আফগান তালিবান সশস্ত্র সংস্থার মুখাপাত্র ইউসুফ আহমাদি ১০ সেপ্টেম্বর বলেছেন, তালিবান সশস্ত্র সংস্থা আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। এর আগে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তালিবানের উদ্দেশ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের আহ্বানের জবাবে তারা এ কথা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কারজাই-এর উল্লেখিত আহ্বান জানানোর সরাসরি কারণ হচ্ছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতিশীল অবস্থা। এ থেকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সংকটাবস্থাও প্রতিফলিত হয়েছে।
আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাই ৯ সেপ্টেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তালিবান সশস্ত্র সংস্থার প্রতি সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে আফগানিস্তানের সংঘাতকবলিত পরিস্থিতির অবসান ঘটানো। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আফগান সরকার তালিবানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আয়োজন করে নি। কারণ, তালিবানের যোগাযোগের ঠিকানা জানা সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি বলেন, এমন একটি স্থান থাকলে যে কোন এক স্থানে আমি প্রতিনিধি পাঠিয়ে তালিবানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবো। যে কোন একটি সংস্থা যদি প্রকাশ্যে স্বীকার করে যে, তারাই হচ্ছে তালিবান সংস্থা, তাহলে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করবো। এ প্রসঙ্গে তালিবানের মুখপাত্র আহামাদি ১০ সেপ্টেম্বর বলেছেন, আফগানিস্তানের জাতীয় স্বার্থের জন্য তালিবান আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে ইচ্ছুক। এ পর্যন্ত তালিবান প্রথমবারের মতো এ ধরণের বক্তব্য দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, তালিবানের সঙ্গে আলোচনা করতে কারজাই যে রাজী হয়েছেন তা হচ্ছে অক্ষমতার আচরণ। ২০০৬ সালের পর আফগানিস্তানের নিরপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে এবং চলতি বছর প্রতিদিনই অবনতিশীল হচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ১৯ মাসের মধ্যে মোট ৭০০০ লোক নানা ধরণের সহিংস তত্পরতায় প্রাণ হারিয়েছে। জনমত মনে করে যে, আফগান যুদ্ধের মাধ্যমে তালিবানের ক্ষমতাকে ভেঙ্গে দেয়ার পর এখনকার আফগান নিরাপত্তা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আরো উদ্বেগজনক অবস্থা হলো, এ বছরের শুরু থেকেই সহিংস তত্পরতায় নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। তাবলিবানসহ সরকার বিরোধী সশস্ত্র ব্যক্তিরা জিম্মীকে অপহরণ এবং আত্মঘাতি হামলাসহ বিভিন্ন উপায়ে হামলা চালিয়েছে।
আফগানিস্তানের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মূল কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সন্ত্রাসদমন নীতি আফগানিস্তানে কার্যকর হয় নি। ২০০১ সালের আফগান যুদ্ধের পর যুক্তরাস্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের তালিবান সশস্ত্র সংস্থা নির্মূল করা এবং আল কায়েদার নেতা বিন লাদেনকে গ্রেফতারের উপর প্রধান দৃষ্টি রেখেছে এবং এতে অনেক জনশক্তি ও অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছরের ফলাফল হলো বিন লাদেন গ্রেফতার হয়নি এবং তালিবান সশস্ত্র সংস্থা আবারো চাংগা হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো অবণতির দিকে যাচ্ছে।
বর্তমানে ৩৭ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত ন্যাটো বাহিনী এবং ১৩ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন রয়েছে। গত বছরের পর আফগানিস্তানে বিদেশী বাহিনী এবং আফগান সরকারী বাহিনী তালিবান সশস্ত্র ব্যক্তিকে নির্মূলের জন্য যথাক্রমে ব্যবাপকভাবে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযান কিছু মাত্রায় তালিবান সংস্থার উপর আঘাত হানলেও এতে অনেক নিরীহ লোক হতাহত হয়েছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে প্রতিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। সামরিক আঘাতের পরও এসব অঞ্চল কার্যত নিয়ন্ত্রে নেয়া সম্ভব হয় নি। তাই সামরিক হামলার ফলাফল তেমন ভালো ছিল না। তা ছাড়া, তালিবান সশস্ত্র শক্তিকে দমনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন জোটও এক হয়ে কাজ করছে না। অভ্যন্তরীণ চাপ বিবেচনা করে ন্যাটোর কয়েকটি প্রধান সদস্য দেশ আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলসহ আরো বিপদজনক অঞ্চলে বাহিনী পাঠিয়ে সরকার বিরোধী সশস্ত্র শক্তির সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে অনিচ্ছুক। (লিলি)
|