২ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত এপেকের অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন এবং সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিক সম্মেলনে আবহাওয়ার পরিবর্তন ও জ্বালানি-সম্পদের নিরাপত্তা ছিলো প্রধান আলোচ্য বিষয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চীনের জাতীয় অফশোর অয়েল কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফু ছেং ইয়ু বলেছেন, চীনের তেল কোম্পানি বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাপারে কিছু দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। এবং এ থেকে তাদের মধ্যে "চীনের জ্বালানি-সম্পদ সমপ্রসারণ তন্ত্র" দেখা দিয়েছে। আসলে বিভিন্ন দেশের তেল কোম্পানি বিদেশে যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে, তা শুধু চীনের নয়।
এবারের এপেকের ধারাবাহিক সম্মেলনে "জ্বালানি-সম্পদ, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং এশীয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন" শীর্ষক ফোরামের আয়োজন করা হয়েছে। এই ফোরামে চীনের জাতীয় অফশোর অয়েল কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফু ছেং ইয়ু জোর দিয়ে বলেছেন, জ্বালানি-সম্পদ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা খুবই দরকার এবং গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন:
"জ্বালানি-সম্পদের নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শুধু একটি দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ নয়। তা হলো গোটা মানব জাতি'র জন্য চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। একটি দেশ বা কোম্পানির একার পক্ষে এসব সমস্যা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এতে সরকার ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা চালানো দরকার।"
অন্য পক্ষে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিভাগসহ বিভিন্ন কর্পোরেশন বিশ্বায়নের মাধ্যমে আরো ভাল ও সস্তা কাঁচা মাল পাওয়ার চেষ্টা করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমা দেশের কোম্পানিগুলো তাদের আন্তর্জাতিক কৌশলের মাধ্যমে নিজ নিজ কোম্পানির ব্যবসা বিশ্বের বিভিন্ন তেল-সমৃদ্ধ দেশ ও অঞ্চলে সম্প্রসারণ করেছে। যেমন এক শতাব্দী ধরে শেল গ্রুপ ব্রুনেই'র তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান আবিষ্কারকারী ও ব্যবসায়ী হয়ে আসছে।
চীনের জাতীয় অফশোর অয়েল কর্পোরেশন হলো চীনের তিনটি বৃহত্তম তেল কোম্পানর অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই কোম্পানি সক্রিয়ভাবে বিদেশে তাদের ব্যবসা উন্নয়ন করছে। বর্তমানে চীনে অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি সম্পদের চাহিদাও বেড়েছে। কেউ কেউ মনে করেন চীন এখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জ্বালানি-সম্পদ খুঁজছে এবং "চীনের জ্বালানি-সম্পদ সম্প্রসারণ তন্ত্র" দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে ফু ছেং ইয়ু বলেছেন, বিদেশে তেল কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের তত্পরতা শুধু চীনা কোম্পানি চালাচ্ছে তা নয়।
"বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চীনা কোম্পানির শামীল হওয়ার তত্পরতা হলো একটি কোম্পানির উন্নয়নের চাহিদা। তা শুধু চীনের জ্বালানি -সম্পদের জন্য প্রয়োজন তা নয়। জ্বালানি-সম্পদ ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য কোম্পানিও একই কাজ করছে। এবং তারা আমাদের চেয়েও বেশি করছে। এটি একটি কোম্পানির উন্নয়নের এক রকম সাধারণ পদ্ধতি।"
ফু ছেং ইয়ু আরো বলেছেন, সকল কোম্পানির মতো চীনের তেল কোম্পানি প্রথমে নিজের জ্বালানি-সম্পদ ব্যবহারের ফলপ্রসূথা বিবেচনা করে। বর্তমানে চীন অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে হাই-টেক ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহার কমাচ্ছে।
ফু ছেং ইয়ু জোর দিয়ে বলেছেন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তেল কোম্পানি বিদেশে তেল উত্তোলনের চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনা আরো ভাল। তিনি বলেছেন:
"নিজের লাভ হিসাব না করে বিদেশে আবিষ্কৃত তেল স্বদেশে যে নিয়ে আসছে, এমন কোম্পানি নেই। বরং তারা স্থানীয় বাজারে তেল বিক্রি করে। চাহিদা থাকলে চীনও বাজারে তেল কিনবে।"
তিনি আরো বলেছেন, এখন চীনের তেল কোম্পানি সম্পর্কে এক রকম ভুল বোঝাবুঝি আছে, তা হলো চীনের তেল কোম্পানিগুলো যে জায়গায় যাবে সেখানকার তেল স্বদেশে নিয়ে আনবে। আসলে তা নয়। কোম্পানিগুলোকে বাণিজ্যিক পরিচালনার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। তাই চীনের জ্বালানি-সম্পদ সম্প্রসারণের কথা একেবারে ভিত্তিহীন।(ইয়াং ওয়েই মিং)
|