প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন, এখন সাপ্তাহিক বিশেষ অনুষ্ঠান "অর্থনীতির অগ্রযাত্রা", পরিবেশন করছি আমি আবাম ছালাউদ্দিন।
সংগীত
সিলিনকুওলে মধ্য অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত। সিলিনকুওলের উত্তর দিকে মঙ্গোলিয়া, পশ্চিম দিকে চীনের উত্তর-পূর্ব শিল্প কেন্দ্র। সিলিনকুওলের আয়তন মোট ২০.৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার, কিন্তু লোকসংখ্যা শুধু ১০ লাখ। সিলিনকুওলের নাম শুনলে আমরা অসীম তৃণভূমি ও সুস্বাদু গরু আর খাশির মাংস ভেবি। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি সিলিনকুওলের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর অনেক দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সিলিনকুওলে এখন শিল্প অর্থনীতি আর প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর অভিন্ন গুরুত্ব দেয়া ও মানুষ আর প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্প্রীতিময়ভাবে উন্নয়নের পদ্ধতিতে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। সিলিনকুওলের উন্নয়নর প্রবনতা হল অন্তর্মঙ্গোলিয়া এমনকি সারা চীনের একটি ।
বন্ধুরা, এখন আমি আপনাদের কাছে সিলিনকুওলের সাম্প্রতিক কয়েক বছরের বিরাট সাফল্যের কিছু কথা বলবো।
(সিআরআই'র মঙ্গোলিয়া জাতির একজন সাংবাদিক তার্মা ছ' বছরের আগে সিলিকুওলের কেন্দ্রীয় শহর সিলিনহোটে এসেছিলেন। তিনি এখানে অনেক পরিবর্তন দেখে গভীর অনুভব করেন। তিনি বলেছেন,
(রে ১)
'এখানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমার মনে সিলিনহোটের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়। এখন ও আগের সিলিনহোট দু'শহরের মত। এখন সিলিনহোট হল দ্রুত উন্নত ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর এক শহর।')
২০০২ সালের পর সিলিকুওলের অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে আঞ্চলিক জিডিপি প্রতি বছরে গড়পড়তা শতকরা ২৫ ভাগ। ২০০৮ সালের শেষ দিক পর্যন্ত এ ছয় বছরের সিলিকুওলের জিডিপি আগের চার গুণ হবে।
সিলিনকুওলের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির উপপরিচালক হুওচিনবিন বলেছেন,
(রে ২)
'গত পাঁচ বছরে আঞ্চলিক জিডিপি ২০০২ সালের ৮ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি থেকে ২০০৫ সালের ১৬.৯২২ বিলিয়ন বেড়েছে। অনুমান অনুযায়ী, ২০০৭ সালে সিলিনকুওলের জিডিপি ২৭.১ বিলিয়ন ইউয়ন রেনমিনপি হবে। এটি ২০০২ সালের চেয়ে ২.৪ গুণ বেড়েছে। অর্থনীতির মোট পরিমাণ ২০০২ সালের চেয়ে চার গুণেরও বেশি। ২০০৭ সালে শহরের নাগরিকদের গড়পড়তা আয় ১০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি হবে। কৃষক ও পশুপালকদের গড়পড়তা আয় ৩ হজার ৮শো ২০ ইউয়ান রেনমিনপি হবে। এটিও পাঁচ বছরের আগে দ্বিগুণ বেড়েছে।'
তিনি আরো বলেছেন, শিল্প দ্রুত উন্নয়নের কারণে অর্থনীতির বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়। দ্বিতীয় শিল্প গত পাঁচ বছরে প্রতি বছর গড়পড়তা শতকরা ৩৮.৬ ভাগ বেড়েছে। তাহলে আগে পশুপালন করে উপর্জন করে থাকার সিলিনকুওলে কেন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতি উন্নয়ন করে? সিলিকুওলে শিল্প উন্নয়নের ধারণা কি?
আগে পশুপালন হল সিলিনকুওলের একমাত্র মেরুদন্ত স্থানীয় শিল্প। সেজন্য পশুর সংখ্যা অনেক বাড়ানো ছিল। সিলিনকুওলের পশুর সংখ্যা ছিল অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মোট সংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। সিলিনকুওলে ছিল স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বৃহত্তম পশুপালন ক্ষেত্র। পশু সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্যের মূল ক্রমান্বয়ে বাড়ার কারণে গত শতাব্দীর ৯০ দশকের শেষ দিকে সিলিনকুওলের পশুপালকের গড়পড়তা আয় সারা দেশের চেয়ে ১ হাজার ইউয়ান রেনমিনপির বেশি ছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সাল থেকে গত শতাব্দীর শেষ দিক পর্যন্ত সিলিকুওলের পশুপালন ক্ষেত্রের লোকসংখ্যা আগের চেয়ে দ্বীগণ বেড়েছে ও পশুর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। তৃণভূমি প্রবল দায়িত্ব পালন করবে না।
এরপর, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সিলিনকুওলে প্রবল খর ঘটে। সেজন্য ঐতিহ্যিক উন্নয়নের পদ্ধতিতে অর্থনীতি উন্নত হবে না। সিলিনকুওলে কঠোর চ্যালেঞ্জ সম্মূখীন ছিল।
সিলিনকুওলে অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি শহর এর্দোস, হুহহোট ও পাওথৌর অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছে যে, এ তিনটি শহরের অভিজ্ঞতা হল শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতি উন্নয়ন করা।
সিলিনকুওলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রত্যাক পশুপালককে শহরে হস্তান্তর করলে, প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার তৃণভূমির প্রাকৃতিক চাপ প্রশমিত হবে। এক ৫ বর্গ কিলোমিটারের পরিবেশ সুরক্ষামূলক বাইরে খনি নির্মাণ করলে শিল্প অর্থনীতির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি বাড়বে। এরফলে শুধু যে কর বাড়বে তা নয়, বরং এক হাজারেরও বেশি পশুপালককে কর্মস্থানের সুযোগ সরবরাহ করবে। যাতে এক হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি তৃণভূমি স্থায়ী সুরক্ষা করা যায়।
২০০৩ সালের জুলাই মাসে সিলিনকুওলে অর্থনীতি কাজকর্ম বিষয়ক সম্মেলনে শিল্পের উন্নয়ন অর্থনীতি নির্মাণের কেন্দ্র হিসেবে শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে পশুপালনের উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও পশুপালকদেরকে শহরে হস্তান্তর ত্বরান্বিত ও পশুর সংখ্যা কমানো করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে তৃণভূমির চাপ প্রশমিত ও সম্প্রীতিময় উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যায়।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের শেষ দিক পর্যন্ত ২শোরও বেশি ব্যাপক শিল্প-প্রতিষ্ঠান সিলিনকুওলেতে কার্যলয় প্রতিষ্ঠা করে। চীনের ৫শো সেরা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টি, চীনের পাঁচটি বৃহত বিদ্যুত্ কেন্দ্রের মধ্যে চারটি ও চীনের ১৩টি বৃহত কয়লা খনি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি সিলিকুওলেতে বাণিজ্য করে।
শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি সিলিনকুওলে পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারের ওপর আরো বেশি দৃষ্টি সজাগ রাখে। সিলিনকুওলেতে বাণিজ্য করা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুল সম্পর্কে সিলিনকুওলে সরকার কঠোর পরীক্ষা ও পরিচালনার ব্যবস্থা নেয়। হুও চিনবিং বলেছেন,
(রে ৩)
'সিলিনকুওলে অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপার হল আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের আকার ছোট, প্রযুক্তি অনগ্রস ও পরিবেশ দুষণ, আমরা তাকে সিলিকুওলেতে প্রবেশের অস্বীকার করি। বিশেষ করে জ্বালানী সম্পদ আবিশ্কারের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের সংস্থাকে পরিবেশ সুরক্ষার পরীক্ষা, দুষণ প্রতিরোধ ও প্রকৃতি পুনরুদ্ধা এবং পরিকল্পনা প্রবেশ অনুমদনের কাজ জোরদার করার অনুরোধ জানিয়েছি।'
সিলিনকুওলে সম্প্রীতিময় উন্নয়ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় শুধু যে অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের ওপর দৃষ্টি সজাগ রাখে তা নয়, বরং যথাযথভাবে পশুপালন প্রচার, প্রাকৃতিক অভিবাসী ও পশুপালন ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ উন্নয়নসহ ধারাবাহিত বহুমূখী ব্যবস্থা নেয়।
উত্তর চীনের তৃণভূমির প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা, সবুজি পশুপালন সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্য উত্পাদন কেন্দ্র, জ্বালানী সম্পদ ও ভেরী শিল্প কেন্দ্র নির্মাণ হল সিলিনকুওলের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, তৃণভূমির নাগরিকরা তাঁদের সাহস ও বৃদ্ধি দিয়ে ভালভাবে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবেন।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা অর্থনীতির অগ্রযাত্রা নামক সাপ্তাহিক বিশেষ অনুষ্ঠানটি শুনলেন। আপনারা ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আশা করি, আপনারা আগামী সপ্তাহে আবার এ সময়ে আমাদের অনুষ্ঠানটি শুনবেন।
|