২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বের বিখ্যাত গায়িকা পাভারোট্টি অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ইতালিতে মৃতুবরণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭১ বছর । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শক তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের জন্য এই অগ্ন্যাশয় ক্যানসার প্রতিরোধক পদ্ধতির কথা বলবো ।
কারো সহজভাবে অগ্ন্যাশয় ক্যানসার আক্রান্ত হয় ?
অগ্ন্যাশয় ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ধুমপান করা লোকের সংখ্যাই বেশি । পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ধুমপান করা লোকজনের অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া হার ধুপান না করা লোকদের চেয়ে ২ বা ২.৫ গুণেরও বেশি । এ রোগে আক্রান্ত হতে বয়সও ১০ থেকে ১৫ বছর আগে । কারণ সিগারেটের মধ্যে বিষাক্ত উপাদান রক্তনালীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থিতে প্রবেশ করে, ফলে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের সৃষ্টি করে । এ কারণে ৪০ বছর বয়সের বেশি পুরুষরা যদি অগ্ন্যাশয়ের রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের ধুমপান বন্ধ করে দিতে হবে এবং বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে । ভিটামিন সি এ্যানটিঅক্সিডেশনের ভুমিকা পালন করে । তা ক্যানসার সেলের উন্নয়ন প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
অনেকে মনে করে, অগ্ন্যাশয়ের স্ফীতি ও প্রদাহ এবং পিত্তের পাথর হচ্ছে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের প্রধান কারণ । যদি এ ধরনের রোগে আক্রান্ত না হলেও কি অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে যায় ? সম্প্রতি সুইডেনের গবেষকরা এক প্রবন্ধে বলেছেন, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ও পানীয় খেলে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে ।
গবেষকরা ৮ বছরের তদন্ত থেকে প্রমাণ করেছেন যে, প্রতিদিন দু'বার মিষ্টি পানীয় খাওয়ার লোকজন কখনো মিষ্টি পানীয় না খাওয়া লোকদের চেয়ে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি । কারণ অতিরিক্ত চিনি খেলে অগ্ন্যাশয়ের হজমের চাপ বাড়াতে হবে । অতিরিক্ত মেদ , অতিরিক্ত প্রোটিন খাবার পাকস্থলীর রাসায়নিক রূপান্তর বাড়ানোর পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের স্বাভাবিক রূপান্তরের জন্যও অসহায়ক । এ কারণে সবসময় অতিরিক্ত চিনি, মেদ, প্রোটিন খাবার খাওয়া লোকজন এখন থেকে কম মাংস , কম মিষ্টি পানীয় খাওয়া এবং বেশি যব জাত খাবার খাওয়া অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হবে ।
আরেকটি কথা রান্না করার সময় যদি তেলের তাপমাত্রা অনেক গরম , তাহলে মাংস রান্না করার সময় মাংসের প্রোটিন ক্যানসার সৃষ্টি করার বিষাক্ত উত্পাদনে পরিণত হবে । এ কারণে রান্না করার সময় পাত্রের তেলের তাপমাত্রা বেশি গরম না থাকা ভালো ।
জীবনযাত্রার উশৃঙ্খলতা হচ্ছে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি কারণ । এর মধ্যে খাবার খাওয়ার উশৃঙ্খলতা শরীরের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
যদি কেউ কেউ অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাহলে কীভাবে জানবেন ?
অগ্ন্যাশয়ের প্রধান সামর্থ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রূপান্তরিত রস তৈরী করে শরীরের রাসায়নিক রূপান্তর ত্বরান্বিত করা । অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের শুরুতে কোনো অসুস্থ্যতা অনুভব হবে না । কিন্তু যদি কারো চেহাড়ার রঙ হলুদ হয়ে যায় এবং কম সময়ের মধ্যে অনেক ওজন কমে যায় এবং পেটে ব্যথা হয়, তাহলে খুব সম্ভবত অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার গুরুতর সময়পর্বে প্রবেশ করে । তখন চিকিত্সা করতে পারে না । এ কারণে অগ্ন্যাশয় ক্যানসার এখন এক ধরনের বিপদ ও গুরুতর রোগে পরিণত হয়েছে ।
আপনার নিয়মিত জীবনে বেশি ব্যয়াম করা, কম মাংস খাওয়া এবং ধুমপান ও মেদ না পান করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে অগ্ন্যাশয় ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায় ।
|