v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-29 20:49:00    
গবাদি পশুপালন এলাকার নারীদের জীবনযাত্রা

cri

    অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তৃণভূমিতে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে অনেকে পশু পালন করে সংসার চালান । বাড়িতে পারিবারিক কাজ ছাড়াও মহিলারা পশু পালন কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছেন ।

    প্রথমে তোইয়ার কথা বলা যাক । তোইয়া ৩০ বছর বয়সী সুন্দরী ও লাজুক মেয়ে । পশু পালন এলাকার সব কিছু এবং তার প্রতি দিনের জীবন সম্পর্কে জানতে আমরা খুব আগ্রহী । হান ভাষা বলতে পারলেও তিনি আমাদের কৌতুহল পূরণ করার জন্য মঙ্গোলিয় ভাষায় উত্তর দেন যে ,প্রতিদিন সকাল ৫টায় আমি ঘুম থেকে উঠি, তার পর পরিবারের সবাইর জন্য দুধ-কেক সহ নানা খাবার তৈরী করি । দিনে দু ঘন্টা অন্তরএকবার মোট ৬'বার ঘোড়ার দুধ দোহন করি ।

    তোইয়া বলেন, বিয়ের আগেই এই সব পারিবারিক কাজ করতে তিনি অভ্যাস্তহয়েছেন । এখন এই সব কাজ ছাড়াও তিনি ৬ বছর বয়সী ছেলেকে দেখাশোনার কাজ করেন ।

    অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তৃণভূমিতে তোইয়ার মতো হাজার হাজার নারী রয়েছে । সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গোলিয় জাতির অধিক থেকে অধিকতর নারী পশু পালন এলাকার উত্পাদনে যোগ দেন । অনেকে অন্য কাজেও সাফল্য অর্জন করেছেন । আর্তেন পাওলিক্যকা গ্রামের পরিচালক ও চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির শাখা কমিটির সম্পাদক দুজনই নারী জেনে আমরা তাদের সাক্ষাত্কার নিয়েছি ।

    এই গ্রামের পরিচালকের নাম আরর্তেন কারিলা । তার বয়স মাত্র ৩০ বছর । তিনি বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানান । আমরা আর্তেন কারিলার তাবুতে প্রবেশ করি । মালিকের টেবিলে চীজ কেক , চীজ এবং দুধ-চা সহ নানা সুস্বাদু দুদ্ধজাতখাবার রাখা আছে । তিনি বলেন , এই সব খাবার তারা নিজেরাই তৈরী করেছেন ।

    আর্তেন কারিলার পরিবারে মোট ৫জন আছে । স্বামী-স্ত্রী দুজন ছাড়া , শ্বশুড়-শাশুড়ি এবং একটি আড়াই বছর বয়সী ছেলে । লোকসংখ্যা অনুসারে তাদের পরিবার ৬৮০ হেক্টর তৃণক্ষেত্র পেয়েছে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন ,আমাদের গ্রামে গড়পরতা প্রতি লোক ১৪৬ হেক্টর তৃণক্ষেত্র পায় । লোকসংখ্যা অনুযায়ী ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সাল গবাদি পশু এবং ১৯৯১ সাল তৃণক্ষেত্র বন্টন করা হয় ।

    তৃণক্ষেত্র বন্টন করার পর এখানকার পশু পালকদের জীবনযাত্রারঅনেক উন্নতি হয়েছে । গ্রামের পরিচালক বলেন, আমাদের জীবনযাত্রারস্পষ্ট পরিবর্তন হয়েছে । আগে যে আয় হতো তার সবই ছিল গ্রামের । আমরা সবাই গ্রাম থেকে বেতন নিতাম । এখন উত্পাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যে আয় হয় তা সবই আমাদের নিজের ।

    আর্তেন কারিলার বাড়িতে ৪০০ ভেড়া ও ২০০ গরু আছে । তারা গরু ও ভেড়ার লোম বিক্রি করে বছরে প্রায় এক লাখ ইউয়ান পায় । স্থানীয় অঞ্চলে তাদের আর্থিক অবস্থা এখন মধ্য পর্যায়ের ওপর ।

    আবহাওয়া ও পানি পশু পালকদের আয়ের ওপর প্রভাব ফেলা সরাসরি দুটি উপাদান ।খরা ঋতুতে পশুগুলোর খাওয়ার পানির সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকের বাড়িতে কূপ খনন করা হয়েছে ।কূপ খননের শতকরা ৬০ শতাংশ খরচ সরকার দেয় । দশ-বারো হাজার ইউয়ান ব্যয় করে একশ মিটার গভীর কূপ করা যায় । নিজের তৃণক্ষেত্র রক্ষা করা আর্তেন কারিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ । গ্রামের পরিচালক ও একজন পার্টি সদস্য হিসেবে আর্তেন কারিলা দুই গরিব পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে পশু পালন করেন । তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে পার্টি সদস্যকে দু-একটি গরিব পরিবারকে সঙ্গে নিতে হবে । কোনো কোনো পরিবার ভালভাবে পশু পালন করতে পারে না । অলস বা অন্য কোনো কারণে তাদের আর্থিক অবস্থা মন্দ হয় ।

    আর্তেন কারিলার স্বামী গ্রামের সাবেক পরিচালক ছিলেন । গ্রামবাসীদের নির্বাচনে আর্তেন কারিলা তার স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে গ্রামের নতুন পরিচালক হয়েছেন । গ্রামীণ পরিচালক আর্তেন কারিলার বাড়িতে অতিথি এসেছেন খবর শুনে পার্টির শাখা কমিটির সম্পাদক উরেন কারিলা এসেছেন । দেখতে উরেন কারিলা ৪০-৫০ বছর বয়সের মতো । তিনি অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল ও আন্তরিকতাপূর্ণ মানুষ । তিনি চমত্কারভাবে গান গাইতে পারেন । অতিথির অনুরোধে তিনি মঙ্গোলিয়া জাতির একটি বিখ্যাত গান শুনিয়েছেন । ২০০৩ সালে উরেন কারিলা গ্রামে পার্টির শাখা কমিটির সম্পাদক হন । এর আগে তিনি গ্রামের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন , সে সময় স্কুল বয়সী কম ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করত । আমাদের প্রধান কাজ হল নারীদেরকে তাদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পরামর্শ করে দেয়া । এখন সবাইর চিন্তাধারারপরিবর্তন হয়েছে । গ্রামের অধিক থেকে অধিকতর ছেলেমেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করছে । বিগত দু-এক বছরে আমাদের গ্রামে তিনজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । এ ছাড়া নারী ফেডারেশন নারীকে উত্পাদন ও জীবনযাত্রা সম্পর্কেও পরামর্শ দেয় । এখন অধিক থেকে অধিকতর মহিলা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গৃহপশু পালন করছেন । উত্পাদন ও পারিবারিক জীবনযাত্রায় নারীদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

    উরেন কারিলা বলেন, পশু পালন এলাকায় নারীরা খুব বেশি কাজ করতেন । তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত । কিন্তু পুরুষরা খুব কম কাজ করতেন । তারা বেশি আমোদপ্রমোদ করতেন । এখন এই অবস্থারপরিবর্তন হয়েছে । নারীরা নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন । অনেকে কুস্তি, শুটিং বা অশ্ব প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করেন । দুদ্ধজাতদ্রব্য বানান এবং সেলাই প্রতিযোগিতায় নারীরা নিজেদের দক্ষতা চমত্কারভাবে দেখিয়েছেন ।