চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে 'বিশ্বের ছাদ' বলা হয় । তিব্বতের পশ্চিমাংশে অবস্থিত আলি অঞ্চলকে বিশ্বের ছাদের ছাদ বলা হয় । সমুদ্র সমতলের তুলনায় সাড়ে ৪ হাজার মিটার উঁচুতে বসবাসকারী কৃষক ও পশু পালকরা অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করতেন । তবে গত বছর থেকে আলি অঞ্চলে কৃষক ও পশু পালকদের জন্য সার্বিকভাবে পুনর্বাসনের একটি প্রকল্প চালু হয়েছে । জীর্ণ বাড়ি থেকে নতুন আবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করার লক্ষে কৃষক ও পশু পালকদের সহায়তা করার জন্য সরকার বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে । সম্প্রতি সংবাদদাতা চিয়ামু গ্রামের অধিবাসীদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। আজ এই অনুষ্ঠানে এই গ্রাম এবং স্থানীয় তিব্বতী অধিবাসীদের পুনর্বাসন সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
চিয়ামু গ্রাম তিব্বতের আলি অঞ্চলের শি ছুয়ান হো থানা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এই গ্রামে একটির পর একটি সুন্দর ও পরিপাটি তিব্বতী বৈশাষ্ট্যসম্পন্ন নতুন বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । এ দেখে মধ্যে বেশ কয়েকটি দু'তলা দালান রয়েছে । এ দেখে সংবাদদাতা খুব অবাক হন । চিয়ামু গ্রামের সর্দার গামাছিরেন বলেন , এক বছর আগে এই এলাকা একটি নির্জন জায়গা ছিল । কৃষক ও পশুপালকরা আরো দূরের পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করতেন । ২০০৬ সালের এপ্রিলে গ্রামে কৃষক ও পশুপালকদের পুনর্বাসনের জন্য ৪১ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ করে ।
গ্রামের ৫৭টি পরিবারের ২৭৯জন সদস্য আছে । তাদের উপার্জন প্রধানতঃ শহরে গ্রামীণ শ্রমিক হিসেবে চাকরি এবং পশু পালনের ওপর নির্ভর করছে । আগে গ্রামবাসীরা মাটি দিয়ে তৈরী বাড়িঘরে বাস করতেন । গত বছর পুনর্বাসন বিষয়ক কার্যক্রম চালু হওয়ার পর এই গ্রামের ৫৬টি কৃষক পরিবারের সদস্যদের নতুন আবাসিক এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে ।
গামাছিরেন সংবাদদাতাকে বলেন , গ্রামবাসীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম অনুযায়ী, নতুন নির্মিত এলাকার আয়তন ৫ হাজার বর্গ মিটার । সরকারের ভর্তুকী ও অধিবাসীদের যৌথ অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এই নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয় । চিয়ামু গ্রামে গ্রামবাসীদের জন্য ৬০ ও ১ শো বর্গ মিটার বিশিষ্ট দুই ধরনের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয় ।
আগে চিয়ামু গ্রামের গ্রামবাসীদের বাসস্থানের অবস্থা তত ভাল ছিল না । অতিথি আসলে থাকার ব্যবস্থা করা ছিল দূরের কথা । গ্রামবাসী লাবাতেংচু বলেন , তখন অর্থাভাবের কারণে নতুন বাসা নির্মাণ করা যেতো না । এখন তার পরিবারের ১ শো বর্গ মিটারেরও বেশি নতুন বাসা নির্মাণকাজ শেষের দিকে ।
নতুন বাসা নির্মাণের জন্য মোট ৫০ হাজার ইউয়ান ব্যয় করা হয়েছে । সরকারের ভর্তুকী ছাড়া তিনি শুধু ১০ হাজার ইউয়ান ব্যয় করেছেন ।
সংবাদদাতা লাবাতেংচু'র বাসায় এলেন । বাড়ির ডিজাইন দেখতে সুন্দর , কক্ষগুলো বড় ও উজ্জ্বল । বৈঠকখানা , শোয়ার কক্ষ, রান্না ঘর ও নানা রকম নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য রাখার কক্ষসহ বড় একটি বাসা । বৈঠকখানা ও শোয়া ঘর বেশ কিছু তিব্বতী আসবাবপত্রে সজ্জিত । দু'তলা বিশিষ্ট দালান নিছক তিব্বতী স্থাপত্যশৈলী এবং আধুনিক ডিজাইনে পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরী করা হচ্ছে । বৃদ্ধ লাবাতেংচু সমভিব্যাহারে সংবাদদাতা শোয়া ঘর , রান্না ঘর , উপাসনা ঘর ও বৈঠকখানা পরিদর্শন করেন । তিনি বলেন ,
তার বয়স এখন ৫৯ বছর । তার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । তিনি সুখী জীবনযাপন করছেন।
নতুন বাসা ও নতুন পরিবেশে থাকার জন্য চিয়ামু গ্রামের গ্রামবাসীরা খুব উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছেন । এখন বাড়িতে বাড়িতে টেলিভিশন , টেলিফোন ও বেতারের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পরিসেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আগে যোগাযোগের অপর্যাপ্ততার কারণে তিব্বতী জাতির কৃষক ও পশুপালকরা বহিঃর্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল । এখন বহিঃর্বিশ্ব সম্পর্কে আরো বেশি জানা , লেখাপড়া ও চাকরি করার জন্য বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী চীনের অভ্যন্তরভাগে গেছেন । চিয়ামু গ্রামের প্রধান গামাছিরেন বলেন , বর্তমানে গ্রামে মোট ১১৫জন শ্রম শক্তি আছে । তাদের মধ্যে অর্ধেক কৃষি ও পশুপালনের কাজ করেন এবং বাকী লোকেরা বাইরে চাকরি করছেন । এ ছাড়াও লেখাপড়ার জন্য বহু কৃষক ও পশুপালকদের ছেলেমেয়েরা অভ্যন্তরভাগ এবং অন্যান্য প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্কুলে গেছে । লাবাতেংচু ও ছিরেনইয়াংচুং-এর মেয়ে মিমাফুছে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পড়াশুনা করছে । যখন সংবাদদাতা তাদের বাসায় এলেন , তখন ছিরেনইয়াচুং টেলিফোনে তার দূরের মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন । তিনি খুব তাড়াতাড়ি কথা বলছিলেন । কিন্তু তার ভাবমূর্তি থেকে তার আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছিল ।
পুনর্বাসনের জন্য গ্রামবাসীদের সহায়তা করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উত্পাদনের নতুন প্রকল্পের উন্নয়ন করা এবং আয় বাড়ানোর ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সাহায্যের কথাও বিবেচনা করছে । গ্রামের প্রধান গামাছিরেন বলেন , সিনচিয়াংয়ে মুরগী পালনের প্রযুক্তি শেখার জন্য তিনি অল্পবয়সীদের উত্সাহ দিয়েছেন। যখন তারা এই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে , তখন গ্রামে একটি মুরগী খামার গড়ে তোলা হবে । এর পাশাপাশি মাল পরিবহনের ব্যবসা করার জন্য গ্রামের কয়েকটি মালবাহী গাড়িও ব্যবহার করা হবে । খুশির ব্যাপার এই যে , সরকারের অর্থ বরাদ্দে একটি দুধেল গাই খামারও গড়ে তোলা হবে । এই খামার গড়ে তোলার প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে । শরত্কালে ফসল কাটার পর আরো সুষ্ঠুভাবে পোষা ও চরানোর জন্য এই গ্রামের কৃষক ও পাশুপালকদের গরু ও ছাগলও এই খামারে পাঠানো যাবে ।
যখন সংবাদদাতা তাদের কাছ থেকে বিদায় নেন , তখন স্বাগতিকরা তাকে জানান , সরকার তাদের জন্য আরো বড় ও পরিপাটি বাসা নির্মাণ করেছে । বাসায় বিবিধ আসবাবপত্র ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য আছে । গ্রামের প্রধান মাঝে মাঝে তাদের খোঁজ খবর নেন । এখন গ্রামবাসীদের জীবনযাপনের কোন অসুবিধা নেই । সাহায্যের জন্য তারা সরকারকে খুব ধন্যবাদ জানান । আমাদের বিশ্বাস , ভবিষ্যতে তাদের জীবনযাপন অবশ্যই অধিক থেকে অধিকতর স্বচ্ছল হয়ে উঠবে । (লিলি)
|