প্রথমেই আমরা শ্রোতাবন্ধুদের নিয়ে পেইচিংয়ে অবস্থিত চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘরে যাবো । এখানে বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম হানটুনগোসারাস গিগানটেস, চীনা নিথোসারাসসহ বিভিন্ন ধরনের পুরনোকালের জীবাশ্ম এবং ১৭ লাখ ,৭ লাখ ও ২ লাখ বছরের আগের মানবজাতির জীবাশ্ম রয়েছে । তা ছাড়া নানা ধরনের শ্রেষ্ঠ পাথর ও ইয়াশম রয়েছে । চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘর ৯০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে এবং চীন ও এশিয়ার বৃহত্তম ভূতত্ত্ব বিষয়ক যাদুঘর । তা পেইচিংয়ের সিছেং এলাকায় অবস্থিত, ১৯১৬ সালে নির্মিত । এর আয়তন ১১ হাজার বর্গমিটার । যাদুঘরে নানা ধরনের প্রদর্শন সামগ্রী প্রায় ২ লাখ টিরও বেশি রয়েছে, মোট ৫টি স্থায়ী প্রদর্শনী ঘর এবং ২টি অস্থায়ী প্রদর্শনী ঘর রয়েছে । যদিও চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘরের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক সম্প্রসারণ, নির্মাণ ও মেরামত করার পর একটি আধুনিক স্থাপত্যের মত দেখায় । যাদুঘরের কর্মী চাও খো রান বলেছেন, চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘর অধিকাংশ প্রাকৃতিক যাদুঘরের মতো প্রদর্শন সামগ্রী জমিয়ে রাখা , বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা করা ও সমাজকে তথ্য প্রদানের মত তিনটি ঐতিহ্যিক ভুমিকা রয়েছে । প্রথম ভুমিকা হচ্ছে প্রদর্শন সামগ্রী সংরক্ষিত রাখা । যাদুঘরের দেশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ভূতত্ত্ব বিষয়ক প্রদর্শন সামগ্রী সংগ্রহ করা । সামগ্রীর মধ্যে ভূতত্ত্ববিদ্যার নানা ক্ষেত্রে রয়েছে । সংখ্যা এবং গুণগতমান সবই এশিয়ার শীর্ষ স্থানে দাঁড়িয়েছে ।
চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশ করলে, পর্যটকরা কক্ষে সংরক্ষিত কয়েক লাখ শ্রেষ্ঠ প্রদর্শনী সামগ্রী দেখতে পারবেন । যাদুঘরের মূল্যবান পাথরের কক্ষে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ইয়াশম এবং পশ্চাত্য দেশগুলোর মূল্যবান পাথরের সামগ্রী নিয়ে সাজানো । প্রদর্শনী কক্ষে নানা ধরনের শ্রেষ্ঠ মূল্যবান পাথর রাখার কারণে সেখানে প্রবেশ করার পর আপনাদের চোখে নানা রঙয়ের সুন্দর সুন্দর পাথরের আলো প্রতিফলিত হবে । বিশেষ করে কক্ষে একটি ৩.৫টন ওজনের বিরাট স্ফটিকের রয়েছে, তা হল বিশ্বের বৃহত্তম স্ফটিক রাজা । এর উচ্চতা ১.৭ মিটার, এক জন পুরুষের উচ্চতার মতো । পর্যটকরা আনন্দ চিত্তে তার সঙ্গে ছবি তুলতে পছন্দ করেন । স্ফটিক হচ্ছে মূল্যবান পাথরের অন্যতম , সাধারণত রত্ন ও বিজ্ঞান যন্ত্রপাতির কাঁচামালে ব্যবহৃত হয় । প্রাকৃতিক পরিবেশে অধিকাংশ স্ফটিক পাথরের আকার ষড়ভুজ স্তম্ভের মত । যাদুঘরের স্ফটিক রাজার আকারও প্রায় একই ।
যাদুঘরের আরেক কর্মী ফু ছুন ইয়াং বলেছেন, স্ফটিক রাজার আগে বিশ্বে কখনো এতো বেশি স্ফটিক পাথর খুঁজে পাওয়া যায় নি । তাদের যাদুঘরে স্ফটিক পাথরের মতো মূল্যবান সামগ্রীর সংখ্যা অনেক বেশি ।
আমাদের যাদুঘরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মূল্যবান প্রদর্শনী সামগ্রীর সংখ্যা অনেক বেশি । যেমন স্ফটিক রাজা এবং প্রাচীনকালের জীববিদ্যার প্রদর্শনী কক্ষের চীনা ড্রাগন পাখির জীবাশ্ম। তা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যিক পাখির পালকে লুপ্তের জীবাশ্ম। তার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রমাণিত হয়েছে যে, পাখির পূর্বপুরুষ হল লুপ্ত।
প্রাগৈতিহাসিক জীববিদ্যা কক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম লুপ্ত---হানটুনগোসারাস গিগানটেসের জীবাশ্ম রয়েছে । তার উচ্চতা ৮ মিটার, দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার হবে বলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শন সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে । ১৯৮৮ সালে চীনের ভূতত্ত্ব যাদুঘরের জাপানে অনুষ্ঠিত 'হানটুনগোসারাস গিগানটেসের' প্রদর্শনী সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে । এ প্রদর্শনী জাপানে ৭৪দিন স্থায়ী হয় । প্রদশর্কের সংখ্যা ১৫ লাখ পার্সন টাইমসেরও বেশি । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ভুতত্ত্ব যাদুঘর এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাচীনকালে পাখির গবেষণা কাজ শুরু করে । গবেষণার ফলাফল বিশ্বের প্রাচীন জীববিদ্যায় অনেক প্রভাব ফেলেছে । ২০০২ সাল থেকে যাদুঘর ইউরোপে তিন বছরব্যাপী 'লুপ্ত ও পাখি' নামক পালাক্রমিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে । তা আন্তর্জাতিক গবেষণা মহলের ব্যাপক মনোযোগ এবং জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ।
1 2
|