ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রী সভা ১৯ সেপ্টেম্বর ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা অঞ্চল হচ্ছে তাদের বৈরী পক্ষ। একই সঙ্গে ইসরাইল এ অঞ্চলের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। গাজা অঞ্চলে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনের অব্যাহত রকেট বোমা বিস্ফোরণের প্রতি এটি ইসরাইলের জবাব।
জানা গেছে, গত সাতবছরে গাজা অঞ্চলের যোদ্ধারা দক্ষিণাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট শহরে মোট এক হাজারেরও বেশিবার রকেট বোমা হামলা চালায়। এতে অনেকে হতাহত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ইসরাইল বিমান হামলা, চিহ্নিত স্থানে আক্রমণ, সীমান্ত এলাকা অবরোধ এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয় । তবে তা ইতিবাচক ফল পায়নি। ১১ সেপ্টেম্বর, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের জিকিম সামরিক ঘাঁটিতে আবার রকেট বোমা বিস্ফোরণে মোট ৬০ জনেরও বেশি ইসরাইলী সৈন্য আহত হয়েছে। এ জন্য ইহুদ ওলমার্ট সরকারকে জনমতের ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রী সভা গাজা অঞ্চলকে বৈরী অঞ্চল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইন লংঘন না করে গাজা অঞ্চলে বিদ্যুত্ এবং জ্বালানি সম্পদ সরবরাহ কমিয়ে দেবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেবে । তবে একজন বিশ্লেষক বলেছেন , এ সিদ্ধান্ত বহু পক্ষের চ্যালেন্জের মুখে পড়তে পারে।
প্রথমেই উঠবে আন্তর্জাতিক আইন-প্রসঙ্গ। ইসরাইল গাজা অঞ্চলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার সময় মানবিক সমস্যা বিবেচনা করবে এবং পানি, খাদ্যদ্রব্য, চিকিত্সা সাজ-সরঞ্জাম এবং বিদ্যুত্ ব্যবহারসহ নানা ধরণের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে । তা সত্ত্বেও জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এসব শাস্তির কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেছে । দু'বছর আগে ইসরাইলী সেনাবাহিনী গাজা অঞ্চল থেকে সরে দাঁড়ালেও তারা এখনও এ অঞ্চলের সীমান্ত, আকাশ সীমা এবং জলসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ জন্য গাজা অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রার সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইসরাইল দায়িত্ববদ্ধ। কিন্তু শাস্তি ব্যবস্থা নিলে এ অঞ্চলের পরিস্থিতির অবনতি হবে । জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে এ সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইসরাইলের তত্পরতার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছেন।
দ্বিতীয়তঃ ইসরাইল মনে করে, রকেট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় হামাস সরাসরি জড়িত না হলেও হামাস এর প্রতিরোধের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ইসরাইলের কর্মকর্তারা আশা করছেন, শাস্তি দিয়ে হামাস তার দায়িত্ব পালন করতে বাধা হবে । তাছাড়া, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইহুদ বারাক বলেছেন, শাস্তি দেয়ার লক্ষ্য হলো হামাসের সশস্ত্র শক্তি কমিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে হামাসের একজন মুখপাত্র ফওজি বারহুম বলেছেন, ইসরাইলের এ সিদ্ধান্ত মানে যুদ্ধ ঘোষণা করা এবং ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর " সন্ত্রাসী আচরণ" চালানো।
তৃতীয়তঃ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনা এবং নভেম্বরে মধ্য-প্রাচ্যের সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের পথেও এই সিদ্ধান্ত বাধা হিসেবে কাজ করবে। উল্লেখ্য, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পরই গাজা অঞ্চলে শাস্তি আরোপের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গাজা অঞ্চলে শাস্তি আরোপের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অভিন্ন অবস্থানে হামাসের প্রতি বিরোধিতা এবং আব্বাসকে সাহায্য করার মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করলে হিতে বিপরিত হতে পারে। আসলে বেশ কিছু ফিলিস্তিনী ও সংবাদ-মাধ্যম ইসরাইল এবং পশ্চিমা দেশের ওপর আব্বাসের মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতার নিন্দা করেছে।
সবশেষে ইসরাইলের রাজনৈতিক মহলে খুব কম মানুষই এ সিদ্ধান্তের সমর্থক।----ওয়াং হাইমান
|