ইরাকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, সুন্নী সম্প্রদায়ের নেতা তারিক আল-হাশেমি এবং ইরাকে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানি ২৭ সেপ্টেম্বর নাজাফে মিলিত হয়েছেন। দু'পক্ষ ইরাকের জাতীয় পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে নি। ইরাকের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তাই জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়ন সহজ ব্যাপার না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ইরাকে একটানা ধর্মীয় সংঘর্ষে বিপুলসংখ্যক লোক হতাহত হয়েছে। হাশেমি ও সিস্তানির এবারের সাক্ষাত্ জাতীয় পুনর্মিলন সমস্যায় ইরাক সরকার এবং ধর্মীয় ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে মনে করা হয়। বর্তমানে ইরাকের ধর্মীয় সংঘর্ষ ইরাক সরকারের সম্মুখীন একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিয়াও সুন্নী সম্প্রদায় এবং কুর্দিশী নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য পারস্পরিক ত্যাগ থেকে এখন বিচ্যুত। ইরাক সরকারের অবস্থা সংকটপন্ন। চলতি বছর ৪০জন মন্ত্রী নিয়ে গঠিত ইরাক সরকারের মধ্যে পর পর ১৭জন মন্ত্রী পদ ত্যাগ করেছেন। এখন শুধু ২৩জন মন্ত্রী কাজ যাচ্ছেন। জাতীয় সংহতি সরকার শুধু মাত্র এ একটি নাম।
জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়নে মালিকি সরকারকে ইরাকের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা ভোগ করা হচ্ছে। শিয়া, সুন্নী সম্প্রদায় ও কুর্দিশী জাতীয় সমালোচনা সইতে হচ্ছে। পুনর্মিলন বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে মালিকি সরকার অসমর্থ্য।
২১ আগস্ট, কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক পার্টি, পাট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান ও শিয়া সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ পরিষদ ডাওয়া পার্টির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। নতুন রাজনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে জাতীয় পুনর্মিলনের প্রক্রিয়াকে ত্বারান্বিত করা যায়। চলতি মাসের ২১ তারিখে মালিকি 'অ্যাকর্ড্যান্স ফ্রন্ট' উত্থাপিত রাজনৈতিক দাবি অনুযায়ী গবেষণা করতে রাজী হয়েছেন। এখন হাশেমি ও সিস্তানি বৈঠকে বসেছেন। এর ফলে ইরাকের বিভিন্ন দলের জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়নের চেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে।
ইরাকের চলতে থাকা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ যোগাযোগের কারণ রয়েছে।
ইরাকের অভ্যন্তরে, সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাসীন সময়পর্বেও বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল। ইরাকে শিয়া সম্প্রদায়ের লোক বেশী। কিন্তু সাদ্দামের সময় অল্পসংখ্যক সুন্নী সম্প্রদায় ক্ষমতাসীন ছিলো। ফলে অল্পসংখ্যক সুন্নীকরা প্রশাসন চালিয়েছে। এর পাশাপাশি, শিয়া সম্প্রদায় ও কুর্দিশের অনেক নেতাদের নির্যাতন করা হয়েছে এবং তারা বিদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। ইরাক যুদ্ধ সাদ্দমের ক্ষমতাসীন সময়পর্বের রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙ্গে দিয়েছে। দীর্ঘকাল প্রশাসনে থাকা সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের আগের অবস্থান, ক্ষমতা ও ধনসম্পদ হারিয়েছে। এখন শিয়া সম্প্রদায় ও কুর্দিশরা প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। প্রশাসনের পরিবর্তনে স্বার্থের পরিবর্তনও ডেকে এনেছে। ফলে ইরাকের বিভিন্ন ধর্মীয় পন্থীদের সংঘর্ষ ও জাতীয় দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়েছে এবং ইরাকের জাতীয় পুনর্মিলনে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
বিদেশি শক্তিরা তাদের নিজেদের স্বার্থে ইরাকের ধর্মীয় সংঘর্ষকে আরো উষ্কে দিচ্ছে। ২৬ সেপ্টেম্বর, মার্কিন সিনেটে গৃহীত ইরাক সমস্যা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুরোপুরিভাবে ধর্মীয় সংঘর্ষের সমাধান এবং পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও ধর্মীয় দিক অনুযায়ী, ইরাককে তিনটি অংশে বিশেষ করে কুর্দিশ, শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ে বিভক্ত করা উচিত। রাজধানী বাগদাদের ফেডারেশন সরকার শুধু ইরাকের তেলের আয়ের দিকটি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বিশ্লেষকগণ উল্লেখ করেছেন, মার্কিন সিনেটের এই প্রস্তাব আসলে ইরাকের অঙ্গ ছেদ করার প্রস্তাব। তা ইরাকের ধর্মীয় সংঘর্ষকে আরো উষ্কে দিয়েছে।
বিশ্লেষকগণ আরো উল্লেখ করেছেন যে, বহু বছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ধর্মীয় সংঘর্ষ শেষ না হলে, ইরাকের জাতীয় পুনর্মিলন এবং দেশের শান্তি বাস্তবায়িত হবে না। সুতরাং বিভিন্ন রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের ইরাক ও ইরাকী জনগণের কথা বিবেচনা করা এবং বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়নের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
|