স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সংগে লেখাপড়া ও জ্ঞান চর্চার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে । প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত বহু সুধী ব্যক্তি এই বিষয়ে মন্তব্যকরেছেন । বিশ্বের বেশ কিছু নাম করা ব্যক্তিরাও এই দিক থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যতা বিবৃত দিয়েছেন । বর্তমানে অধিক থেকে অধিকতর লোকেরা লক্ষ্য করেছেন , নিজের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করতে হলে ব্যক্তগত সংস্কৃতি ও জ্ঞানের মান ক্রমাগত বাড়াতে হবে । সুতরাং মানুষের প্রানের প্রতি আরো ভালভাবে যত্ন নেয়া আর সুন্দর জীবন উপভোগ করা উচিত্ ।
লেখাপড়ার মাধ্যমে যেমন জ্ঞান ও নৈপুন্য বাড়ানো যায় , তেমন এটাও রোগ চিকিত্সা করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হয়ে দাঁড়াবে । চীনের প্রাচীনকালের হান রাজবংশের সাহিত্যিক লিউ সিয়াং বলেছেন , বইপুস্তক ঠিক ওষুধের মতো , ভালভাবে পড়ার মাধ্যমে বোকামি দূর করা যায় । তথাকথিত বোকামি দূর করা স্বাস্থ্য রক্ষার দিক থেকে মন খোলা, চিন্তা ও রাগ দূর করা । মানব জীবনের তাত্পর্য বিষয়ক ধারণা উন্নত করা এবং রোগ প্রতিরোধের প্রত্যয় ও ক্ষমতা জোরদার করা । ঐতিহাসিক গ্রন্থে বলা হয়েছে , হান রাজবংশ আমলে হান উয়েন তি সম্রাট ছোট বেলায় নির্বোধ ছিলেন । বিপুল গ্রন্থ পড়া আর জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে তার বোকামি দূর হয়ে গেছে। দক্ষিণ সুং রাজ বংশ আমলের কবি লুইউর মৃত্যুকালের বয়স ৮৫ । তার দীর্ঘায়ুর অন্যতম অভিজ্ঞতা প্রানপনে বই পড়া , বই পড়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও মনের হাসিখুশি স্থাপন করা ।
পাশ্চাত্ত্য দেশগুলোতে গত ষোড়শ শতাব্দীর পর ইউরোপ আর আমেরিকার ৪ শো সুধী ব্যক্তির আয়ু নিয়ে তদন্ত চালানো হয়েছে । তদন্তের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে , এই ৪ শো জনের গড়পড়তা আয়ু ৬৭ বছর । এদের মধ্যে যারা বিজ্ঞানী আর আবিস্কারক , তারা মস্তিষ্ক বেশী ব্যবহারের জন্য সবচাইতে দীর্ঘায়ু । তাদের গড়পড়তা আয়ু ৭৯ বছর । ১৯৪০ সালের পর প্রয়াত নোবেল পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে ৩৩জনের আয়ু ৮০ বছরেরও বেশী আর ৯০ বছরেরও বেশী বয়সী লোকের সংখ্যা ৬ । চীনের ম্যাডিকল্ সমিতির উদ্যোগে চালানো বৃদ্ধবৃদ্ধাদের দীর্ঘায়ু বিষয়ক ওকটি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে , যারা মস্তিষ্ক কাজ ও শারীরিক কাজে নিয়োজিত থাকেন আর বেকার , তাদের দীর্ঘায়ু হার যথাক্রমে শতকরা ৮৫ ভাগ , শতকরা ৩৯ ভাগ আর শতকরা ২৮ ভাগ ।
স্বাস্থ্যের সংগে সংস্কৃতির সম্পর্ক মানবজাতির আয়ুর পরিবর্তন থেকেও প্রমান পাওয়া যায় । মানব জাতির পূর্বপুরুষ - গরিলাদের আয়ু বেশী পক্ষে বিশ তিরিশের কাছাকাছি । আজ মানব জাতির আয়ু ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে । আধুনিককালের বিজ্ঞানে পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সংগে সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সম্পর্ক প্রমানিত হয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী , যারা যত বেশী পড়েন , তাদের যক্ষ্মা , সর্দি , নিউমৌনিয়া , ডায়াবেটিক আর হৃদপিন্ড ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাত তত কম । যে সব দেশের সাংস্কৃতিক মাত্রা ভিন্ন , সে সব দেশের নাগরিকদের আয়ুও আলাদা । যেমন জাপানীদের সাংস্কৃতিক মাত্রা অপেক্ষাকৃত উঁচু , সে দেশের নাগরিকদের গড় আয়ু ৭৪.৫ বছর । কিন্তু যে সব দেশের সাংস্কৃতিক মাত্রা অপেক্ষাকৃত নীচু , সে সব দেশের নাগরিকদের গড় আয়ু শুধু ৪০ বছরের কাছাকাছি ।
সংস্কৃতি ও জ্ঞানের মাত্রা উন্নত করার মাধ্যমে কেমন করে' স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর লক্ষ্য বাস্তবায়িত করা যায় ? বিজ্ঞানীরা মনে করেন , এর মূলে রয়েছে মস্তিষ্ক চর্চা । বৃটিশ বিজ্ঞানী কোস্কি বলেছেন , মস্তিষ্ক চর্চা করলেই কেবল প্রত্যক্ষভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য তরান্বিত করা যাবে এবং মস্তিষ্কের সম্বনয় ও গোটা শরীরের বিভিন্ন ভূমিকার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর লক্ষ্য বাস্তবায়িত করা যাবে । বই পড়া , কবিতা পাঠ করা , চিত্র উপভোগ করা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক তত্পরতা বিশেষ চিকিত্সক ও ওষুধ বলে আখ্যায়িত করা হয় । এতে মনের মাধ্যমে এক ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা পালিত হয়েছে এবং শরীরের ভারসাম্য স্থাপন করার একটি নিখুঁত চিকিত্সা গড়ে তেলা হয়েছে ।
আধুনিক সমাজে মানব জাতির জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সংগে সংগে বিপুল পরিমান তথাকথিত " সভ্য রোগ" দেখা দিয়েছে । শুধু ওষুধের উপর নির্ভর করে' এই সব রোগ আরোগ্য করা খুব কঠিন । সুতরাং সংস্কৃতিই হয়তো অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
|