v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-19 21:08:54    
প্রতিবন্ধী তরুণ চেং ফু শেংয়ের কাহিনী

cri

    পূর্ব চীনের চিয়াং সু প্রদেশের সুই চৌ শহরে একজন প্রতিবন্ধী তরুণ আছেন । তার নাম চেং ফু শেং । তার জীবদ্দশায় তিনি একদিকে অদম্য মনোবল নিয়ে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন , অন্যদিকে স্বার্থহীন ত্যাগস্বীকার করে তার প্রতি সমাজের ভালোবাসার প্রতিদান করছেন ।

    চেং ফু শেনের বয়স ৩৮ বছর । যখন তার বয়স ২১ বছর ছিল , তখন তিনি হঠাত মেরুদন্ডের প্রদাহে আক্রান্ত হন । সেসময় তার সারা শরীরের সন্ধি বিকৃত হয়ে যায় । তিনি শুধু দাঁড়াতে পারতেন এবং শরীর বাঁকিয়ে বসতে পারতেন না । তিনি দুটো লাঠির সাহায্যেই কেবল কোনোক্রমে হাটতে পারেন । আন্তর্জাতিক চিকিত্সা মহল এ রোগকে অমৃত ক্যান্সার বলে ডাকে । আগে চেং ফু শেন খুবই সবল ছিলেন । এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি সম্পূর্ণরূপে শ্রমশক্তি হারিয়ে ফেলেন । এমন কি দৈনন্দিন চলাফেরাও তার পক্ষে খুব কষ্টকর । চেং ফু শেং বলেছেন , তিনি সবসময় বিছানায় শুয়ে থেকে বাইরের জগতের সংগে সব ধরণের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন । তখন তিনি নিসহায় ও নিসংগ বোধ করতেন । তিনি বলেন ,

    সেসময় আমি কোনোমতেই ভাবতে পারি নি যে , আমার ভাগ্যে কেমন করে এ কল্পনাতীত আঘাত এসেছে ।

    অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আগে অন্যান্য তরুণের মত চেং ফু শেংও ভবিষ্যত সম্পর্কে অনেক সুন্দর আশা ও ভরসা পোষণ করতেন । আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি সামনের ঘাসের ক্ষেতে খেলাধুলারত লোকজনকে দেখিয়ে বলেছেন , আমার এ অসুখ না হলে আমিও তাদের মত এখানে স্বাচ্ছন্দে ব্যায়াম করতাম । তখন আমি সবেমাত্র চাকরী পেয়েছি । আমি বেশি টাকা উপার্জন করতে চেয়েছিলাম এবং একটি বান্ধবী খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম । আমি তাকে দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখাতে চেয়েছিলাম । সেসময় আমার মনে কত সুন্দর আশা ও ভরসা ছিল ।

    চেং ফু শেংয়ের বাবামা তাদের মধ্য বয়সে এ একমাত্র ছেলেকে পেয়েছেন । যখন তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন , তখন তার মার কোনো চাকরী ছিল না । বাবাও সবেমাত্র অবসর নিয়েছেন । মাসে তার বাবার মাত্র কয়েক শ' ইউয়ানের আয় হয় । বয়বৃদ্ধ বাবামা আশা করেছিলেন , চেং ফু শেং চাকরী পাওয়ার পর তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে । তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে , তাদের প্রিয় ছেলের অসুখে তারা আরো গুরুতর ঋণে ভারাক্রান্ত হয়েছেন । চেং ফু শেংয়ের মা উ সিন হুয়া বলেছেন ,

    চেং ফু শেংয় হঠাত এ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । আমি আর কী বলতে পারি । আমি নিজেও জানি না , আমাদের দিন কেমন করে চলবে ।

    তখন থেকে চেং ফু শেংয়ের বাবামার কাঁধের ভার আরো ভারী হয়ে গেছে । পরিবারের দৈনন্দিন খরচ বহন করা ছাড়া ছেলেটির রোগের চিকিত্সার জন্যেও টাকা যোগাড় করতে হবে । বাবামা রোজ তার জন্যে অনেক পরিশ্রম করেন । এটা দেখে তার মনে অত্যন্ত অস্বস্তিকর লাগে । একদিন স্থানীয় বেতারের একটি অনুষ্ঠান শোনার পর বেতারের কাছে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করে একটি চিঠি লিখেন । চেং ফু শেং ভাবতে পারেন নি যে , তার চিঠি বহু লোকের মনোযোগ আকৃষ্ট করবে । সুই চৌ শহরের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১৬জন শ্রমিক স্বতস্ফুর্তভাবে অংগমর্দনের চিকিত্সা নেয়ার জন্যে চেং ফু শেংকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেন । তারপর তারা কনকনে শীত ও খাঁ খাঁ রোদের গ্রীষ্মকালে তারা অবিরামভাবে এ কাজ করে আসছেন ।

    এ সময়ের মধ্যে তিং ছিয়াং নামক একজন যুবক চেং ফু শেংয়ের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন । তিং ছিয়াং একটি মাধ্যমিক পেশাগত স্কুলের ছাত্র । চেং ফু শেংয়ের সংগে তার পরিচয়ের পর তিনি বিনাদ্বিধায় চেং ফু শেংয়ের বাবামার সংগে মিলে তাকে দেখাশোনা করার গুরু দায়িত্বকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন । তিং ছিয়াং শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চিকিত্সা নেয়ার জন্যে তাকে সুই চৌয়ের বাইরেও যান । সেসময় তিং ছিয়াং একাই চেং ফু শেংককে দেখাশোনার কাজ সারেন । তিনি বলেন , অন্যরা তাদের দেখে ভুল করে মনে করেন যে , তারা আপন ভাই । তিনি বলেন ,

    চেং ফু শেংকে দেখে তার মনে স্নেহ-মমতা জেগে উঠে । তার সংগে পরিচিত হওয়ার পর আমি সবসময় তার সংগে গল্প গুজব করি এবং তাকে সাধ্যমত সাহায্য করতে চাই । কেন না , আমরা দুজনই যুবক ।

    সমাজের বিভিন্ন মহলের সাহায্যে চেং ফু শেংয়ের রোগ অনেকটা প্রশমিত হয়েছে । এখন তিনি আস্তে আস্তে চলাফেরা করতে পারছেন । অথচ তার মন ভারী হয়ে উঠেছে । তিনি তার লেখা একটি প্রবন্ধে বলেছেন , প্রথমদিকে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন । এখন তিনি অগণিত ভালোবাসার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন । তার কথায় ঠিক যেন তীব্র শীতকাল অতিবাহিত হওয়ার পর নিমেষে বসন্তকালের আরামদায়ক সূর্যালোকে এসে পড়েছি । দুর্ভাগ্য হলেও আমি এখন নিজেকে অপার সৌভাগ্যবান ও কৃতজ্ঞ মনে করছি । এর পাশাপাশি আমার মনে কিছু উদ্বেগও রয়েছে । কেন না , সত্যিকার ভালোবাসা নিস্বার্থক ও পারস্পরিক হওয়া উচিত । তিনি বলেন ,

    যখন অন্যরা আপনাকে ভালোবাসা দেন , তখন একই সময় আপনারও নিজের ভালোবাসা অন্যকে দেয়া উচিত । এ ভালোবাসার প্রতিদান করা উচিত । এমনি করলেই কেবল এ রকম ভালোবাসা একটি উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে ।

    ১৯৯৭ সালের ২০ এপ্রিল ছিল চেং ফু শেংয়ের ৩০তম জন্মবার্ষিকী । এদিন তার উদ্যোগে সুই চৌ সিন ইউয়ান স্বেচ্ছাসেবক পরিসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় । তখন থেকে চেং ফু শেং আগের চেয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ।

    গত দশ বারো বছরে চেং ফু শেং ও তার কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকরা সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে ৪ লাখেরও বেশি ইউয়ান চাঁদা সংগ্রহ করেছেন । এসব টাকা বহু রোগী ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্যে ব্যবহৃত হয়েছে । এ সময়ের মধ্যে তারা এক হাজার লোককে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন । তাদের মধ্যে চুয়ান চি অন্যতম । চুয়ান চি ১২ বছর বয়সে লুকীমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় । কয়েক বছর চিকিত্সার পর চুয়ান চির পরিবারের সমস্ত আমানত ফুরিয়ে যায় । এ অবস্থা জানার পর চেং ফু শেং ও তার কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকরা চুয়ান চির জন্যে প্রায় ১ লাখ ইউয়ান চাঁদা সংগ্রহ করেন । এ টাকা চুয়ান চির অস্থিসার প্রতিস্থাপনের অপারেশনে ব্যবহৃত হয় । অস্থিসার প্রতিস্থাপনের জন্যে অপেক্ষার বিশ বাইশ দিনে চেং ফু শেং ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকরা পালাক্রমে চুয়ান চিকে দেখাশোনা করেছিলেন ।