v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-26 18:53:07    
পেইচিংঙয়ের স্বামী-স্ত্রীর বাসস্টপ

cri

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তার পাবলিক বাসস্টপগুলোতে সচরাচর দেখা যায় , কিছু লোক মাথায় লাল রোদ-প্রতিরোধক টুপি আর গায়ে হলুদ টিসার্ট পরে এবং হাতে ছোট পতাকা নিয়ে পাবলিক বাসস্টপগুলোর শৃংখলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন । এর পাশাপাশি তারা বাসস্টপগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজও করেন এবং অপেক্ষামান যাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন ।

    পেইচিংয়ের পূর্বাংশের ছিয়াও ইয়াং এলাকার ইয়াও চিয়া ইউয়ান বাসস্টপ হচ্ছে একটি বড় গোছের বাসস্টপ । প্রতিদিন সকাল ও বিকেল বেলায় এখানে লোকজন ও গাড়িগুলোর আনাগোনা খুব বেশি । এখানে কর্মরত হান সিউ লিং ও তুং ছি মিং হচ্ছেন এক দম্পতি । তাই যাত্রীরা এ বাসস্টপকে স্বামী-স্ত্রীর বাসস্টপ বলে ডাকেন ।

    প্রতিদিন হান সিউ লিং ও তার স্বামী তুং ছি মিং পাঁচটা না বাজতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান । ইয়াও চিয়া ইউয়ান বাসস্টপে পৌছে তারা প্রথমে সাফ করার কাজ করেন । যখন আমাদের সংবাদাতা এ বাসস্টপে পৌছলেন , তখন তারা একদিকে বাসস্টপের প্ল্যাকার্ড মুছে ফেলছিলেন , অপরদিকে বাসস্টাপের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যে যাত্রীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন ।

    যাত্রীরা , আপনারা ভালো আছেন তো? আপনাদের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার জন্যে দয়া করে মাটিতে থুথু ফেলবেন না এবং যেখানে সেখানে বর্জ্য পদার্থ ফেলবেন না । আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ।

    হান সিউ লিং ও তার স্বামীর প্রচেষ্টায় ইয়াও চিয়া ইউয়ান বাসস্টপের অবয়বের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । এখানকার মাটিতে টুকরো টুকরো কাগজ আর সিগারেটের অবশিষ্টাংশ আর দেখা যায় না । যাত্রীদের বাসে উঠার শৃংখলাও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে । যখন হান সিউ লিং ও তার স্বামী প্রথমে এ কাজ শুরু করেন , তখন থেকে তারা সবসময় যাত্রীদের লাইন করে বাসে উঠার নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন । তুং ছি মিং প্রায়শই যাত্রীদের কাছে এ নিয়ম মেনে চলার ভালো দিক তুলে ধরে থাকেন । তিনি বলেন ,

    লাইন করে বাসে উঠলে বয়োবৃদ্ধ , গর্ভবতী , রোগী ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে সুবিধা পাওয়া যাবে । এটি একটি ভালো দিক । আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে , সবাই সুশৃখলভাবে বাসে উঠলে চোরদেরও বেশি সুযোগ থাকবে না ।

    হান সিউ লিং ও তার স্বামীর প্রচেষ্টার ফলে আজ অধিকাংশ যাত্রী সচেতনভাবে লাইন করে বাসে উঠতে পারছেন । এভাবে এ বাসস্টপে লোকজন যত বেশিই হোক না কেন , সবসময় শৃংখলা বিরাজমান থাকে । যাত্রীরা এখন অবাধে বাসে উঠতে পারছেন এবং বাস থেকে নেমে আসতে পারছেন । বয়বৃদ্ধ ও বাচ্চাদেরও যথাযোগ্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়েছে ।

    এ বাসস্টপের মাধ্যমে রোজ প্রায় এক হাজার যাত্রী যাতায়াত করে । ভীড়ের মধ্যে অনেক সময় কলহ-বিবাদও হয়ে থাকে । সে সময় হান সিউ লিং ও তার স্বামী সর্বদাই ধৈর্য্যের সংগে বুঝিয়ে বলে থাকেন । হান সিউ লিং আমাদের সংবাদদাতাকে সবেমাত্র সংঘটিত একটি ঘটনার কথা বললেন । তিনি বলেন ,

    একদিন একটি যুবক উপরে কোনো জামা না পরে হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন । আমি ধৈর্য্যের সংগে তাকে বললাম , আপনি কেন জামা পরেন না ? উত্তরে তিনি বললেন, খুব গরম । আমি বললাম , আপনি দেখুন , রাস্তায় আপনার মত অনেক লোক আছে কি ? আমাদের সবাইকে ভদ্র হতে হবে । তিনি বললেন , চাচী , বাস এসে গেছে , আমি এখনই জামা পরছি ।

    আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন , হান সিউ লিংয়ের কাছে সবসময় একটি ছোটখাটো ওধুধের বাক্স রয়েছে । বাক্সের মধ্যে গরম-প্রতিরোধক কিছু সচরাচর ব্যবহৃত ওষুধ আছে । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , এ কয়েক দিন খুব গরম । এজন্যে তিনি কিছু ওষুধ সংগে নিয়ে এসেছেন । কিছুদিন আগে একজন যুবক এখানে অতি গরমের জন্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন । হান সিউ লিংয়ের ওষুধ খেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সেরে উঠলেন ।

    হান সিউ লিং ও তার স্বামীর পরিশ্রম যাত্রীদের প্রশংসা লাভ করেছে । তারা আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    এখানে লোকজন ও গাড়ির আসাযাওয়া খুব বেশি । শৃংখলা বজায় রাখার জন্যে তাদের দরকার পড়ে ।

    তারা অনেক উপকার করেছেন । যাত্রীদের ভীড় বেশি থাকার সময় তাদের প্রচেষ্টায় যাত্রীদের শৃংখলা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে ।

    এ দিদি সত্যিই ভালো কাজ করেছেন । এখানকার শৃংখলা বেশ ভালো । তাছাড়া এ বাসস্টপ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ।

    মিস্টার লিউ ইয়াও চিয়া ইউয়ান বাসস্টপের কাছে কাজ করেন । তিনি রোজ এর পাশ দিয়ে যাতায়াত করেন । তাই হান সিউ লিং ও তার স্বামীর কাজ তার কাছে খুবই পরিচিত । তিনি এভাবে তাদের কাজের মূল্যায়ণ করেছেন ।

    কাজ করার সময় তারা খুব ভদ্র-নম্র থাকেন । পেইচিংয়ের যে কোনো রাস্তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়ে দেবেন । পেইচিং সম্পর্কে তাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে । যাত্রীরা তাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ।

    বাসস্টপের কাজ ছাড়াও পেইচিং পাবলিক বাস কোম্পানি তাদেরকে পাবলিক বাসগুলোর ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরদের কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োগ করেছে , যাতে পাবলিক বাসগুলোর পরিসেবার মান উন্নত করা যায় । হান সিউ লিং বলেছেন ,

    আমরা মাঝেমধ্যে বাসে বসে ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরদের কাজ তত্ত্বাবধান করি । আমরা প্রধানত দেখি যে , তাদের আচরণ বিধিসম্মত হচ্ছেন কি না এবং তাদের বাসগুলো যথাস্থানে থামাতে পারেন কি না । কন্ডাক্টরদের বেলায় তারা স্পষ্টভাবে প্রতিটি বাসস্টপের নাম উচ্চারণ করতে পারেন কি না এবং যাত্রীদের সংগে ভালো ব্যবহার করতে পারেন কি না । এসবও আমাদের দেখার দিক ।

    গত এক বছরে হান সিউ লিং ও তার স্বামী তাদের কৃতিত্বের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে পেইচিং ও ছিয়াও ইয়াং এলাকার আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন । তারা সযত্নে এ সুনাম ও এ সাধারণ কাজ বজায় রাখতে ইচ্ছুক । হান সিউ লিং বলেছেন ,

    যে কোনো কাজ করলে তাকে ভালোবাসতে হবে এবং ভালোভাবে তা করতে হবে ।

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে হান সিউ লিং ও তুং ছি ছিয়াওয়ের মত ৪ হাজারেরও বেশি যাতায়াত সহায়তাকারী রয়েছে ।