ইরানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কুর্দিস্তান প্রদেশের গভর্নর ঈসমাইল নাজার ২৪ সেপ্টেম্বর গণ মাধ্যমকে বলেছেন যে, এদিন ইরান ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দিশ অঞ্চল সংলগ্ন সকল পাঁচটি স্থলবন্দর সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ইরাকে মার্কিন বাহিনী ২০ সেপ্টেম্বর মাহমুদি ফারহাদি নামের একজন ইরানীকে গ্রেফতার করায় ইরানের এ তত্পরতা হলো মার্কিন বাহিনীর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ। পাশাপাশি তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্দী ফারহাদিকে মুক্তি দেয়ার জন্য ইরাক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নাজার বলেছেন, ইরান ইতোমধ্যেই ইরাককে জানিয়েছে, ফারহাদি শীঘ্রই মুক্তি না পেলে ইরান ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দিশ এলাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করবে।
এর আগে ইরাকে মার্কিন বাহিনী ২০ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে যে, তারা ইরাকের উত্তরাঞ্চলের সুলাইমানিয়াহ শহর থেকে ইরানের ফারহাদিকে গ্রেফতার করেছে। কারণ ফারহাদি হচ্ছেন ইরানের বিপ্লবী প্রহরী দলের নিয়ন্ত্রণাধীন সশস্ত সংস্থার একজন গোপন বিশেষ এজেন্ট। তিনি ইরাকের সশস্ত্র ব্যক্তিদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র যোগানোর কাজে লিপ্ত থাকার ব্যাপারে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে, ফারহাদি হচ্ছেন সীমান্ত বাণিজ্য বিষয়ক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি সুলাইমানিয়াহ শহরের স্থানীয় সরকারের আমন্ত্রণে শহরটি সফর করেছেন।
ফারহাদির গ্রেফতারের পর ইরাকের প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি মার্কিন বাহিনীর এ আচরণের প্রতিবাদ জানানোর জন্য শীঘ্রই ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সর্বোচ্চ সেনাপতি ডেভিড পেট্রাউস এবং ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইয়ান ক্রোকারকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে অবমাননাকর। ২৩ সেপ্টেম্বর তালাবানি যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সতর্ক করে দিয়েছে যে, ইরান ফারহাদি ঘটনার জন্য কুর্দিশ এলাকায় দু'দেশের সীমান্ত বন্ধ করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
আসলে ইরাক এবং ইরান সরকার ইরানীকে গ্রেফতার সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতানৈক্য দেয়া দিয়েছে। এটি প্রথম নয়। সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন বাহিনী বারবার অভিযোগ করেছে যে, ইরান গোপনে ইরাকের যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী সশস্ত্র যোদ্ধাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে। গত মাসে ইরাকে মার্কিন বাহিনী বাগদাদের একটি হোটেলে আট জন ইরানীকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরাক সরকারের বিপুল প্রতিবাদের কারণে মার্কিন বাহিনী তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে মার্কিন বাহিনী ইরাকের উত্তরাঞ্চলের আরবিলে পাঁচ জন ইরানীকে গ্রেফতার করে এবং অভিযোগ করেছে যে, তারা ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য গোপনে ইরাকের সশস্ত্র ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করছে। ইরান মার্কিন বাহিনীর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরান বলেছে, এসব ব্যক্তিরা হচ্ছে ইরানের কূটনীতিক। এখন পর্যন্ত এ পাঁচ জন ইরানী বন্দী রয়েছেন।
ইরান সংলগ্ন ইরাকের ভূভাগের সীমান্ত অঞ্চল পি জে এই কে'র সশস্ত্র ব্যক্তিদের লুকিয়ে থাকার অঞ্চলবলে মনে করা হয়। ইরান সরকার বহুবার ইরাক সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে এবং ইরাক সরকারকে পি জে এই কে'র সশস্ত্র সংস্থার ঘাঁটিকে নির্মূল ও বন্ধ করায় সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছে। ইরান বরাবরই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে যে, পি জে এই কে'র সশস্ত্র সংস্থার উপর ইরাকের দমনের মাত্রা দুর্বল। ইরান সীমান্ত সুরক্ষার অজুহাতে তার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ইরাকের সীমান্তে স্থায়ীভাবে অনেক সৈন্য মোতয়েন করে আসছে। ২২ সেপ্টেম্বর ইরান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে, ইরান সীমানের ওপারে ইরাকে অবস্থিত পি জে এই কে'র সশস্ত্র ব্যক্তিদের উপর গোলা বর্ষণ করেছিল। ইরান এবারের সামরিক অভিযানকে ইরানের সীমান্ত সুরক্ষা হিসেবে মনে করেছে।
বর্তমানে ইরান দু'দেশের সকল আমদানি ও রপ্তানি স্থলবন্দর বন্ধ করেছে। এটি শুধুমাত্র ইরাকে মার্কিন বাহিনীর প্রতি প্রতিবাদ নয়, এটিও ইরাকের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে। কুর্দী হিসেবে ইরাকের প্রেসিডেন্ট তালাবানি এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এটি খুব স্বাভাবিক। ইরাকে মার্কিন বাহিনীর জন্য যদিও তিনি হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এক জন মিত্র, তবু কুর্দী জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করার কারণে তিনি মার্কিন বাহিনীর ফারহাদিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে রাজী হয়নি। দেখা গেছে, ফারহাদির গ্রেফতার, ইরানের সীমান বন্ধ করা এবং তালাবানির প্রতিবাদ এ ধারাবাহিক ঘটনার থেকে প্রতিফলিত হয়েছে যে, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের ত্রিভুজ সম্পর্ক আরো জটিল হচ্ছে। (লিলি)
|