১৩ আগস্ট,সোমবার। ভোরবেলা ৫টায় আমরা সাত জন সি আর আই থেকে রওয়ানা হয়ে পেইচিং বিমান বন্দর যাই । সাড়ে ছয়টায় আমরা বিমান বন্দরে পৌঁছাই । লাগেজ দ্বীপান্তর হওয়ার পর সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের বিমান পেইচিং থেকে লাসার উদ্দেশ্যে আকাশে উড়ে যায় । দুপুর প্রায় ১১টায় আমরা লাসা'র কংকা বিমান বন্দরে পোঁছাই । বিমানের জানালা দিয়ে বাইরে দেখি নীল আকাশের গায়ে সাদা সাদা মেঘ ছড়িয়ে রয়েছে । চার পাশে নানা আকারের অনেক পাহাড় যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এতো সুন্দর এতো পরিস্কার ,এতো ঝল মনলে , মন যেন সেখানে হারিয়ে যেতে চায় । এ সময় বিমানের পরিসেবকরা বলে ওঠে এখন আমরা লাসায় । সবাই ধীরে ধীরে হাঁটুন ভালো হবে । কারণ , এখানকার বাতাসে চীনের অন্যান্য জায়গার বাতাসের চেয়ে অক্সিজেন খুব কম । তারপর আমরা সাবধানে নিজেদের লাগেজ নিয়ে বিমান বন্দরের বাইরে যাই । যাওয়ার পথে কেউ কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে নি । তিব্বত বেতারের সহকর্মীরা আমাদের দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই স্বাগত জানার জন্য প্রত্যেকের গলায় সাদা হাদা পড়িয়ে দেন । আমাদের মন অনেক আনন্দিত ,কিন্তু মালভূমির বায়ু কম থাকার কারণে সবার মাথা ব্যথা এবং নিশ্বাঃস নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ।
আমাদের এবারের সাক্ষাত্কারের সহকর্মী তিব্বতী জাতির বন্ধু লুওসোংজাশি আমাদের বলেছেন, আপনারা লাসায় এক বা দুই দিন থাকার পর অসুস্থ ভাব অনেকটা কেটে যাবে ।কোনো চিন্তা নেই । গাড়ি ছুটে চলেছে । প্রায় দেড় ঘন্টা পর আমরা লাসা শহরে প্রবেশ করি । তিব্বত বেতারের নেতৃবৃন্দ আমাদের স্বাগতম জানিয়ে দুপুরের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান । আমাদের মঠাহ্ন ভোজে অনেক ঝাল খাবার রয়েছে । এখানে সিছুয়ান প্রদেশের খাবারই বেশি । তিব্বতীয় লোকজন ঝাল খাবার খেতে পছন্দ করেন । অনেক খিদে লাগার কারণে সবাই অনেক বেশি ভাত খেয়ে ফেলি । খাওয়ার পর আমার শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায় এবং মাথা ব্যথাও গুরুতর আকার ধারণ করে । সহকর্মীদের সাহায্যে আমি হোটেলে যাই এবং সারাটা বিকেল শুয়ে কাটাই । অন্য কর্মীরা ঔষধের দোকানে গিয়ে আমাদের জন্য তিব্বত মালভূমির পরিবেশ সহ্য করার বিশেষ ঔষধ ও অক্সিজেন কিনে আনে ।
সন্ধা ৬টায় আমি জেগে উঠি । মাথা ব্যথা এখন কিছুটা কমে গেছে এবং শ্বাস কষ্টও বলতে গেলে প্রায় ভালো হয়েছে । অন্যান্য কর্মীদের এখন মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে । আমাদের হোটেল পোতালা প্রাসাদের নিচে অবস্থিত। আমরা হোটেলের জানালা থেকে পোতালা প্রাসাদ দেখতে পারি । নীল আকাশের নিচে সাদা দেয়াল লাল ছাদের পোতালা প্রাসাদ অতি সুন্দর। খিদে লাগার কারণে আমরা সবাই বাইরে গিয়ে হেঁটে হেঁটে লাসার রাস্তার দৃশ্য দেখার পাশা পাশি রেস্টুরেন্ট খুঁজে থাকি এবং আমরা একটি হুনান খাবার রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাই । অনেক ঝাল খাবার খাওয়ার পর আমাদের মুখও গরম হয়ে যায় এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে । প্রতিদিন লাসায় প্রায় ১৪ ঘন্টারও বেশি সময় সুর্য আকাশে থাকে । এ কারণে লাসাকে সুর্যালোকের শহর বলেও ডাকা হয় ।
নৈশভোজ শেষে দিখে রাত ৯টায় আকাশ কিছুটা কালো হতে শুরু করে । আমরা হেঁটে হেঁটে লাসার রাতের দৃশ্য অনুভব করার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে নিজেদের শরীরের অবস্থা সমন্বয় করি । একটি ফলের দোকান থেকে লাসার আঙ্গুর ও আপেল কিনি । এর দাম পেইচিংয়ের চেয়ে একটু বেশি । কারণ এখানকার অনেক ফল চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে । ১২ আগস্ট থেকে লাসায় এক সপ্তাহব্যাপী সুয়েতুন উত্সব শুরু হয় । এ উত্সব হল লাসা শহরের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় দিবস। রাস্তার দুই পাশে নানা রঙয়ের বাতি রয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে লাসার দৃশ্য উপভোগ করে । রাতে লাসার দৃশ্য সকালের চেয়ে আরো সুন্দর ও মনরম হয়ে ওঠে এবং রাতের বেলায় অধিবাসীরা তাদের দিনের ক্লান্তি ভুলে ব্যস্ত হয়ে ওঠে বিনোদনের আনন্দে । হেঁটে হেঁটে অনেক দূরে যাওয়ায় একটা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেল ফিরে আসি । আজকে সবাই ক্লান্ত লাগে ,আজকের কথা এখানে শেষ করি,কালকে লাসার ভ্রমণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ।
|