভাষা শেখা পছন্দের ছিল না। কারণ তিনি মনে করেন, চীনা ভাষা খুব কঠিন। তবে একটি সুন্দর চীনা মেয়ের কারণে তিনি চীনা ভাষা ও চীনের অনুভব পরিবর্তন করেছেন।
এক দিন আমার ক্লাসে একটি সুন্দরী চীনা মেয়ে আসে। সে লাওসের ভাষা বলতে পারে না। আমার চীনা ভাষাও ভালো নয়। তাই আমি চীনা ভাষা শেখার প্রচেষ্টা চালাতাম। শুধু এই সুন্দর মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে চাই।
তবে থিপাপন বুনয়াভং চীনা ভাষা সুষ্ঠুভাবে বলতে পারার সময় এই মেয়েটি আমাকে ত্যাগ করেছে। যদিও লিউ দি হুয়া খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তারপর তিনি চীনা ভাষা সম্পর্কে খুব আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি চীনা ভাষা বিভাগ বাছাই করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে চীনা ভাষা খুব বাস্তব।
এখন বিভিন্ন দেশে চীনারা থাকেন। লাওসেও অনেক বেশি চীনা রয়েছে। চীনা ভাষা ভালোভাবে শিখলে স্নাতক হবার পর চীনাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবো বা চীনা ভাষার অনুবাদকে পরিণত হবে। এর পাশাপাশি মাসে বেশি বেতন পাবো।
বর্তমানে চীনা ভাষা শেখার লোক সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। এরমধ্যে লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ চীনের কাছাকাছি দেশগুলোর অধ্যায়নকারীর সংখ্যা বলতে গেলে বেশি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এসব দেশের সংস্কৃতি এবং চীনের সংস্কৃতির মধ্যে মিল রয়েছে। এর পাশাপাশি তাদের চীনের সঙ্গে বিনিময়ও বেশি। সুতরাং এসব দেশের জন্য চীনা ভাষা শেখা খুব জনপ্রিয়।
চীনা ভাষা শেখা লোকের মধ্যে বেশির ভাগই চাকরি পাওয়ার চিন্তা করে না। তারা শুধু চীনা ভাষা, চীনের সংস্কৃতি ও চীনের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী। জাপান থেকে আসা অংশগ্রহণকারী তানিকুছি হারুনা তাদের মধ্যে একজন।
চীনা ভাষা প্রথম শুনার সময় থেকেই আমি মনে করি খুব সুন্দর। তারপর আমি চীনা ভাষা শিখছি।
জাপানী মেয়ে তানিকুছি হারুনা
জাপানের এই মেয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চীনে স্বল্প-মেয়াদী শিক্ষা গ্রহণের স্কলারশীপ পেয়েছেন। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীনে আসার আরো বেশি সুযোগ তিনি পাবেন। যাতে চীনের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা যায়। তিনি সাংবাদিককে বলেছেন, বর্তমানে জাপানে চীনা ভাষা শিখার আগ্রহীর সংখ্যা বেশি। জাপানের অনেক মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষার কোর্স চালু হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় দু'শো বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা কোর্স চালু হয়েছে। চীনা ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। ভিয়েতনামে চীনা ভাষা ইংরেজী ছাড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশী ভাষায় পরিণত হয়েছে।
চীনের বিশ্বমুখীনতা আরো সম্প্রসারিত হওয়া এবং অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নের কারণে চীন ও বিশ্বের বিনিময় ও যোগাযোগ আরো গভীর হচ্ছে। চীনা ভাষা বিভিন্ন দেশের জনগণকে চীনকে জানার গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোর জনগণের খুবই পছন্দের।
জাপানের তানিকুছি হারুনা ও ভিয়েতনামের থিপাপন বুনয়াভং চীনা ভাষা শেখা তিন কোটিরও বেশি বিদেশী অনুরাগীদের দু'জন মাত্র । দ্রুত উন্নয়নের অর্থনীতি ও দীর্ঘকালীন সংস্কৃতির মাধ্যমে চীন বিশ্বের আরো বেশি বিদেশীকে চীনা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে আকৃষ্ট করছে। (লি লু)
|