আপনারা কি মনে করেন যে অন্যকে সাহায্য করা খুব আনন্দের ব্যাপার ? আশি বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক সিড ফোরসিট অবশ্য তাই মনে করেন । তার কথা হচ্ছে অন্যকে সাহায্য করা অর্থটাই অন্যরকম । শিশুদেরকে সাহায্য করে আমিও দারুণ আনন্দ পেয়েছি । এটা হল জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া । সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মার্কিন নাগরিক সিড ফোরসিট এ কথা বলেছেন । চীনে গরিব শিশুদের লেখাপড়ার জন্য তিনি অনেক অবদান রেখেছেন । কেন তিনি এসব অপরিচিত শিশুকে সাহায্য করেন ?
অন্যকে সাহায্য করলে জীবননটা অর্থপূর্ণ মনে হয় । এ চিন্তাধারায় আশি বছর বয়সী ফোরসিট গত ৬ বছরে বার বার চীনের কুয়াং সি প্রদেশের গরিব পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার স্কুল নির্মাণ ও দরিদ্র শিশুদের লেখাপড়ার জন্য অনেক অর্থ সাহায্য দিয়েছেন ।
আসলে ফোরসিট যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্থপতি । ওয়াশিংটনের সুবিখ্যাত মোমোন মন্দির তাঁর অনুপম এক স্থাপত্যকর্মের নিদর্শন। হঠাত্ এক সুযোগে তিনি তার একজন চীনা বন্ধুর কাছ থেকে জানলেন যে , চীনের কুয়াং সি প্রদেশের কিছু দরিদ্র এলাকার স্কুলের ব্যবস্থা ভালো নয় এবং শিশুরা লেখাপড়া করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়ে । তাই তিনি কুয়াং সিতে গিয়ে সেখানকার শিশুদেরকে যথাসাধ্য সাহায্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
২০০১ সাল থেকে ফোরসিট কুয়াং সি'র দরিদ্র এলাকার শিশুদের কাপড় দিতে শুরু করেন । পরে তিনি তাদের স্কুল নির্মাণে বরাদ্দও দিয়েছেন । স্থানীয় কিছু গ্রামের জন্য তিনি একটি পাঁচ ছয় কিলোমিটারের সড়ক নির্মাণের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়েছেন ।
কয়েক বছর আগে ফোরসিট কুয়াং সির একটি প্রত্যন্ত গ্রামে যান । তার যাওয়ার উদ্দেশ্য হল সেখানকার স্কুল ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিজের চোখে দেখা। তিন ঘন্টা ধরে পাহাড়ের চড়াই উত্রাই পেরিয়ে তিনি অবশেষে পৌঁছলেন সেই গ্রামে । স্থানীয় সরকার ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি তাদের জন্য একটি সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । সড়ক নির্মাণে সব সামগ্রী কেনার জন্য তিনি অর্থ দেন , গ্রামবাসীরা সড়ক নির্মাণ করেন , যাতে গ্রামবাসী ও শিশুদের চলাচলের সমস্যা মিটে যায় ।
সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তিনি আবার সেখানকার স্কুল দেখতে যান । যখন তিনি দেখেছেন স্কুলগুলো খুব সাদামাটা এবং পুরোনো , তিনি আবার স্কুল মেরামতের জন্য অনেক টাকা দান করেছেন । ফোরসিটের প্রতি কৃবজ্ঞতা জানানোর জন্য স্কুল নির্মাণের পর তার নাম দেয়া হয়েছে "ফোরসিট স্কুল" । এখন পর্যন্ত তিনি কুয়াং সি প্রদেশের দরিদ্র এলাকায় দু'টি স্কুল নির্মাণে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন ।
৬ বছরে কত শিশু তার সাহায্য পেয়েছে ? তিনি স্পষ্টভাবে বলতেও পারেন না । তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে একবার কুয়ান সি গিয়েছেন , সাক্ষাত্কারের সময় তিনি সংবাদদাতাকে তখন তোলা একটি ছবি দেখান । তিনি বলেন , ছবির তিন শিশু তার সাহায্যে লেখাপড়া করছে । গত বছরে তারা তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । তারা ফোরসিটের সাহায্যে লেখাপড়া করা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম তিন জন ছাত্র । চলতি বছরে আরো দু'ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে শুরু করেছে । এরাও তার সাহায্য পেয়েছিল ।
ফোরসিট সংবাদদাতাকে বলেন , আমি জানি তাদের জীবন খুব কঠিন , তাদের সাহায্য দরকার । তাদের লেখাপড়ার জন্য আমি সাহায্য করি , ভবিষ্যতে তারা অন্যকেও সাহায্য করতে পারবে এবং আমার মত এমন কাজ করতে পারবে । তিনি বলেছেন , অব্যাহতভাবে তিনি এসব ছাত্রদেরকে সাহায্য করবেন এবং তাদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব টাকা দেবেন ।
ফোরসিট বলেন , তিনি যে ছাত্রদেরকে সাহায্য দিয়েছেন তাদেরকে খুব পছন্দ করেন । চীনাদের কাছ থেকে তিনি অনেক শিখেছেন । চীনের গ্রামাঞ্চলের গরিব শিশুদের লেখাপড়ার জন্য তিনি যথাসাধ্য সাহায্য করতে ইচ্ছুক । এর জন্য তিনি বিশেষ করে একটি শিক্ষা তহবিল গঠন করেছেন । তার ছেলে এ তহবিলের চেয়ারম্যান । যাতে ভবিষ্যতে গরিব শিশুদেরকে সাহায্য দেয়া অব্যাহত রাখতে পারেন ।
|