v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-12 16:08:32    
বাতাসের মধ্যে হুইয়াং গাছ

cri

    যারা চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে বসবাস করেন , তাদের নিশ্চয় এখনো মনে আছে ২০০২ সালের বসন্তকালের সেই ভয়ংকর বালিঝড় । তখনকার পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ , সেই ভয়াবহ বালিঝড়ের উত্স ছিল ২০০২ সালের ১৪ মার্চ অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলাশান এলাকায় । ১৫ মার্চ বিকেলে বালিঝড়টি পেইচিংয়ে পৌছে । এটি একটানা ৪৯ ঘন্টা স্থায়ী ছিল । বালিঝড়টির উচ্চতা ছিল সাড়ে ৩ হাজার মিটার । ২০ মার্চ বালিঝড় দ্বিতীয়বারের মত পেইচিংয়ে আক্রমণ করে । এটি ৫১ ঘন্টা স্থায়ী ছিল । এবারের বালিঝড়ের ধুলার পরামাণ ৩০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে । ২০০২ সালের বালিঝড় সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে । সংগে সংগে অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পশ্চিমাংশের বিশাল মরুভূমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । সেখানকার একের পর এক অচেনা স্থান আস্তে আস্তে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে । সেগুলোর মধ্যে আলাশান অন্যতম ।

    ২০০২ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টিভি কেন্দ্রে " বাতাসের মধ্যে হুইয়াং গাছ" শিরোনামে একটি টিভি নাটক প্রচারিত হয় । এ নাটকে অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলাশান বিভাগের এচিনা জেলার মরুভূমি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আদর্শ ব্যক্তি ইয়ুংছিংচাপুর আসল কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । নাটকটির নায়িকা ইয়ুংছিংচাপু মরুভূমি প্রতিরোধ ও গাছ লাগানোর জন্যে রোজ কাজ করার আগে তার ছেলেকে একটি গাছের সংগে বেধে বহু দূরে গিয়ে পানি নিয়ে গাছগুলোর উপর ঢেলে দিতেন । অথচ সারা গ্রীস্মকাল ধরে তার লাগানো গাছের চারা নিমেষের মধ্যে প্রলয়ংকরী ঝড়তুফানের ছোবলে বিনষ্ট হয়ে যেতো । এ দৃশ্য দেখে নাটকটির নায়িকা মরুভূতিতে পড়ে যেতেন এবং কেঁদে উঠতেন । কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিজের চোখের জল মুছে ফেলে আবার সাহসের সংগে উঠে দাঁড়াতেন । তিনি তার চিকন শরীর নিয়ে প্রচন্ড বাতাসের মধ্যে ঘুরে ঘুরে দিনের পর দিন হলুদ বালির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন । এ কাহিনী অনেকের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে ।

    এ নাটকের নায়িকা ইয়ুংছিংচাপু হচ্ছে মরুভূমির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বহ আদর্শ ব্যক্তিদের একজন শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি । তাদের অভিন্ন স্বপ্ন হচ্ছে মরুভূমি প্রতিরোধ করা এবং ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো । অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের সংবাদদাতা এ অঞ্চলের এচিনা জেলায় গিয়ে এ নাটকের নায়িকা ইয়ুংছিচাপুর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । আমাদের সংবাদদাতা গাড়িতে করে জেলা সরকারের অফিস থেকে রওয়ানা হয়ে এঁকেবেঁকে পাথরের পথ দিয়ে আধা ঘন্টা চলার পর দেখতে পেলেন , সামনে রয়েছে এক বিশাল সবুজ হুইয়াং গাছের বন । আমাদের গাড়ির ড্রাইভার বললেন , ইয়ুংছিংচাপু বিশ বছর আগে যে গাছের চারা লাগিয়েছেন , এখন সেগাছগুলো এক বিস্তীর্ণ বনে পরিণত হয়েছে । স্বচোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না যে , একজন দুর্বল মহিলা কেমন করে ১ হাজার ৩ শ'রও বেশি হেক্টর মরুভূমি কে এখনকার সবুজ বনে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন ।

    ইয়ুংছিংচাপুর বাড়ি ঠিক এ সবুজ বনের মধ্যে অবস্থিত । আকাশচুম্বী হুইয়াং গাছগুলো মৃদু বাতাসের মধ্যে নড়চড় করছে । দূর থেকে ভেসে আসছে লাল উইলো গাছের ফুলের সুগন্ধ । এমন পরিবেশের মধ্যে লোকেরা সহজে আরাম বোধ করেন । ইয়ুংছিংচাপু আমাদের সংবাদদাতার কাছে তার কাহিনী শোনালেন । তিনি বলেন ,

    ১৯৮৭ সালের জুন মাসে আমি সুমু মহকুমার সরবরাহ ও বিক্রি সংস্থার চাকরী ছেড়ে আমার স্বামী কেনতেংয়ের সংগে আমাদের দেশের বাড়ি - কাছা গ্রামে ফিরে এলাম । তখন আমাদের গ্রামে একটি পরিত্যক্ত অনাবাদী মরুভূমি বিষাক্ত আগাছায় ভরা ছিল । বহুবার জরীপের কাজ চালিয়ে আমি টের পেলাম , এ মরুভূমি এচিনা নদীর কাছে অবস্থিত । প্রতি বছর বসন্তকালে এ নদীর পানি ব্যবহার করা যায় । তাই আমি এ মরুভূমি ঠিকাদারি নিয়েছি ।

    প্রথম বছর তাদের সমস্ত সম্পত্তি ছিল কেবল একটি মংগোলিয় তাঁবু ও ২৭০টি ছাগল । গ্রীস্মকালে ইয়ুংছিংচাপু তীব্র রোদের মধ্যে যেখানে বিষাক্ত আগাছা কম , সেখানে ছাগল চড়াতেন । শরতকালে তিনি ও তার স্বামী লাল উইলো দিয়ে ছাগলের আস্তানা খাড়া করলেন এবং ২.৬ হেক্টর ঘাসের গুদাম নির্মাণ করলেন । শীত শুরু হওয়ার আগে তারা ছাগলের জন্যে কিছু খাবার কিনে কোনোক্রমে শীতকাল কাটাতেন । তিনি বলেন ,

    প্রাকৃতিক পরিবেশের নিরন্তর অবনতি ও জীবনযাত্রার দুরূহতা থেকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, আর বসে থাকলে চলবে না । ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে এবং তৃণভূমি গড়ে তুলতে হবে । আমি আমার সমস্ত আমানত দিয়ে ৬০০ মিটার লম্বা একটি বাঁধ নির্মাণ করলাম, ২০০ মিটার লম্বা একটি প্রধান খাল ও ১৬টি নালা খনন করলাম এবং বিশ বাইটি ছোট বাঁধ নির্মাণ করলাম , যাতে এ খাল ও নালা তৃণভূমির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে । বসন্তকালে বিষাক্ত আগাছা সবুজ হয়ে উঠার আগে আমি একটি ট্রাক্টর ভাড়া করে বিষাক্ত আগাছা দূরীকরণের কাজ চালালাম । আমি আবার ঘাসের গুদামের আশেপাশে নালা কেটে পানি এনে ৭০০টি গাছ লাগিয়েছি ।

    ইয়ুংছিংচাপু বহু দু:খকষ্ট স্বীকার করে অনাবাদী মরুভূমিকে সবুজ উদ্যানে পরিণত করেছেন । কাছা গ্রামের পশুপালকরা বিস্ময়ের সংগে দেখতে পেয়েছেন যে , এক সময়ের অনাবাদী মরুভূমি তে এখন লাল উইলোর ফুল ফুটছে । বিশাল বিশাল কাশবন ও লাল উইলোর বন সেকালের পাথরে ভরা মরুভূমির স্থলাভিষিক্ত হয়েছে । গত বিশ বাইশ বছরে ইয়ুংছিংচাপু ১ লাখেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন । তিনি অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তথা সারা দেশের একজন আদর্শ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন । তিনি ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে আলাদা আলাদাভাবে পশুপালকদের পক্ষ থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চদশ ও ষোড়স জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন ।

    আমাদের সংবাদদাতা এচিনা জেলার বন ব্যুরোর পরিচালক থান চি কাংয়ের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি বলেন ,

    এচিনা সবুজ উদ্যান হচ্ছে চীনের থেংগলি , উলানপুহে ও পাতানচিলিন মরুভূমি এবং মংগোলিয়ার মধ্যাংশের বিশাল মরুভূমির মিলন প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বনানী-বলয় । এ কয়েকটি বিশাল মরুভূমির মিলন ঘটলে , তা সরাসরি চীনের হোসি বারান্দা , নিং সি সমতলভূমি তথা চীনের গোটা উত্তর-পশ্চিমাংশের উপর হুমকী প্রদর্শন করবে । তাই এচিনা সবুজ উদ্যান রক্ষা করার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত তাত্পর্য রয়েছে । এচিনার জনগণও এর জন্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ।