v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-06 19:03:33    
মায়ের দুধ সংরক্ষণের উপায় ও প্রয়োজনীয়তা

cri
    ১৯৯০ সাল থেকে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নারী ও শিশু বিষয়ক ব্যুরো প্রত্যেক বছরের ২০শে মেকে মায়ের দুদ্ধখাওয়ানোর জাতীয় মাতৃদুদ্ধদিবস হিসেবে ধার্য করেছে । সংশ্লিষ্ট বিভাগ বরাবরই বাচ্চাকে মায়ের দুদ্ধখাওয়ানোর পক্ষপাতি হলেও চীনদেশে বাচ্চাকে মায়ের দুদ্ধখাওয়ানোর হার নিম্নস্তরে উঠানামা করে । যে মায়েরা বাচ্চাকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে নিজের দুদ্ধখাওয়ান তাদের অনুপাত ২০ শতাংশের নিচে ।এর কারন অনেক , এর মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ কারন হল , কাজ হারানোর ভয়ে অনেক মায়েরা বাচ্চাকে বেশি সময়ে দুদ্ধখাওয়ান না । কাজের জন্যে তারা নিজের দুদ্ধ খাওয়ানো ছেড়ে দেন ।

    ৩১ বছর বয়সের হো সিইয়েন পেইচিংয়ের এক সংবাদমাধ্যমে সম্পাদনার কাজ করেন।২৬শে জানুয়ারী তিনি মেয়েকে জন্ম দিয়ে সুখী আর আনন্দের সংগে মা হন, মেয়ের জন্মের পর তিনি মেয়েকে নিজের দুদ্ধ খাইয়ে আসছেন । নারী শ্রমিকদের শ্রমরক্ষা সম্পর্ক চীনের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মিসেস হো ৯০ দিনের প্রসব ছুটি ভোগ করতে পারেন , প্রসব ছুটি শেষে প্রত্যেক দিনে তিনি দুবার অথবা একবার ৩০ মিনিট করে বা একবার একঘন্টা বাচ্চাকে দুদ্ধখাওয়াতে পারেন। প্রসব-ছুটি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে হোর খুব চিন্তা ও সংশয় হয় ।

    এ সম্পর্ক হো বলেছেন,আমার তিন মাসের প্রসব ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে , কিন্তু চার মাস পরই কেবল বাচ্চাকে অন্য খাবার খাওয়ানো শুরু হয় , অর্থাত মায়ের দুদ্ধএখনো তার প্রধান খাবার । এ বয়সের বাচ্চাকে দুঘন্টায় একবার করে খাওয়াতে হয় , আমার অফিস পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকের রেলস্টেশনে আর আমি থাকি পূবদিকের এশিয়া গেমস পল্লী অঞ্চলে , বাসা থেকে অফিস একবার আসা যাওয়া করলে ৪ ঘন্টা লাগে ।দিনে আমার মাত্র এক ঘন্টার দুদ্ধ খাওয়ানো সময় আছে , কিন্তু বাচ্চাকে আমাকে ৪-৫বার খাওয়াতে হয় ,প্রসব ছুটি শেষে অফিস শুরু করার পর আমাকে মাঝেমাঝে পেইচিংয়ের বাইরে যেতে হয় বা ওভার-টাইম কাজ করতে হয় , তাই আমার এখন খুব চিন্তা হচ্ছে যে , অফিস শুরু করলে দুদ্ধ খাওয়ানোরঅসুবিধা হবে আর দেরীতে অফিস শুরু করলে আর্থিক সমস্যা হবে ।

    দুদ্ধদায়িনী মায়েদের সবাই একই সমস্যার সম্মুখীন হবেন । তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারনে কোনোকোনো ইউনিটে ৯০দিনের প্রসব ছুটির নিশ্চয়তা বিধানও নেই। মিসেস হো এমন এক মায়ের সংগে পরিচয় আছে । তিনি বলেছেন , প্রসবকালে আমার একই রুমে অন্য একজন প্রসুতি । তিনি এক বৈদেশিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি বিভাগের প্রধান , তার বাচ্চা তার দুদ্ধএকবারো খায়নি । সবাই তাকে বলেন , কাচ্চাকে একবার দুদ্ধ খাওয়ান । কিন্তু তিনি বলেন , একমাস পর আমাকে অফিস করতে হয় , তাই না খাওয়ালে ভাল । তার বাচ্চা মায়ের দুদ্ধ খায়নি গুড়া-দুদ্ধ খায় । মায়ের দুদ্ধখেয়ে বড় হওয়ার বাচ্চা আর গুড়াদুদ্দ খেয়ে বড় হওয়ার বাচ্চাদের মধ্যে নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে ।

    আধুনিক পেশার নারীদের মধ্যে অনেকেই মিসেস হোর মতো একই সমস্যার সম্মুখীন হন ।

    এ সম্পর্কে কলামিষ্ট, আন্তর্জাতিক মাতৃদুদ্ধ সমিতির উপদেষ্টা মাডাম উ বলেছেন ,আমার এখানে অনেক মা পরামর্শ নিতে আসেন , তাদের সামনে একই সমস্যা আছে যে, অফিস শুরু করার পর দুদ্ধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেবে , না অব্যাহতভাবে খেতে দেবে ?যদি অব্যাহতভাবে দুদ্ধখেতে দেবে, তাহলে তাকে কি করতে হয় ?

    মাডাম উ বলেছেন ,অনেক মা দুদ্ধ বন্ধ করে বাচ্চাকে গুড়া-দুদ্ধ খাওয়ানো বেছে নেবেন । মায়ের দুদ্ধখাওয়ানো সত্যি গুরুত্বপূর্ণ?গুড়া-দুদ্ধের চেয়ে মায়ের দুদ্ধেরকিকি গুন আছে ?

    ম্যাডাম উ বলেছেন ,মায়ের দুদ্ধ গুড়া-দুদ্ধের তুলনায় অনেক পৃথক । মায়ের দুদ্ধ হল বাচ্চা নিজের জন্যে মায়ের শরির থেকে আনা খাবার , মায়ের দুদ্ধেরমধ্যে অনেক পুষ্টিকর জিনিস আছে যা অনেক রোগের ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম, মায়ের দুদ্ধ খাওয়ালে যেন বাচ্চাকে এক প্রাকৃতিক টিকা দেয়া হয়। মায়ের দুদ্ধে বাচ্চারা নানা রোগের বিশেষ করে ফুসফুসের , পাকস্থলীসহ হজমের আর কানের রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে । গুড়া-দুদ্ধ খাওয়া বাচ্চাদের তুলনায় মায়ের দুদ্ধ খাওয়া বাচ্চারা কম অসুস্থ হয় ,মায়ের দুদ্ধের পুষ্টির সমন্বয় অপেক্ষাকৃত যুক্তিযুক্ত , যেমন এর প্রোটিন আর চর্বির অনুপাত বাচ্চাদের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী ।

    ম্যাডাম উ বলেছেন,মায়ের দুদ্ধের মধ্যে প্রায় চার শতাধিক পুষ্টিকর জিনিস আছে যার সংগে যে কোনো রকমের গুড়া-দুদ্ধের তুলনা করা যায় না । মায়ের দুদ্ধ খাওয়ানো সহজ , বাচ্চার ক্ষিধে পেলে বা প্রয়োজন হলে সংগেসংগে তাকে খাওয়ানো যায় , আর গুড়া-দুদ্ধ খাওয়ানো তেমন সহজ নয়, বাচ্চার ক্ষিধে পেলে বা প্রয়োজন হলে সর্বপ্রথমে পানি গরম করতে হবে, তার পর গুড়া-দুদ্ধের মধ্যে পানি ঢেলে মিশাতে হবে, বেশী গরমও চলে না ঠান্ডাও চলে না । মায়ের দুদ্ধ খাওয়ানোর বাচ্চারা কম কাঁদে ,যে বাচ্চা কম কাঁদে , কম কাঁদলে তার শরিরের শক্তি কম ব্যয় হয় এবং এই সব শক্তি বড় হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। দুদ্ধদায়িনী প্রসূতির শরির আর গর্ভকোষ আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া অনেক সহজ । কারন দুদ্ধ খাওয়ালে প্রত্যেক দিন মা শরির থেকে পাঁচ হাজার ক্যালরি হারান , এটা একটা অত্যন্ত তীব্র ব্যায়ামের মতো । মায়ের দুদ্ধখাওযানোর উপকার অনেক , তাহলে বাচ্চাকে কত সময় খাওয়ালে ভাল ?

    মাডাম উ বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, শিশু তহবিল সংস্থা , আন্তর্জাতাক মাতৃদুদ্ধ সমিতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর , মার্কিন শিশু বিজ্ঞান একাডেমী প্রভৃতি যাবতীয় সংস্থা বাচ্চাকে দু বছর বয়স পর্যন্ত অথবা কমপক্ষ ছ-মাস পর্যন্ত খাঁটী মায়ের দুদ্ধ খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয় । কারন মায়ের দুদ্ধ ছমাসের বাচ্চার বড় হওয়ার সব চাহিদা মেটাতে পারে ।

    কিন্তু বাস্তব জীবনে এটা একটা কঠিন ব্যাপার । বেশির ভাগ মাকে অফিস করতে হয় । তারা হয় বাচ্চার জন্যে কাজ ছেড়ে দেন অথবা কাজের জন্যে দুদ্ধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন । কিন্তু অনেক মা অফিস করতে চান আবার সংগে সংগে দুদ্ধ খাওয়ানো বন্ধ করতেও চান না ।অফিস করতে পারে এবং দুদ্ধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হয় না এমন কোনো উপায় অছে কি ?

    বিশেষজ্ঞ মাডাম উ বলেছেন ,নিশ্চয় আছে, সমস্যাটি নিয়ে আমি অনেক মায়ের সংগে আলোচনা করেছি । অফিস শুরু করার কয়েক সপ্তাহ আগে নিজের অতিরিক্ত দুদ্ধ বার করে ফ্রিজে বরফের অবস্থায় রাখুন, এধরেন অবস্থায় দুদ্ধ ছ-মাস রাখা যায় ,আর যদি শুধু ঠান্ডার অবস্থায় রাখেন , তাহলে এধরেন অবস্থায় দুদ্ধ এক সপ্তাহ ধরে নষ্ট হবে না । কিন্তু মনে রাখতে হবে যে , যেদিন দুদ্ধ বার করেছেন তার তারিখ লিখতে ভুলবেন না । অফিসে যদি ফ্রিজার ব্যবস্থা আছে তাহলে আপনি অফিসেও করতে পারেন , আর যদি অফিসে ফ্রিজার ব্যবস্থা নেই তাহলে আপনি নিজে বরফ-রাখার ফ্লাস্ক কিনে অফিসে নিয়ে যান। আপনি পরিস্কার প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্যে দুদ্ধ বার করে ব্যাগটা ফ্লাস্ক রেখে দেন এবং কাজ শেষে তা বাড়ি নিয়ে যান , এমনি করলে আপনি ১০ মাস অথবা এক বছর বয়স এমন কি আরো বেশি সময় পর্যন্ত বাচ্চাকে নিজের দুদ্ধ খাওয়াতে পারেন । আমার জানা মতে অনেক মা এই উপায়ে নিজের দুদ্ধ খাইয়ে তাদের বাচ্চাকে বড় করে করেছেন ।

    প্রত্যেক মায়ের বাচ্চাকে কমপক্ষে এক বছর ধরে নিজের দুদ্ধ খাওয়ালে ভাল । এটা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্যে ভাল । যারা শিগ্গীরই মা হবেন এটা তাদের জন্যে একটা চমত্কার অভিজ্ঞতা আর সাধারন জ্ঞান ।