প্রতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর হচ্ছে চীনের শিক্ষক দিবস। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন কার্যকরভাবে শিক্ষক, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের নিয়ে এই দলের নির্মাণ জোরদার করছে। ফলে গ্রামাঞ্চলের দূর্বল শিক্ষকদের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে এবং শিক্ষাদানের গুণগত মানও অব্যাহতভাবে বেড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভবিষ্যতে সরকার গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে চীনের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকদের অবস্থা বরাবরই দুর্বল ছিল। বিশেষ করে বিদেশী ভাষা, তথ্য প্রযুক্তি, সঙ্গীত ও শিল্পকলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। শিক্ষাদানের গুণগত মানের আরো উন্নত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের বেতন এবং জীবন-যাপনের মানও নিম্ন পর্যায়ের। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার ধারাবাহিক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বেছে নিয়ে গ্রামাঞ্চলে পালাক্রমে শিক্ষাদান করা এবং গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য নানা ধরণের প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করা প্রভৃতি।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা বিষয়ক বিভাগের মহা-পরিচালক কুয়ান পেইচুন সংবাদদাতাকে বলেছেন,
গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন আরো বাড়ানো, তাঁদের জীবন-যাপন ও কর্মের সুযোগের উন্নয়ন করা এবং গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের এই পেশার আকর্ষণীয় শক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তিকে বাড়ানোর মাধ্যমে আরো বেশী শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদকে আকর্ষণ করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষাদান করা হচ্ছে আমাদের প্রচেষ্টার একটি উদ্দেশ্য।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করা শিক্ষকদের শিক্ষার হার হচ্ছে ৯৮শতাংশ, ৯৪ শতাংশ এবং ৭৫শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাই শিক্ষকের অনুপাতও বিপুলভাবে বেড়েছে।
পাশাপাশি সরকার পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিশেষ শিক্ষকের পদ নির্মাণ করেছে। যাতে পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামে শিক্ষাদানের জন্য বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্নাতকদের অনুপ্রেরণা দেয়া যায়। এ পর্যন্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের মোট ২০ হাজারেরও বেশী স্নাতক পশ্চিমাঞ্চলের ২৮০০ টিরও বেশী স্কুলে চাকরি করেছেন। এটি বিপুলভাবে পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামে শিক্ষকের অভাব জনিত অবস্থা পরিবর্তণ করেছে।
বর্তমানে চীনের গ্রামাঞ্চলে অনেক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রয়েছে। শিক্ষকের শক্তিও স্পষ্টভাবেই বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর শিক্ষক দিবসের আগে সারা দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রশংসার মধ্যে গ্রাম থেকে আসা শিক্ষকদের সংখ্যাও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শ্যানসি প্রদেশের একটি গ্রামীণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদার্থবিদ শিক্ষাদান করা ইয়াং সিয়াওশেং হচ্ছেন এ বছরে প্রশংসা পাওয়া একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। ২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি মনযোগ দিয়ে পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রের সংস্কারের ব্যাপারে গবেষণা করে আসছেন এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনভাবে বিবেচনা করার ক্ষমতা প্রশিক্ষণ করছেন। তিনি বলেছেন,
আসলে পদার্থবিদ্যার জ্ঞান বিমূর্ত। শুধু বই থেকে শিক্ষাদান করলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে মনে রাখা জ্ঞান ক্লাস শেষের পর সম্ভবতঃ ভুলে যাবে। এই ভাবে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। পদার্থবিদ্যা হচ্ছে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান নয়, এটিও একটি জীবনমূলক বিজ্ঞান। তাই আমি জীবনের বাস্তবতা থেকে প্রশ্ন করি, ছাত্রছাত্রীরা নিজেই বিশ্লেষন করে পদার্থবিদ জ্ঞান হস্তগত করবে। এ ভাবে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার সময় মজা পেতে পারে।
ইয়াং সিয়াওশেং-এর প্রাণবন্ত এবং উদ্দীপনাময় শিক্ষার উপায় খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে। তা ছাড়াও, ছাত্রছাত্রীদের মনস্তত্ত্ব ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষাদান এবং যত্ন নেয়ায় অনেক সুফল অর্জিত হয়েছে। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ ইন্টারন্যাটের আসক্ত হন। তিনি খোশগল্প করাসহ বিভিন্ন উপায়ে এসব ছাত্রছাত্রীদেরকে খারাপ উপবেসন থেকে মুক্ত করেছেন। তাঁরা লেখাপড়াকে ঘৃণা করার পরিবর্তে ধাপে ধাপে লেখাপড়াকে পছন্দ করতে শুরু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ব বিদ্যালয়েও ভর্তি হয়েছেন।
সাক্ষাত্কালে সংবাদদাতা জানতে পারেন যে, বর্তমানে চীন গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকের জন্য নানা ধরণের ক্ষেত্রে নির্মাণ জোরদার করছে। প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও সম্প্রতি বলেছেন, চীন গ্রামীণ শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত দলের নির্মাণ জোরদারের উপর উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্ব দেবে, শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদকে শিক্ষা কাজে নিযুক্ত করবে এবং যুবক-যুবতীদেরকে গ্রামাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জায়গায় গিয়ে শিক্ষাদানের অনুপ্রেরণা দেবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাকে সহায়তার জন্য ১৮ হাজার বিশেষ শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করবে। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ফি ক্ষেত্রে আরো বেশী বরাদ্দ দেবে এবং গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের নতুন প্রশিক্ষণ প্রকল্প কার্যকর করবে। যাতে এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। (লিলি)
|