চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি--চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেস অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা , চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসে গত ত্রিশ বছরে চীনের সংস্কার অভিযানে অর্জিত অভিজ্ঞতার সারসংকলন করা হবে এবং বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন ও সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে । এ কংগ্রেস চীনের পরবর্তীকালের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে ।
চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার অনুষ্ঠিত হয় । চীনের সংস্কার অভিযানের ত্রিশতম বার্ষিকীর প্রাক্কালে চীনের সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে । চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ইতিহাস গবেষণা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর তাই ইয়েন চুন বলেছেন , চীনের সংস্কার অভিযানে সঞ্চয় করা মূল্যবান অভিজ্ঞতাগুলো মনোযোগের সঙ্গে সারসংকলন করা উচিত । এ ছাড়া , ষষ্ঠদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর পাঁচ বছরে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃবৃন্দ যে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত চিন্তাধারা পেশ করেছেন , তা' চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির গঠনকাজে ও সমাজের প্রসার তরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে । কাজেই সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণতাত্পর্য রয়েছে ।
চীনের সংস্কার অভিযানে সর্বজনবিদীত সাফল্য অর্জিত হয়েছে । ২০০২ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ষষ্ঠদশ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চীনের মাথাপিছু জি ডি পি এক হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে । চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সংস্কার অভিযান দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে । কিন্তু সমাজের সম্প্রীতিময় বিকাশ ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে । যেমন শহর ও গ্রামের উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা , পরিবেশ সংরক্ষণ সমস্যা এবং গরীব ও ধনীদের অতিরিক্ত ব্যবধান ।
এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ২০০৩ সালে বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নের চিন্তাধারা পেশ করেছে । এ চিন্তাধারার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণের ওপর যথেষ্ট গুরু ত্ব দিয়ে সার্বিক ও টেকসই উন্নয়নের পথ ধরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে তরান্বিত করা । চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি সংস্কার অভিযানের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞাসসম্মত উন্নয়নের প্রস্তাব পেশ করেছে । এতে উন্নয়ন সম্পর্কে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির নতুন উপলব্ধি প্রতিফলিত হয়েছে । ২০০৪ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি আবার সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেছে এবং ২০০৬ সালে পুনরায় প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে সমাতান্ত্রিক সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার কর্তব্য দায়িত্ব সম্পন্ন করবে ।
এ বছরের ৭ মার্চ চীনের কমিউনিষ্ট পার্টিরকেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হু চিন থাও বলেছেন , জনসাধারণের অবস্থান ও সৃজনী শক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে , জনসাধারণের উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তিকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হবে এবং তাদের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করতে হবে ।
গত কয়েক বছর ধরে চীন জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য চীন সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । শহরাঞ্চলে নতুন চাকরী পাওয়া শ্রমিক সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে । গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের সব ফি মৌকুফ করা হয়েছে । গরীব পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা সরকারের অতিরিক্ত ভর্তুকি পায় । এতে গ্রামাঞ্চলের ১৫ কোটি ছাত্রছাত্রী উপকৃত হয়েছে । ২০০৭ সালে চীনের ৮০ শতাংশ জেলায় নতুন ধরনের গ্রামীন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিদ্যালয়ের প্রফেসর উ চুন ফা বলেছেন , চীন এখন উন্নয়নের এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে । এ পর্যায়ে অনেক নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে । বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন পদ্ধতি ও সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার চিন্তাধারা এ সব নতুন ব্যবস্থার তাত্ত্বিক ভিত্তি হবে ।
|