গত দু বছরে চীনের মূলভূভাগের স্টক মার্কেটের সুচক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে । এটা দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । এ বছর চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চার বার আমানতের সুদের হার এবং সাত বার রিজার্ভ ফান্ডের অনুপাত বাড়িয়ে দিয়েছে । বিশ্বের কোনো কোনো দেশে স্টক মার্কেটের উঠানামা হয়েছে । তবুও চীনের মূলভূভাগের স্টক মার্কেটে শেয়ার মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকাতে পারে নি । কাজেই অনেকে মনে করেন , চীনের মূলভূভাগের স্টক বাজারের ভবিষ্যত উজ্জ্বল । তবে কিছু কিছু লোক মনে করেন , স্টক মার্কেটের ঝুঁকির উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ।
২০০৫ সালের ৬ জুন থেকে চীনের স্টক মার্কেটে পর পর ২৬ মাস ধরে শেয়ারের সুচক বৃদ্ধি পাচ্ছে । সাংহাইয়ের স্টক মার্কেটে শেয়ারের সূচক ৯৯৮ পয়েন্ট থেকে ৫৪০০ পয়েন্টে উঠেছে । সেনচেনের শেয়ারের সুচক ২৫৯০ পয়েন্ট থেকে ১৮ হাজার পয়েন্ট উঠেছে । সাংহাই ও সেনচেনের দুটি স্টক মার্কেটের মোট মূল্য দু বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সাত গুণ বেড়ে ২.৪ বিলিয়ন ইউয়ানে দাড়িঁয়েছে ।
স্টক মার্কেটের এই অনুকুল প্রবণতার দরুন সমাজের আরো বেশি অর্থ আকর্ষণ করছে । বর্তমানে সাংহাই ও পেইচিংয়ের দুটি শেয়ার এক্সচেঞ্জ বাজারে নতুন শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা গত বছরের প্রথম দিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেড়ে দশ কোটি ছাড়িয়েছে । এ বছরের মার্চ মাস থেকে ব্যাংকে নাগরিকদের আমানতের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু হয় । চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটির রিপোর্ট থেকে জানা গেছে , চীনের ব্যাংকে রাখা কিছু অর্থ সোজা স্টক মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়েছে । এটা স্টক মার্কেটের আরো সোচ্চার হওয়ার অন্যতম কারণ । চীনের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও স্টক গবেষণাগারের প্রফেসর চাও সি চুন বলেছেন , স্টক মার্কেটের সুচক উঠার কারণ বহুমুখী । এর মধ্যে রয়েছে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন , শেয়ার বাজারে সঠিকভাবে শেয়ার লেনদেনের প্রচেষ্টা, শেয়ার বাজারের সংস্কার ইত্যাদি । এসব কারণগুলো শেয়ারহোল্ডারের আশ্বাস বাড়িয়েছে দিয়েছে । ফলে স্টক মার্কেটে বিনিয়োজিত অর্থ আরো বাড়ছে ।
চাও সি চুন আরো বলেছেন , চীনে ব্যাংকের সুদের হার দীর্ঘকাল ধরে নিম্ন হারে রয়েছে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে । তারা স্টক মার্কেটের দ্রুত প্রসার সম্পর্কে আশাবাদী । চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিকবার সুদের হার ও রিজার্ভ ফান্ডের অনুপাত বাড়ানোর ব্যবস্থা যে স্টক মার্কেটের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে , সে সম্পর্কে শেয়ার হোল্ডাররা তেমন একটা ভাবেন না । এ ছাড়া , চীনের মূলধন বাজার পুরোপুরি বিশ্বমুখী হয় নি । তাই চীনে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও অর্থের পরিমান সীমিত । তাই আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের উঠানামা চীনের স্টক মার্কেটে বেশি প্রভাব ফেলে না ।
চীনের স্টক মার্কেটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নাগরিকদের মূল্যায়ন এক নয় । শেয়ার হোল্ডাররা , বিশেষ করে মাঝারী ও ক্ষুদ্র শেয়ার হোল্ডাররা মনে করেন , চীনের অর্থনীতির ধীরগতির উন্নয়নের কল্যাণে স্টক মার্কেটের সুচক আরো উঠবে । কিছু বিশেষজ্ঞও মনে করেন , অর্থনীতি উন্নয়নের ফলে চীনের স্টক মার্কেটের সুচক আরো উঠবে । তা ছাড়া চীনের মোবাইল কোম্পানি , তেল কোম্পানি ও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার স্টক মার্কেটে পাঠানো হবে। এটা স্টক মার্কেটকে আরো সোচ্চার করে তুলবে ।
প্রফেসর চাও সি জুন মনে করেন , চীনের স্টক মার্কেট চীনের অর্থনীতির মতো অতিরিক্ত উত্তাপ রয়েছে । তিনি বলেছেন , স্টক মার্কেটের সুচক দ্রুত উঠছে , তবে অর্থনীতির উন্নয়ন ও শেয়ারের সুচক উঠার উপর সহায়তার সামর্থ্য দুর্বল হচ্ছে । স্টক বিশ্লেষক চাও কান বলেছেন , চীনের শেয়ারহোল্ডাররা , বিশেষ করে মাঝারী ও ক্ষুদ্র শেয়ার হোল্ডাররাঅন্ধভাবে শেয়ার কিনছে , তারা শেয়ার কেনাবেচার ঝুঁকি বিবেচনা করছেন না , তাদের জন্য এটা অত্যন্তবিপদজনক। ( ফোং সিউ ছিয়েন )
|