প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন, এখন সাপ্তাহিক বিশেষ অনুষ্ঠান "অর্থনীতির অগ্রযাত্রা", পরিবেশন করছি আমি আবাম ছালাউদ্দিন।
(রে ১)
পণ্যদ্রব্য পরিবহনকারী একটি আন্তর্জাতিক ট্রেন মানচৌলি থেকে রওয়ানা হয়ে রাশিয়ায় যাচ্ছে।
'তৃণভুমির দিবালোক শহর' আখ্যায়িত মানচৌলি অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। তার কাছাকাছি হল চীনের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল। তার উত্তর দিকে হল রাশিয়া এবং পশ্চিম দিকে হল র্মঙ্গোলিয়া। মানচৌলি হল চীনের বৃহত্তম স্থল বন্দর। মানচৌলি এশিয়া ও ইউরোপের বৃহত্তম মূলভূভাগের সেতু হিসেবে মধ্যবর্তি পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। মানচৌলি হল চীনের পোওহাই উপসাগরীয় বন্দরগুলোর মধ্যে রাশিয়াসহ বিভিন্ন কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলো ও ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক, গুরুত্বপূর্ণ ও নূণ্যতম ব্যয়ের স্থল ও নৌ-পরিবহন বন্দর। বর্তমানে মানচৌলি বন্দর চীন-রাশিয়া বাণিজ্যের শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে।
(রে ২)
প্রতিদিন ভোরে বহু রুশ ব্যবসায়ী গাড়ীতে এই স্থল বন্দরের মধ্য দিয়ে মানচৌলি যান। তাঁরা সেখানে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য কেনেন। সে জন্য মানচৌলিকে রাশিয়ার মতই দেখায়। মানচৌলি শহরের বিভিন্ন বাজারে চীন, রাশিয়া ও র্মঙ্গোলিয়া ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ এবং দামাদামির দৃশ্যে ভরপুর। সড়কগুলোয় লক্ষ্য করা যায় ও দোকানগুলোর সাইনবোর্ডে চীনা ও রুশ ভাষায় লেখা। বাজার, রেসতোরাঁ, হোটেল ও বিভিন্ন সংস্থার বাইরে গাড়ী পার্কে অর্ধে গাড়ীই হল রাশিয়ার ব্যবসায়ীদের। মানচৌলি শহরে থাকা, ব্যবসা করা ও পর্যটনকারী রাশিয়া ও র্মঙ্গোলিয়া লোকসংখ্যা প্রায় ১০হাজার। বিভিন্ন হোটেলে থাকার হার শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি।
মানচৌলি শহরে ই উ নামক এক বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পণ্যদ্রব্য বহু কিস্তিতে, অগ্রিম বহু কিস্তিতে, আঞ্চলিকতা সম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য, চেইন স্টোরস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাণিজ্যের ব্যপ্তি রয়েছে।
চেচিয়াং প্রদেশের ই উ শহরের ব্যবসায়ী ফেংছিয়ান মিন ই উ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ব্যবসা করেন। তিনি বলেছেন, মানচৌলির রাশিয়ার সঙ্গে সুষ্ঠু বাণিজ্যিক পরিবেশের জন্য তিনি দক্ষিণ চীন ত্যাগ করে সেখানে ব্যবসা করেন। তিনি বলেছেন,
(রে ৩)
'এখানে আমি রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করি। আমি প্রধানত রাশিয়ায় পণ্যদ্রব্য রফতানি করি। আমি মনে করি মানচৌলির ভবিষ্যত্ আরো সুষ্ঠু হবে। এখানে অবকাঠামো নির্মাণ, চীন-রাশিয়া বাণিজ্য, লোকজন ও পণ্যের বিনিময় দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। আমার এখানে পুঁজিবিনিয়োগের প্রত্যয় রয়েছে।'
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর মানচৌলির বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ দিনে দিনে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের পুর্ণাঙ্গ ও 'কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক' নির্ধারণের পর রাজনৈতিক পরিবেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এটি মানচৌলি উন্নয়নের সুযোগ এনে দিয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালে অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আমদানি ও রফতানি প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে রফতানি ২.১৪১ ও আমদানি ৩.৮৬ মার্কিন ডলার ছিল। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ বেশি।
মানচৌলির শুল্কের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালের প্রথমার্ধে মানচৌলি বন্দরে মোট আমদানি ও রফতানি পণ্যদ্রব্যের পরিমান ছিল ১ হাজার ২ শো ৬০ টন, মূল্য ৪.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ১৫.৭ ও ৩০.৪ ভাগ বেশি। এটি ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। মানচৌলি বন্দরের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন,
(রে ৪)
'সড়ক বন্দর দিয়ে এখন প্রতি বছরে ৩০ বিলিয়ন টন পণ্য পরিবহণ করা হয় এবং ৩০ বিলিয়ন লোক যাতায়াত করে থাকে। রেলওয়ে বন্দরে প্রধানত পণ্য পরিবহন করা হয়। গত বছরে ২.১৭৩ কোটি টন পণ্যদ্রব্য পরিবহন করা হয়।'
বর্তমানে মানচৌলি বন্দরে প্রতি দিন প্রায় ১ হাজার ১শো গাড়ী যাওয়া-আসা করে। এরমধ্যে ২শো পণ্য পরিবহন গাড়ী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতি দিন যাতায়াতকারী লোক সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯হাজার ৫শো। সারা বছরে মানচৌলি বন্দরের মাধ্যমে যাতায়াতকারী লোকসংখ্যা প্রায় ১৮.৫ লাখ এবং তা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
একজন রাশিয়ার ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন,
(রে ৫)
'তিন বছরের আগে প্রথম মানচৌলি এসে আমার এ স্থানটি অনেক ভাল লেগেছে। মানচৌলির উন্নয়নের গতি অনেক দ্রুত। যদিও আমি এখানো চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করিনি, তবুও সুযোগ পেলে সহযোগিতা করবো।'
সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ার পাশাপাশি, মানচৌলি বন্দর ১০ লাখ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের আমদানি-রফতানি পরিমাণের সমর্থ্য ও আকার রয়েছে। বাণিজ্যিক পদ্ধতি আগের পণ্যের বিনিময়ে পণ্য থেকে এখন নগদ দিয়ে বাণিজ্যের পদ্ধতিতে পরিনত হয়েছে। আগে বিশাক্ত ইস্পাত ও রাসায়নিক সার আমদানির কাঠামো থেকে এখন কাঠ, তেল ও রাসায়নিক শিল্প উপকরণ আমদানির কাঠামোয় পরিনত হয়েছে এবং আগে সবজি, ফল, পোষাক ও পরিবারে ব্যবহৃত ইলেকট্রোনিক পণ্যদ্রব্য রফতানির কাঠামো থেকে তৈয়ারী যন্ত্র রফতানির কাঠামোয় পরিনত হয়েছে। মানচৌলি বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন,
(রে ৬)
'রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্য প্রধানত হল ইস্পাত, কাঠ, রাসায়নিক সার ও প্রাকৃতিক তেল। চীনের রফতানি পণ্যদ্রব্যগুলো প্রধানত হল সবজি ও ফল। মানচৌলি শহরের মুখোমুখী হল রাশিয়ার দু'টি শহর। সেখানে আবহাওয়া ঠান্ডা। সেজন্য সেখানে শতকরা ৯০ ভাগ সবজি ও ফল আমদানি হয়।'
মানচৌলি ইতিবাচকভাবে রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়া বাজারের চাহিদার সুযোগে সীমান্ত বাণিজ্যের উন্নয়ন করে। মানচৌলি বন্দরের এ বছরের বাণিজ্যিক লক্ষ্য হল পণ্য পরিবহনের পরিমাণ ২.৩ কোটি টন ছাড়িয়ে যাওয়া। মানচৌলি শহরের ডেপুটি মেয়র লিন লি মানচৌলি শহরের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেছেন,
(রে ৭)
'আমাদের লক্ষ্য হল মানচৌলিকেউ উত্তর-পূর্ব এশিয়ার আন্তর্জাতিক পণ্য বিনিময়ের কেন্দ্র, চীন-রাশিয়া জ্বালানী সম্পদ পরিবহনের কেন্দ্র ও চীন-রাশিয়া সীমান্তের অবাধ বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিবর্তনের চেষ্টা করা। '
আমরা বিশ্বাস করি, মানচৌলির ভবিষ্যত্ আরো সুন্দর হবে।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা অর্থনীতির অগ্রযাত্রা নামক সাপ্তাহিক বিশেষ অনুষ্ঠানটি শুনলেন। আপনারা ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আশা করি, আপনারা আগামী সপ্তাহে আবার এ সময়ে আমাদের অনুষ্ঠানটি শুনবেন।
|