চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ওয়াং রুন দে সম্প্রতি চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশের উ লু মু ছিতে বলেছেন, আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়ায় চীনের লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশি জটিলতার সৃষ্টি করেছে। এ জন্য চীন সরকার অব্যাহতভাবে পশ্চিমাঞ্চলের আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। যাতে ২০১০ সালে সারা দেশের ৯৫ শতাংশেরও বেশি প্রদেশ, শহর এবং জেলায় আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করা যায়। আজকের " বিজ্ঞান ও জীবন" অনুষ্ঠানে আমাদের বেতারের সংবাদদাতা চাং সিও ছেংয়ের উ লু মু ছি থেকে পাঠানো একটি প্রতিবেদন নিয়েই এখন আলোচনা করবো:
আয়োডিন একটি অতি ক্ষুদ্র পণ্য এবং মানবদেহের অপরিহার্য পুষ্টিকর বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। মানবদেহের আয়োডিন পূরণ করার অভাব হলে " হাইপারট্রোফি অব থাইরোয়েড গ্র্যান্ড" এবং বুদ্ধিমত্তার অসম্পূর্ণ উন্নয়নসহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন হচ্ছে আয়োডিনের অভাব জনিত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। চীনের অধিকাংশ প্রদেশ ও শহরে বিভিন্ন পর্যায়ের আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্য উল্লেখযোগ্য। গত শতাব্দীর ৮০ দশকে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়ে আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে।
চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময় , চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটি এবং চীনের লবন শিল্পের সাধারণ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানি উ লু মু ছিতে " আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের কর্মসূচী সম্পর্কিত পরামর্শ সম্মেলন" অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াং রুন দে বলেছেন, পর পর দু'বছরের নির্দিষ্ট পরীক্ষার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনের আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধেরকর্মসূচী আন্তর্জাতিক অত্যাধুনিক সারিতে যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন:
" ২০০৫ সালের সারা দেশের পঞ্চম আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত পরীক্ষা এবং ২০০৬ সালের জেলা পর্যায়ের আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত তত্ত্বাবধানের ফলাফল সূত্রে জানা গেছে, চীন আয়োডিন খাওয়ার পুষ্টিকর মান অনেক উন্নত হয়েছে বলে এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এ ব্যাপারে চীন সরকার সংশ্লিষ্ট রোগ প্রতিরোধক কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে এবং ব্যাপকভাবে শিক্ষামূলক প্রচার অভিযান চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় পরিষদ " লবনে আয়োডিন দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক নিয়ম-বিবিধ" প্রণয়ন করেছে। এর ফলে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনের স্থানীয় রোগ সংক্রান্ত সমিতির উপপ্রধান ছেন চি সিয়াং বলেছেন:
" ১৯৯৫ সালে আয়োডিন নিয়ে গঠিত লবন খাওয়ার হার শুধু মাত্র ৩০ শতাংশ ছিল । তবে বর্তমানে খাওয়ার হার পৌঁছেছে ৯০'র শতাংশেরও বেশি ।"
আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের সাফল্য অর্জিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াং রুন দে জোর দিয়ে বলেছেন, চীনের কিছু কিছু সংখ্যালঘুজাতি এবং দরিদ্র অঞ্চলে আয়োডিনের লবন ব্যাপহারের হার বেশ নিচে রয়েছে বলে আমাদের উচিত এর উপর পুরোপুরি সজাগ দৃষ্টি রাখা। বিশেষ করে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের কান সু, ছিং হাই এবং সিন চিয়াংসহ মোট ৭টি প্রদেশ ও ৪০০টির বেশি জেলার আয়োডিনের অভাব হুমকির সৃষ্টি করেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন:
" পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুতর আয়োডিনের অভাব দেখা দিয়েছে। আয়োডিনের লবন বেশি দামি এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা এখনও পূর্ণাঙ্গ হয় নি বলে স্থানীয় অধিবাসীরা সাধারণত আয়োডিনের লবন ক্রয় করতে সক্ষম হয়নি। এ কারণে সেসব অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।"
গত বছরের আগষ্ট মাসে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দল সিন চিয়াং গিয়ে আয়োডিনের অভাবের দিক সম্পর্কে তদন্তের কাজ চালিয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, আরও অনেক অঞ্চলে আয়োডিনের অভাব দেখা দিয়েছে ।
সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মাই মাই থি মিং বলেছেন, এ বছর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্থানীয় সরকার আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের উন্নয়নে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তিনি মনে করেন যে, এটি ২০১০ সালে সারা দেশের ৯৫ শতাংশেরও বেশি প্রদেশ, শহর এবং জেলায় আয়োডিনের অভাব সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অনেক সহায়ক হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
|