v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-14 19:34:57    
পশুপালক সি পাও লি কাও-এর বালুমাটিতে স্থাপিত পারিবারিক প্রাকৃতিক এলাকা

cri

    সি পাও লি কাও হচ্ছেন অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের থোং লিয়াও শহরের নাই মান জেলার একজন কৃষক। তাঁর জন্মস্থান চীনের বৃহত্তম বালুমাটি, কোরছিন বালুমাটি এলাকায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক লাভ পাওয়ার জন্য সি পাও লি কাও নিজের "পারিবারিক প্রাকৃতিক এলাকা" নির্মাণ করেছেন।

    সি পাও লি কাও-এর বাড়িতে মোট চারটি ঘর আছে। ঘরের সামনে সূর্যের আলোতে ভূট্টা পড়ে আছে। প্রাঙ্গণের এক কোণে একটি মোটর-সাইকেল রাখা। বাড়ির পাশে পশুর গোয়ালঘর আছে এবং গরু ও ছাগলের চিত্কার শোনা যাচ্ছে। বাড়ির চারদিকে দশ বারো মিটার লম্বা পোপলার এবং অনেক হলুদ উইলো ঘিরে ফেলা হয়েছে। অদূরে রয়েছে কিছু কৃষি জমি। সি পাও লি কাও-এর বাড়ি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আপনি কখনও ভাবতে পারবেন না, এখানে বালিয়াড়ি ছিল। সি পাও লি কাও বলেন,

     এখানে সবস্থান বালিময় ছিল। বাতাস হলে দরজার সামনে ও ঘরের ভিতরে বালি উড়ে আসতো। নিয়ন্ত্রণ না করলে বাস করা অসম্ভব। কিন্তু তখন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন ছিল। যেমন, আজ একটি গাছ লাগালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের বাতাসে গাছ বালির ভিতর ডুবে যায় এবং গাছও উপড়ে পড়ে যায়।

    ১৯৮৭ সালে সি পাও লি কাও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর বাসায় ফিরে চাষবাস শুরু করেন। বাতাস ও বালিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর দেখে ১৫ বছর বয়সী এই যুবক গোপনে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, গাছ লাগিয়ে বালি নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং নিজের বাড়িঘরকে বাঁচিয়ে রাখবেন। সি পাও লি কাও বাবা-মায়ের বিরক্তির পরোয়া না করে তাঁর দীর্ঘ ও পরিশ্রমী বালি-নিয়ন্ত্রণ কাজ শুরু করেন। পরে বাবা-মাও ছেলের সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তিতে অভিভুত হয়ে পড়েন এবং ছেলের সঙ্গে মিলিতভাবে বালি-নিয়ন্ত্রণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

     সি পাও লি কাও জানেন, বালি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করা উচিত। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবস্থা নিলেই কেবল সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। তাই তিনি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য নেয়ার জন্য বহুবার মহকুমার বিশেষজ্ঞদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের সাহায্যে অবশেষে তাঁর পরিবারিক প্রাকৃতিক এলাকা" নির্মিত হয়েছে।

  "পারিবারিক প্রাকৃতিক এলাকা" হচ্ছে এক বা কয়েক পরিবারকে একটি ইউনিট হিসেবে বালিমাটির সার্বিক নিয়ন্ত্রণ করা এবং কৃষি ও পশুপালনের উত্পাদন আর উন্নয়নের একটি নতুন রূপ। স্বাধারণত মূল এলাকা এবং সুরক্ষা এলাকা নিয়ে তা গঠিত হয়। প্রত্যেক প্রাকৃতিক এলাকার আয়তন হচ্ছে সাত হেক্টরের কাছাকাছি। প্রাকৃতিক এলাকার মুল এলাকার মধ্যে প্রধানতঃ রয়েছে, ফসল ও অর্থকরী ফসল এলাকা, ঘাস এলাকা এবং বন এলাকা ইত্যাদি। এর আয়তন প্রায় দুই হেক্টরেরও বেশী। এর লক্ষ্য হলো গ্রামীণ পরিবারকে খাদ্যশস্য, জ্বালানী, পশুর খাদ্য ও সার যোগানো। মুল এলাকার চার দিক হচ্ছে সুরক্ষা এলাকা। সাধারণত এর আয়তন হচ্ছে মুল এলাকার দ্বিগুণ থেকে চারগুণ। এখানে প্রধানত গুল্ম ও ঘাস চাষ করা হয়, যাতে প্রবহমান বালিয়াড়িকে স্থবির করা যায় এবং মূল এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা করা যায়। সুরক্ষা এলাকার চার দিকে কুঞ্জবন ও গুল্ম নিয়ে গঠিত বাতাস প্রতিরোধ বনানী-বলয় নির্মাণ করতে হবে।

    বালি প্রতিকার প্রকল্পের সম্প্রসারণের পাশাপাশি সি পাও লি কাও-এর ব্যবস্থাপার চিন্তা আরো প্রশস্ত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা প্রাকৃতকি পরিবেশ নষ্ট না করার ভিত্তিতে জন্মস্থানে ব্যাপকভাবে উত্পন্ন নমনীয় হলুদ উইলো দিয়ে তৈরী নানা ধরণের দ্রব্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করেন। এভাবে প্রতি বছর জন্মস্থানের অধিবাসীদের আয় দশ লাখেরও বেশী রেনমিনপি বৃদ্ধি পেয়েছে।

    বর্তমানে সি পাও লি কাও-এর প্রাকৃতিক এলাকার আয়তন ৮৭ হেক্টরের মতো। বনের আবৃতির হার ৯০ শতাংশেরও বেশী। মোট তিন শরও বেশী গরু ও ছয় শ'রও বেশী ছাগল পালন করা হচ্ছে।

    চীনের জাতীয় বন শিল্প ব্যুরোর কর্মকর্তা ওয়েই ইয়ংসিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    প্রাকৃতিক এলাকা নির্মাণের মাধ্যমে কার্যকরভাবে বালি সংকট প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন, কৃষি, বন আর পশুপালন এলাকার শিল্প কাঠামোর সুবিন্যস্তকরণ, কৃষক ও পশুপালকদের দারিদ্র্যমোচন আর ধনী হওয়া ও বালি এলাকার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে বালি এলাকায় কৃষক ও পশুপালকদের জীবন-যাপন সমস্যার যেমন সমাধান করা হয়েছে, তেমনি বালি এলাকার উত্পাদনশক্তির উন্নয়ন সমস্যারও সমাধান করা হয়েছে। এটি প্রাকৃতিক নির্মাণ, অর্থনৈতিক নির্মাণ ও সামাজিক উন্নয়ন এ তিনটির সম্পর্ক সমন্বয় করেছে।

    বর্তমানে বালিমাটিতে প্রাকৃতিক এলাকা নির্মাণ করা হচ্ছে স্থানীয় জনগণের বালি প্রতিকার, আয় বাড়ানো এবং ধনী হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। সি পাও লি কাও-এর প্রভাবে সেখানে ৪৬০ টিরও বেশী বড় ও ছোট পারিবারিক প্রাকৃতিক এলাকা নির্মিত হয়েছে। আগেকার বালিয়াড়ি যেন এখন সবুজ কাপড় পড়েছে।