v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-05 20:51:09    
মরুকরণ মাতৃভূমিকে উদ্ধার করার প্রচেষ্টা

cri

    চীনের অন্তর্মগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কথা উল্লেখ করলে আপনাদের মনে এমন দৃশ্য ভেসে আসবে যে , নীল আকাশের নীচে প্রান্তহীন বিশাল তৃণভূমিতে সাদা সাদা ভেড়াগুলো আরামের সংগে ঘাস খাচ্ছে এবং মংগোলীয় জাতির পশু পালকরা ভেড়ার দলকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উদাত্তকন্ঠে গান করছেন । অথচ গত কয়েক বছরে বিশ্বের আবহাওয়ার উষ্ণায়ন হচ্ছে এবং তৃণভূমির লোকসংখ্যার অতি দ্রুত বৃদ্ধি ও অযৌক্তিকভাবে তৃণভুমি ব্যবহার করায় অন্তর্মংগোলিয়ার তৃণভূমির মরুকরণ প্রকট হয়ে উঠেছে । এটি স্থানীয় জনসাধারণের জন্যে নিসন্দেহে একটি সতর্কমূলক সংকেত । তাই নিজেদের মাতৃভুমি উদ্ধার করার জন্যে তারা বাস্তব পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন ।

    আগে আউলিক ছিল অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিলিকোলো বিশাল তৃণভূমিতে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম । সেখানকার অধিবাসীরা প্রধানত পশু পালন করতেন । গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এখানকার তৃণভূমির মরুকরণ শুরু হয় । অল্প কয়েক বছরের মধ্যে এ গ্রাম একটি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে । আউলিক গ্রামের পশুপালক নামুহাই আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এমন মরুভূমিতে তারা আর বেঁচে থাকতে পারবেন না । তিনি বলেন ,

    সেসময় আমাদের গ্রামের ৭০ শতাংশ জমির মরুকরণ হয়েছে । এখানে আর পশু পালন করা সম্ভব ছিল না । তখন মানুষ ও গবাদি পশুর দারুণ পানির অভাব ছিল । এ রকম জায়গায় নানা ধরণের পশু পালন করলেও একজন পশু পালক বছরে ১ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতেন । ফলে আমাদের গ্রামের পশু পালকদের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পেয়েছিল । এমন মরুভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলে পশু পালকদের খাওয়া-পরার সমস্যা সমাধান কঠিন হয়ে যাবে ।

    অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মরুকরণের এমন গুরুতর অবস্থা অবশ্য আউরিক গ্রামে সীমাবদ্ধ নয় । এসব এলাকার পশু পালকদের জীবনের অবস্থা উন্নত এবং মরুভূমির সংস্কার সুবিধাজনক করে তোলার জন্যে অন্তর্মংগলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকার ২০০২ সাল থেকে প্রাকৃতিক কারণে পশু পালকদের অন্যত্র স্থানান্তরের নীতি প্রবর্তন করতে শুরু করে । এ নীতির কল্যাণে যেসব জায়গার মরুকরণ ঘটেছে , সেসব জায়গার পশু পালকদের অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ।

    নামুহাই ও আউলিক গ্রামের অন্য পশু পালকরা সাংকেনতালাই নামক একটি নগরের কাছে বসবাস করতে শুরু করেন । স্থানীয় সরকারের সহায়তায় তারা ঋণ নিয়ে গাভী কিনে গাভী পালন করতে শুরু করেন । আগে পশু পালকরা মাঠে গিয়ে গাভী পালন করতেন । কিন্তু এখানে তারা নিজেদের বাড়িতে আস্তারা নির্মাণ করে গাভী পালন করেন । সরকারের সুব্যবস্থার কল্যাণে নামুহাই ইট দিয়ে তৈরি প্রশস্ত বাড়িতে উঠেছেন । তিনি আনন্দের সংগে স্ত্রী , মেয়ে , ছেলে ও ছেলের বউয়ের সংগে থাকেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , এখন বছরে তার পরিবারের আয় ৪০ হাজার ইউয়ান হতে পারে । নামুহাইয়ের কাছে আরো আনন্দদায়ক ব্যাপার হচ্ছে , আজ আইরে গেলে তাকে আর হলুদ বালির সংগে লড়াই করতে হয় না । তার নাতিও এখন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে । পরিবারের কারও অসুখ হলে আশেপাশের হাসপাতালে যাওয়া এখন খুবই সুবিধাজনক ।

    নামুহাই যে মরুভূমিতে বসবাস করতেন , অন্তর্মংগলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সে মরুভূমিকে পশু পালন নিষিদ্ধ এলাকা বলে ঘোষণা করেছে । সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে এসব এলাকা থেকে পশু পালকদের সরিয়ে নেয়ার পর সেখানে গাছ লাগানো হবে । স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা মাদাম লি সু পিং বলেছেন ,

    প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এসব জায়গায় পশু পালন নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে । দ্বিতীয়ত বিভিন্ন ধরণের জমির অবস্থা এবং তৃণভূমিতর মরুকরণের মাত্রা অনুসারে ভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে । এসব জায়গায় আমরা অনেক গাছ লাগানোর ব্যবস্থা নিয়েছে । আমরা নিং থিয়াও ও শালা নামক গাছ লাগিয়েছি ।

    আগের বাড়ি থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার প্রথম কয়েক বছরে পশু পালক নামুহাই নিজের জন্মভূমিতে গিয়ে গাছ ও ঘাস লাগিয়েছেন , যাতে এখানকার সবুজীকরণ আবার বাস্তবায়িত হতে পারে । তিন বছরের মধ্যে এখানকার তৃণভূমি আবারো দেখা দিয়েছে । আজ এ বিশাল তৃণভূমিতে দাঁড়িয়ে আপনি কোনোমতেই কল্পনা করতে পারবেন না যে , এক সময় এ জায়গা হলুদ বালিতে ছেয়ে গিয়েছিল ।

    এ রকম উদ্ধারকৃত তৃণভূমি অবশ্য নামুহাইয়ের জন্মভূমিতে সীমাবদ্ধ নয় । স্থানীয় সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের মধ্যে অন্তর্মংগলিয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ১ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর মরুভূমিতে সংস্কারমূলক কাজ চালিয়েছে এবং ১৯টি প্রাকৃতিক নিদর্শনমূলক এলাকা ও ১২৫টি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা নির্মাণ করেছে ।

    মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় অন্তর্মংগোলিয়া অঞ্চলের জনগণ এখন ভাবতে শুরু করেছেন যে , কেমন করে নিছক প্রাকৃতিক ফলপ্রসূতা থেকে অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতায় রূপান্তরিত করা যাবে । কয়েক বছরের অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ অঞ্চল একটি সাফল্যজনক উপায় খুঁজে বের করেছে ।

    এ  অঞ্চলের থিয়ান চিয়াও খাদ্যবস্তু কর্পোরেশন কার্যকরীভাবে মরুভূমিতে উত্পন্ন শালা নামক এক রকম গাছ থেকে নতুন ধরণের খাদ্যবস্তু উদ্ভাবন করেছে । থিয়ান চিয়াও কর্পোরেশনের ম্যানেজার জেনারেল লি ইয়ুন ফেই বলেছেন , শালা হচ্ছে জমির মরুকরণ , জলের তিরোভাব ও ভূমিক্ষয় রোধ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতি সাধনের একটি বিশেষ গাছ । অতীতে স্থানীয় সরকার প্রতি বছর বিরাট অংকের টানা বরাদ্দ করে শালা লাগিয়ে তৃণভূমির মরুকরণ রোধ করতে সক্ষম হয়েছে । এখন থিয়ান চিয়াও কর্পোরেশন শালা দিয়ে খাদ্যবস্তু তৈরি করে অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতাও বাস্তবায়ন করেছে । তিনি বলেছেন ,

    শালার মধ্যে মানুষের শরীরের জন্যে হিতকর তিন শ'রও বেশি জৈব উপকরণ রয়েছে । আমাদের কর্পোরেমন এ শালাগুলো থেকে পুষ্টিকর খাদ্যবস্তু উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি । এ খাদ্যবস্তু বাজারে জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে ।

    লি ইয়ুন ফেই আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , শালা উন্নয়নের ফলে বিপুল সংখ্যক পশু পালকের আয় বেড়েছে । এতে পশু পালকদের শালা লাগানোর সক্রিয়তাও আরো বেড়েছে । ব্যাপকাকাকারে শালা গাছ লাগানোর ফলে অনেক পশু পালন এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতি হয়েছে ।