অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় ইউন লু পু'র রচিত সংগীত খুবই সুবিদিত । মঙ্গোলীয় নারী হাস্ ইউন লু পু'র সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তার সঙ্গীত কর্ম প্রসংগে তিনি বলেন ,
যখন তার এই সব সংগীতের সুর শোনা যায় , তখন যেন প্রগাঢ় এক ধরনের আমেজ অনুভব করা যায় । নীল আকাশ ও সাদা মেঘ দেখা দেয় এবং সকলের মন প্রফুল্ল হয়ে উঠে ।
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার কুরসিং তৃণভূমিতে ইউন লু পু'র জন্ম । এই স্থানও অন্তঃমঙ্গোলিয়ার প্রসিদ্ধ সংগীত ও নৃত্যের জন্মভূমি । তিনি ছোট বেলা থেকেই লোক সঙ্গীতের আবেগ অনুভব এবং তা চর্চা করে আসছেন । বড় হওয়ার পর তিনি একজন গীতিকার হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন ।
ইউন লু পু ১৪ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর শিল্পী দলের একজন সদস্য । চার বছর পর ১৮ বছর বয়স্ক ইউন লু পু উত্তর-পূর্ব চীনের লু স্যুন সাহিত্য ও শিল্পকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন । তিনি একজন পেশাদার শিল্পীতে পরিণত হন । সামরিক বিভাগের কাজ ছেড়ে দেয়ার পর তিনি অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী দলের পরিচালনার পাশাপাশি সুরকার হয়ে উঠেন । তিনি বলেন ,
মঙ্গোলীয় সংগীতের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । তার সমৃদ্ধ সংগীতের সম্পদ এখনো পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো হয় নি । তিনি এখন যে সিমফনি , নৃত্যনাট্য ও গান রচনা করছেন , তার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব জনগণের সামনে মঙ্গোলীয় জাতির সংগীতের বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণীয় বিষয়গুলোকে তুলে ধরা ।
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমিতে ইউন লু পু'র জন্ম । তিনি পশুপালক ও শিল্পীদের কাছ থেকে একাগ্রচিত্তে সংগীত পরিবেশনের নৈপুণ্য শিক্ষা গ্রহণ করেছেন । বিস্তীর্ণ তৃণভূমি , বিশাল মরুভূমি ও নিবিড় বন তার সংগীত রচনার জন্য অজস্র তথ্য প্রদান করেছে । সংগীত রচনার ক্ষেত্রে তার অনন্য আবেগ ও ভালবাসার জন্য ইউন লু পু মঙ্গোলীয় জাতি ও বর্তমান যুগের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিপুল সংখ্যক সংগীত রচনা করেছেন । এখন শুনুন তার রচিত অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার আরাশান অঞ্চলের একটি লোক সংগীত ।
এই সংগীতে মঙ্গোলীয় জাতির ঐতিহ্যবাহী কন্ঠস্বর ও সুরের মধ্য দিয়ে একটি মাতৃহীন উটের বাচ্চার নিঃসঙ্গতা ও অসহায়ত্বের দিকটি ফুটে উঠেছে । গানের সুর মর্মস্পর্শী ও মর্মাহত । ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংগীত প্রতিযোগিতায় অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী দল এই গান পরিবেশন করেছে এবং প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ।
বহু বছর ধরে ইউন লু পু বেশ কিছু মঙ্গোলীয় সংগীত রচনা করেছেন । মঙ্গোলীয় জাতির সমৃদ্ধ বৈশিষ্ট্যে ভরপুর এই সব সংগীত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী দলের পরিবেশনের মাধ্যমে সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । ১৯৮৯ সালে পেইচিং কনসার্ট হলে মঙ্গোলীয় জাতির সংগীত ও নৃত্যনাট্য ভিত্তিক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । তিনি সংখ্যালঘু জাতির প্রথম সুরকার হিসেবে একক সিমফনি সৃষ্টি ও পরিবেশন করেছেন ।
২০০৫ সালের অক্টোবর চীনের সাংস্কৃতিক উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং সংগীত ও নৃত্যনাট্য পরিবেশন করার জন্য ইউন লু পু'র নেতৃত্বে অন্তঃর্মঙ্গোলীয় বেতার ও টেলিভিশন সাংস্কৃতিক দল যুক্তরাষ্ট্রে যায় । ইউন লু পু'র সংগীত মার্কিন দর্শকদের ব্যাপক কদর পেয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইউন লু পু'র জন্য একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনেরও ব্যবস্থা করেছে । তার সংগীত পরিবেশন ও সৃজনশীল নৈপুণ্য মার্কিন দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে । একই সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল তার সঙ্গে সাক্ষাত্ দান করেন এবং তার প্রতিভার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । এ প্রসঙ্গে ইউন লু পু বলেন , তখন বহু মার্কিন দর্শকরা শিল্পী দলের পরিবেশিত সংগীত ও নৃত্যনাট্য দেখে মুগ্ধ হয়ে কেঁদেছেন । একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন , চীনের অন্তঃর্মঙ্গোলীয় শিল্পী দলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সত্যি দর্শকদের মন জয় করেছে । সবাই চীনের শিল্পীদের কৃতীত্বময় অনুষ্ঠান দেখে জন্য মুগ্ধ হয়েছেন ।
১৯৯৮ সালে চীনের প্রথম জাতীয় পেশাদার শিল্পী দলের সংগীত প্রতিযোগিতা উত্তর- পূর্ব চীনের হারবিন শহরে অনুষ্ঠিত হয় । এই প্রতিযোগিতায় ইউন লু পু'র নেতৃত্বে অন্তঃর্মঙ্গোলীয় শিল্পী দল তাদের সংগীত পরিবেশনের অনন্য কলাকৌশলের জন্য ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে । এই প্রতিযোগিতায় অন্তঃর্মঙ্গোলীয় শিল্পী দলের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে অন্তঃর্মঙ্গোলীয় বেতারের একজন কর্মকর্তা ফুইটলা বলেন , ইউন লু পু অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া এবং অন্তঃর্মঙ্গোলীয় জাতির জন্য বিশাল মর্যাদা এনে দিয়েছেন । শিল্পী দলের সংগীত পরিবেশন সত্যিকারভাবে দর্শকদের মর্মস্পর্শ করেছে । সে দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময় হঠাত্ বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় । বিদ্যুত্ সরবরাহ ফিরে আসার পর সকল দর্শক শিল্পীদের অনুষ্ঠান পরিবেশনা আরো একাগ্রচিত্তে শুনলেন । মিলনায়তন অন্ধকার ও নিঃশব্দ ছিল । সকল অনুষ্ঠান শেষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য দর্শকরা বারংবার তুমুল করতালি দিয়েছেন ।
ইউন লু পু'র বয়স এখন ৭৪ । মঙ্গোলীয় সংগীত ও নৃত্যনাট্য বিকশিত করার জন্য তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । ২০০৬ সালে তিনি তৃণভূমির প্রশংসাসহ দুটি সিমফনি ও সংগীত সংকলন রচনা করেছেন । তিনি বলেন , তিনি অন্তঃর্মঙ্গোলীয় জাতির সংগীত ও নৃত্যনাট্যের ঐশ্বর্য উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন এবং তা সম্প্রসারিত করার জন্য অনবরতভাবে প্রচেষ্টা চালাবেন । যাতে বিশ্ব জনগণের কাছে অন্তঃর্মঙ্গোলীয় জাতির সংগীত ও নৃত্যনাট্যের ঐশ্বর্যকেআরো সুন্দরভাবে তুলে ধরা যায় ।
|